You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
১১ই আগস্ট ১৯৬৪

অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাপাইয়া পড়ুন
– শেখ মুজিব

গত রবিবার জয়দেবপুরের জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে দেশবাসীর (গতকল্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হইয়াছে) প্রতি আহ্বান জানাইয়া বলেন যে, আপনারা সংঘবদ্ধ হউন, দুর্বার ও দুর্জয় সংগ্রামের মধ্য দিয়া নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। যদি বাঁচিতে হয়, তবে মানুষের মত, আর যদি মানুষের মত বাঁচিবার অধিকার না পান, তবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম আত্মাহুতি দিয়া দুনিয়ার সামনে প্রমাণ করুন যে, এই দেশের বাঁচার অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করিয়া বীরেরা মৃত্যুবরণ করিয়াছেন।
বিরােধী দলের ঐক্যজোটের সাধারণ কর্মসূচী ৯-দফার উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব দেশবাসীকে উদ্দেশ করিয়া বলেন যে, সমগ্র জাতিকে গণ-দুশমনদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিরােধী দলগুলি আজ নিজেদের ভেদাভেদ ভুলিয়া গিয়া ঐক্যজোট গঠন করিয়াছে এবং দেশবাসীর মঙ্গল সাধনের জন্য একটি ন্যূনতম কর্মসূচী প্রণয়ন করিয়াছে। তিনি বলেন, আপনাদের সম্মুখে মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচন আসন্ন। এই নির্বাচনে ভােট দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা যাহাকে খুশি ভােট দিন। কিন্তু ভােট দেওয়ার আগে প্রার্থীর নিকট হইতে এই ওয়াদা আদায় করিয়া লউন যে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী আপনাদের হৃত ভােটাধিকার পুনরুদ্ধার করিয়া দিবে, ভােটাধিকার যাহারা ছিনাইয়া লইয়া গিয়াছে, তাহাদের ভােট দিবেন না এবং সামগ্রিকভাবে ৯-দফা দাবীর প্রতি অনুগত থাকিবেন।
বর্তমান শাসকগােষ্ঠীর সমালােচনা করিয়া শেখ মুজিব বলেন যে, এই রাজত্ব বেইনসাফির রাজত্ব। কারণ এই রাজত্বের পরিচালকেরা দরিদ্র স্কুল শিক্ষকযাঁহারা ভুখা নাঙ্গা থাকিয়া মানুষ তৈয়ার করেন তাঁহাদের বেতন বৃদ্ধির দাবী পদদলিত করিয়া ভাগ্যবান কর্মচারীদের বেতনবৃদ্ধি করিয়া দরিদ্র দেশবাসীর স্কন্ধের উপর ১৭ কোটি টাকার একটি বাড়তি খরচ চাপাইয়া দিয়াছেন।
শেখ মুজিব আরও বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সিপাহসালার, অবিসম্বাদিত নেতা মরহুম হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী বাংলার ঘরে ঘরে গণতন্ত্রের অজেয় দুর্গ গড়িয়া তােলার নির্দেশ দিয়া গিয়াছেন।
আপনাদের একথা স্মরণ রাখিতে হইবে এবং ইউনিয়নে ইউনিয়নে গণদুষমনদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য কর্মী বাহিনী গড়িয়া তুলিতে হইবে।
তিনি দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়া বলেন যে, সরকার নির্যাতন-নিপীড়নে সবকিছু বিধ্বস্ত করিতে পারিলেও সুসংগঠিত কর্মীবাহিনীকে বিধ্বস্ত করতে পারিবে না এবং এই কর্মীবাহিনীই দেশবাসীর সংগ্রামকে জয়যুক্ত করিতে সমর্থ হইবে।
গতকল্যকার এই সভায় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জহিরউদ্দিন, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব আবদুল খালেক, গাইবান্ধা টাউন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব সাইদুর রহমান এবং নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব বজলুর রহমান বক্তৃতা করেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব সামসুল হক সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বিকাল প্রায় চারটায় নেতৃবৃন্দ ট্রেনযােগে ঢাকা হইতে জয়দেবপুর পৌছিলে প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনসাধারণ বিভিন্ন দাবী সম্বলিত ফেষ্টুনসহ নেতৃবৃন্দকে বিপুল সম্বর্ধনা স্থাপন করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা নেতৃবৃন্দকে মাল্যভূষিত করেন এবং মুহুর্মুহু শ্লোগানের দ্বারা ষ্টেশন অঙ্গন মুখরিত করিয়া তােলে। পরে জনতা এক মিছিল করিয়া নেতৃবৃন্দকে জিন্দাবাদ ধ্বনী দিতে দিতে সভামণ্ডপ পর্যন্ত লইয়া যায়। প্রবল বর্ষণে সিক্ত হইয়াও বিরাট জনতা অভূতপূর্ব এক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ লইয়া নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শ্রবণ করেন। নেতৃবৃন্দ গতকল্যই ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন।
গতকল্যকার এই সভার পর জয়দেবপুর রাজবাড়ীর নাটমন্দিরে থানা আওয়ামী লীগ কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাত্রি ১০টা পর্যন্ত এই সম্মেলনের কাজ চলে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম প

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!