ইত্তেফাক
৯ই জুন ১৯৬৪
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থ কোথায় গেল?
১৭ বত্সরের হিসাব-নিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক কমিশন দাবী
কক্সবাজারের বিপুল জনসমাবেশে শেখ মুজিবের বক্তৃতা
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রেরিত)
কক্সবাজার, ৮ই জুন- গতকল্য অপরাহ্নে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান কক্সবাজারের ইতিহাসের বৃহত্তম জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে গত ১৭ বৎসরে পূর্ব পাকিস্তানের যে পরিমাণ টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হইয়াছে, অবিলম্বে তাহা আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন অর্থনীতিবিদদের দ্বারা সঠিকভাবে নিরূপণ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানকে ফিরাইয়া দেওয়ার দাবী জানান। তিনি বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানের যে টাকা লওয়া হইয়াছে, তাহা যদি ফিরাইয়া দেওয়া হয় এবং দেশে যদি খাঁটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয় তাহা হইলে আমরা প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বিরােধিতা করিব না।” শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, সত্য ও ন্যায়ের খাতিরে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণকে তাহাদের ন্যায্য পাওনা এবং নিজেদের সম্পদ হইতে বঞ্চিত করা উচিত নয়। তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙ্গালীদের ত্যাগের উল্লেখ করিয়া বলেন যে, বাঙ্গালীরাই পাকিস্তানের সত্যিকার স্রষ্টা; কারণ, তাহারাই পাকিস্তানের পক্ষে শতকরা ৯৬টি ভােট প্রদান করিয়াছিল। কিন্তু লজ্জার ব্যাপার যে, আজ তাহারাই ভােটাধিকার হারাইয়াছে। শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, যে সকল কৃষকের অন্ততঃ ২৫ বিঘা জমি নাই আগামী ২৫ বৎসরের জন্য তাহাদের খাজানা মওকুফ করা উচিত। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করিয়া বলেন যে, দেশে যখন শিল্পপতিদের প্রাথমিক অবস্থায় করমুক্তির বিধান রহিয়াছে এবং মাসিক ৬ শত টাকার কম উপার্জনশীল ব্যক্তিদের আয়কর প্রদান করিতে হয় না, তখন দরিদ্র কৃষকদের খাজনা মওকুফ না করার কোন কারণ থাকিতে পারে না। শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, “ওয়ার্কস প্রােগ্রামের” টাকা অনুৎপাদনশীল কার্যে ব্যয় করা হইতেছে।
নেতৃবৃন্দের সম্বর্ধনা
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ, সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান এবং প্রচার সম্পাদক হাফেজ হাবিবুর রহমান দ্বিপ্রহরে কক্সবাজার আগমন করিলে স্থানীয় জনসাধারণ তাঁহাদেরকে বীরােচিত সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। কক্সবাজার হইতে বিপুল সংখ্যক লােক প্রায় ১০মাইল দূরবর্তী রামু পর্যন্ত যাইয়া নেতৃবৃন্দকে অভ্যর্থনা জানায় এবং সেখান হইতে কক্সবাজার পর্যন্ত গােটা পথে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’, ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’, ‘গণতন্ত্র জিন্দাবাদ’, ও ‘শহীদ সােহরাওয়ার্দী জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি ধ্বনি প্রদান করিয়া আকাশ-বাতাস মুখরিত করিয়া তােলে।
অপরাহ্নে কক্সবাজারের স্থানীয় আওয়ামী লীগ অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক জনাব ফজলুল হকের সভাপতিত্বে বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শেখ মুজিব, মওলানা তর্কবাগীশ, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব এম, এ, আজীজ এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ কর্মপরিষদের সদস্য জনাব আবদুল্লাহ হারুন বক্তৃতা করেন। সভায় প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে বিভিন্ন প্রস্তাব গৃহীত হয়।
কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন
গত রবিবার রাত্রে কক্সবাজার আওয়ামী লীগ কর্মীদের এক সভায় জনাব আবসার কামাল চৌধুরীকে সভাপতি, জনাব নূর আহমদকে সাধারণ সম্পাদক এবং জনাব এ,কে,এম, মােজাম্মেল হককে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করিয়া কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মপরিষদ গঠন করা হয়।
মাদারবাড়ী আওয়ামী লীগ অফিস উদ্বোধন
কক্সবাজার যাত্রার পূর্বে রবিবার সকালে শেখ মুজিবর রহমান চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের পূর্ব মদারবাড়ী ইউনিয়ন শাখার অফিস উদ্বোধন করেন। এতদুপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় মওলানা তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিব বক্তৃতা করেন। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী। সভায় পূর্ব মাদারবাড়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব মাজেদুল হক এল, এল, বি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন।
অদ্য চট্টগ্রামে জনসভা
অদ্য (মঙ্গলবার) পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান চট্টগ্রামে এক জনসভায় বক্তৃতা করিবেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব