You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.06.25 | নির্যাতন, স্বৈরাচার ও ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন- দেশবাসীর প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
২৫শে জুন ১৯৬৪

নির্যাতন, স্বৈরাচার ও ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন
আগামী ১২ই জুলাই ‘জুলুম প্রতিরােধ দিবস পালনের আহ্বান
দেশবাসীর প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক

শেখ মুজিবের আবেদন নজীরহীন স্বৈরাচারী ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিয়া বর্তমান সরকার যে ব্যাপক গণনির্যাতন চালাইতেছেন উহার প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পক্ষ হইতে আগামী ১২ই জুলাই “জুলুম প্রতিরােধ দিবস” উদযাপনের সিদ্ধান্ত ঘােষণা করা হইয়াছে।
দলীয় সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিয়া পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বুধবার) প্রদত্ত এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ শােভাযাত্রা, জনসভার অনুষ্ঠান ও প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে যথাযােগ্যভাবে “জুলুম প্রতিরােধ দিবস” পালনের জন্য আওয়ামী লীগের ইউনিটসমূহকে নির্দেশ দান করেন। এই দিবস উদযাপনে সহযােগিতা দানের জন্য এবং স্বৈরাচারের অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উত্তোলনের জন্য তিনি দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তির নিকটও অনুরােধ জ্ঞাপন করেন।
শেখ মুজিবর রহমান তাহার বিবৃতিতে বলেনঃ বর্তমান সরকারের আমলে বিগত কয়েক বৎসরের ঘটনাবলী আমি গভীরভাবে পর্যালােচনা করিয়াছি। বর্তমান সরকার দেশের সর্বশ্রেণীর জনসাধারণের উপর নজীর বিহীন স্বৈরাচার কায়েমের মাধ্যমে বাস্তবে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করিয়াছেন। বিশ্বের সর্বাধিক পশ্চাদপদ এলাকার অধিবাসীরাও যে সব মৌলিক অধিকার ভােগ করেন, তাহা হইতে এই দেশের জনসাধারণকে বঞ্চিত করা হইয়াছে।
নাগরিক স্বাধীনতা নির্মমভাবে হরণ করা হইয়াছে, দিন দিন হরেক রকম নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার আশ্রয় গ্রহণ করা হইতেছে। রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক, ছাত্র ও জাতীয় সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে তথাকথিত নিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স নির্বিচারে প্রয়ােগ করা হইতেছে।
গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা দাবী করার দরুন শত শত রাজনৈতিক কর্মী বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া কারা প্রাচীরের অন্তরালে পচিতেছেন। শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির দাবী উত্থাপন করায় বিভিন্নভাবে ছাত্রদের নিগৃহীত করা হইতেছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি ছেলেদের নিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সবলে আটক রাখা হইতেছে, আজেবাজে অজুহাতে তাহাদের অভিযুক্ত করা হইতেছে, অনেককে বহিষ্কৃত বা রাষ্টিকেট করা হইয়াছে কিংবা ডিগ্রি বাতিল করা হইয়াছে। ধর্মঘটের মাধ্যমে যৌথ দর কষাকষির অধিকার হইতে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হইয়াছে। কৃষক এবং সাধারণ মানুষ ব্যাপক করভারে জর্জরিত। স্বল্পবেতনভােগী কর্মচারী ও শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবী প্রত্যাখ্যাত হইয়াছে। বর্তমান সরকার স্বীয় নির্যাতন নীতি পশ্চিম পাকিস্তানেও জোরেশােরে অনুসরণ করিতেছেন। নিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স এবং অন্যান্য দমনমূলক আইনে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা নিগ্রহ ভােগ করিতেছেন। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি নৈমিত্তিক ব্যাপার, মাইক্রোফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সংস্থা রূপে গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরােধী এইসব স্বৈরাচারী কার্যকলাপ সম্পর্কে নীরব দর্শক সাজিতে পারে না। এই ধরনের কার্যকলাপের অবশ্যই অবসান হইতে হইবে। তাই আমরা আগামী ১২ই জুলাই ‘জুলুম প্রতিরােধ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব