ইত্তেফাক
৮ই জুন ১৯৬৪
‘জনগণের সকল অধিকার হরণ করা হইয়াছে’
চট্টগ্রামের পল্লীতে আওয়ামী লীগের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা
চট্টগ্রাম, ৭ই জুন- গতকল্য পূর্ব পাক আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রামের ৪৭ মাইল দূরবর্তী করেরহাট এবং মিরেরশ্বরাই থানার আবুতােরাব বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত দুইটি বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন। মধ্যাহ্নে করেরহাটে জনাব ওবায়দুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, স্বাধীনতা উত্তরকালে জনগণ যেসব অধিকার ভােগ করিত তাহার সবগুলিই বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার হরণ করিয়া লইয়াছেন। তিনি বলেন, মরহুম জনাব শহীদ সােহরাওয়ার্দী যে আদর্শ প্রতিষ্ঠাকল্পে জীবনপাত করিয়াছেন উহা বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে অবিলম্বে দেশে সংঘবদ্ধ গণআন্দোলন গড়িয়া তােলা প্রয়ােজন। যে সব লােক বাঙালীদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়া ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে লিপ্ত রহিয়াছেন তাহাদের সম্পর্কে তিনি জনসাধারণকে সতর্ক থাকিবার আহ্বান জানান। এই জনসভায় মওলানা তর্কবাগীশ, প্রচার সম্পাদক হাফেজ হাবিবুর রহমান এবং মিরেরশ্বরাই থানা আওয়ামী লীগ সম্পাদক সৈয়দ ফজলুল হকও বক্তৃতা করেন। মওলানা তর্কবাগীশ তাঁহার ভাষণে জনগণকে তাহাদের হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইবার জন্য আহ্বান জানান।
সামরিক শাসনের পটভূমিকা বিশ্লেষণ
চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব এম, এ, আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আবু তােরাবের জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মজিবর রহমান দেশে সামরিক শাসন জারির পটভূমিকা বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বলেন যে, ১৯৫৯ সালে যদি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইত তাহা হইলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে আর বঞ্চিত রাখা সম্ভব হইত না এবং এই কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র ৪ মাস পূর্বে দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকার অনেক সময় বলিয়া থাকেন যে, এক্ষণে পূর্ব পাকিস্তানকে বিভিন্নভাবে অনেক বেশী অর্থ দেওয়া হইতেছে। অথচ বর্তমান সরকারেরই আমলে ২য় পাঁচ-সালা পরিকল্পনায় পশ্চিম পাকিস্তানকে বিভিন্ন খাতে সাড়ে তেত্রিশ শত কোটি টাকা এবং পূর্ব পাকিস্তানকে মাত্র সাড়ে ৯ শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছিল। তিনি আরও বলেন যে, আওয়ামী লীগ এই বঞ্চনা দূরীকরণ এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং এজন্য যে কোন প্রকার জেল-জুলুম সহ্য করিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীবৃন্দ সর্বদাই প্রস্তুত আছে। এই জনসভায় মওলানা তর্কবাগীশ, শ্রম সম্পাদক জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী, ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব খাজা আহমদ এবং জনাব ফজলুল হক বি, এস-সি বক্তৃতা করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব