You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.06.06 | জনগণের দুর্বার যাত্রা রােধ করিবার ক্ষমতা কাহারও নাই- ফেনীর বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৬ই জুন ১৯৬৪

অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন
জনগণের দুর্বার যাত্রা রােধ করিবার ক্ষমতা কাহারও নাই
ফেনীর বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রদত্ত)
ফেনী, ৫ই জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এখানে বজ্রকণ্ঠে ঘােষণা করেন যে, জেল-জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন উপেক্ষা করিয়া দেশব্যাপী জনগণ যে দুর্বার আন্দোলন গড়িয়া তুলিয়াছে তাহা রােধ করার সাধ্য কাহারও নাই। দৃঢ় প্রতিজ্ঞ জনসাধারণ যে কোন মূল্যে তাহাদের হৃত অধিকারসমূহ ফিরাইয়া আনিবেই। দেশের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সকল মানুষের মুখে মুখে অধিকারের দাবীই ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হইতেছে। এই দাবী তাহারা প্রতিষ্ঠা করিবেই শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, গণচেতনার এই দুর্বার স্রোতের মুখে সকল বাধাই বালির বাঁধের মত নস্যাৎ হইয়া যাইবে এবং কোন মহাশক্তিই জনগণের এই দুর্বার সংগ্রামকে রােধ করিতে পারিবে না। শেখ মুজিবর রহমান ফেনীর মিজান ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করিতেছিলেন। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুল মালেক উকিল সভাপতিত্ব করেন।
সকাল হইতেই মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শ্রবণের জন্য বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করিয়াও ময়দানে আসিয়া সমবেত হইতে থাকে।
জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, মরহুম শহীদ সােহরাওয়ার্দী যে আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন, অবিরাম সংগ্রামের দ্বারা তাহাই আমাদিগকে বাস্তবায়িত করিতে হইবে। তিনি দেশে সামরিক শাসন জারি করার আসল মতলব ব্যাখ্যা করিয়া বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতি এবং কায়েমী স্বার্থবাদী গণ মনে করিয়াছিলেন যে, ১৯৫৯ সালের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে পূর্ব পাকিস্তানকে ন্যায্য পাওনা হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না, তাই তাহারা একত্রিত হইয়া দেশে সামরিক শাসন জারি করে। তিনি ছাত্রদের উপর সরকারী নির্যাতনের কঠোর সমালােচনা করেন এবং ছাত্রদের উপর হইতে সকল নিয়ন্ত্রণাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার করার দাবী জানান। তিনি ছাত্রদের ডিগ্রী প্রত্যাহারের নিন্দা করেন এবং অবিলম্বে সকল বন্দী ছাত্রের মুক্তির দাবী জানান। তিনি বলেন যে, আমাদের সন্তানদের নির্যাতিত হইতে দেখিয়াও আমরা নিশ্চল হইয়া বসিয়া থাকিতে পারি না। জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, প্রচার সম্পাদক হাফেজ হাবিবুর রহমান, এডভােকেট খন্দকার মুশতাক আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক, সদর মহাকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব আবদুস সােবহান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভায় সার্বজনীন ভােটাধিকার, প্রত্যক্ষ নির্বাচন এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়। মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন পূর্বাহ্নে প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দ স্থানীয় দুলাল সনেমা হলে ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। মহাকুমার বিভিন্ন স্থান। হইত প্রায় ৪শত উৎসাহী কর্মী উক্ত সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। কর্মী সম্মেলনে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে প্রাদেশিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সফরকারী নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন। ফেনী মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক, প্রাক্তন এম, পি, এ খাজা আহম্মদ আব্বাস সম্মেলনে তাঁহার রিপাের্ট পেশ করেন। শেখ মুজিবর রহমান অঙ্গিকার আদায়ের জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়িয়া তােলার আহ্বান জানান। সভাপতির ভাষণে মওলানা তর্কবাগীশ বলেন যে, পৃথিবীর কোন শক্তিই জনগণকে দাবাইয়া রাখিতে পারে না এবং সত্যের ও ন্যায়ের সংগ্রামে জনগণের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
মিরেরসরাইয়ের জনসভা
নেতৃবৃন্দ আগামীকল্য মিরেরসরাইয়ের এক জনসভায় এবং কর্মী সমাবেশে বক্তৃতা করিবেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব