আজাদ
১২ই জুলাই ১৯৬৪
সকল স্তরে সম্মিলিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করিলে সাফল্য অসম্ভব
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী নীতির জওয়াবে এন,ডি,এফ নেতার বিবৃতি
ঢাকা, ১১ই জুলাই। ঢাকা শহর জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সেক্রেটারী এবং ফ্রন্টের প্রাদেশিক কমিটির সদস্য জনাব ইকবাল আনসারী খান অদ্য এক বিবৃতিতে বলেন যে, নির্বাচনে জয়ী হইতে হইলে মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে সকল বিরােধী দলকে সম্মিলিতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে হইবে।
দেশের বিরােধী দলগুলির পক্ষ হইতে যুক্তভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রার্থী দাঁড় করাইবার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে।
কয়েকদিন পূৰ্বে জনাব মুজিবর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জনাব হাফেজ হাবিবুর রহমান পৃথকভাবে প্রকাশ্যে এই মর্মে উক্তি করেন যে, তাঁহারা কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবেন না। এই বিবৃতি দানের পর পাকিস্তানের বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের জাগ্রত জনসাধারণের নিকট তাহাদের স্বরূপ প্রকাশ হইয়া পড়ে। অবহেলাজনিত এই ত্রুটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তাঁহারা যুক্তভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দাঁড় করাইবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু উক্ত প্রতারণা ভিন্ন আর কিছুই নহে। এই একই সিদ্ধান্তের সহিত আওয়ামী লীগ মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবে বলিয়াও ঘােষণা করা হয়। ইহা বলা নিষ্প্রয়ােজন যে, মৌলিক গণতন্ত্রিগণই নিৰ্বাচনী কলেজ গঠন করিয়া কেবলমাত্র জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যই নহে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করিবেন।
ইহা অতি সত্য কথা যে, যদি বিরােধীদল সমূহ সম্মিলিতভাবে মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ না করিতে পারেন, তাহা হইলে আওয়ামী লীগের সােপারেশ মােতাবেক যুক্তভাবে প্রেসিডেন্ট নিৰ্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করাইবার পরিকল্পনাটি কেবলমাত্র সাধু মনােভাবেরই পরিচায়ক হইয়া থাকিবে। তাহার কারণ যদি বিভিন্ন দল পৃথকভাবে মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহা হইলে বিরােধী দলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা কিছুতেই সম্ভব নহে। জনাব ইকবাল আনসারী খান বিবৃতিতে আরও বলেন যে, যদি আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করিতে না পারি এবং উহার ফলস্বরূপ কনভেনশন মােছলেম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে তাহা হইলে বিরােধীদল সংঘবদ্ধই থাকুন আর বিচ্ছিন্নই থাকুন, কোন শক্তিই তাহাদিগকে সাহায্য করিতে পারিবে না। পৃথকভাবে মৌলিক গণতন্ত্রের নিৰ্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবার সিদ্ধান্তের সহিত শেখ মুজিবের ব্যক্তিগত প্রচারণা ও নেতৃত্ব লাভের স্বার্থ প্রসূত জনসাধারণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের যে কোন সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার বিরােধিতার বিশেষ মিল রহিয়াছে।
১৯৫৪ সালে ৯২-ক ধারা বলবৎ থাকা কালে শেখ মুজিবুর রহমানই জনাব এ, কে, ফজলুল হকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করিয়া যুক্তফ্রন্ট ভাঙ্গিয়া দিয়াছিলেন। পার্লামেন্টারী ইতিহাসে অনুরূপ কাৰ্য্য নজিরবিহীন। তাহার পর জনাব সােহরওয়ার্দীর যােগ্য নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের মঞ্চে জনসাধারণ পুনরায় সংঘবদ্ধ হইলেন কিন্তু ক্ষমতা ও নেতৃত্বের লড়াইয়ে উহার একই পরিণতি ঘটিল। সামরিক আইন প্রত্যাহার করিবার পর দেশের জনসাধারণ যখন সার্বজনীন ভােটাধিকার সহ সমুদয় মৌলিক অধিকার হইতে বঞ্চিত এবং যখন হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা একমাত্র পথ, সে সময় শেখ মুজিব জনসাধারণের সংঘবদ্ধ মঞ্চ ত্যাগ করিয়া ইহাই প্রমাণ করিতে চাহিলেন যে, পাকিস্তানে গণতন্ত্র নাই এইমৰ্ম্মে এন, ডি, এফ যে কথা বলেন, উহা সত্য নহে। বরঞ্চ বিস্তারিত কর্মসূচী লইয়া রাজনৈতিক দলসমূহের কাজ করিবার জন্য দেশে যথেষ্ট গণতন্ত্র রহিয়াছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ইহাই প্রমাণ করিতে চাহেন। জনাব ইকবাল আনসারী খান জনসাধারণের ভােটাধিকার আদায় না হওয়া পৰ্য্যন্ত পৃথকভাবে কার্যকলাপ বন্ধ রাখার জন্য সমুদয় রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাইয়া বলেন যে, কেবলমাত্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যই নহে, নির্বাচনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সংঘবদ্ধ হইতে হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব