You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.05.30 | গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়িয়া তােলার আহ্বান- চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলনে শেখ মুজিবের বক্তৃতা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৩০শে মে ১৯৬৪

গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়িয়া তােলার আহ্বান
চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলনে শেখ মুজিবের বক্তৃতা

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
চাঁদপুর, ২৯শে মে- অদ্য সকালে চাঁদপুর টাউন হলে মহকুমা আওয়ামী লীগের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মহকুমা আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট জনাব চাঁদ বখশ পাটোয়ারী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে শেখ মুজিবর রহমান, খােন্দকার মােশতাক আহমদ, অধ্যাপক হাফিজ হাবিবুর রহমান, জনাব জহুর আহমদ চৌধুরী, জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী, এম, এন, এ, জনাব আবদুল খালেক উকিল, জনাব খলিলুর রহমান এডভােকেট, জনাব নাসির উদ্দীন আহমদ মােক্তার ও জনাব মােতাহারুল ইসলাম, এম, এ প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভার শুরুতে মরহুম নেতা জনাব সােহরাওয়ার্দীর আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়া মােনাজাত করা হয়। শেখ মুজিব বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মী বাহিনীকে ইউনিয়নে ইউনিয়নে শাখা আওয়ামী লীগ গঠন করিয়া সােহরাওয়ার্দীর অন্তিম বাণী- গ্রামে গ্রামে গণতন্ত্রের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়িয়া তােলার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন যে, সুশৃংখল স্বল্প সংখ্যক কর্মী বাহিনী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যে দক্ষতা দেখাইতে পারে, যে সাফল্য অর্জন করিতে পারে, শৃংখলাবিহীন বিরাট কর্মী বাহিনীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। তিনি সংক্ষেপে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বর্ণনা করিয়া বলেন যে, এই দেশের প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সক্রিয় অংশ গ্রহণ করিয়া আসিতেছে। তিনি আরও বলেন যে, একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৪টি স্তম্ভ যথা- নেতৃত্ব, প্রতিষ্ঠান, কর্মী বাহিনী এবং আদর্শ থাকে। আওয়ামী লীগের এই ৪টি স্তম্ভই পুরাপুরি আছে। তিনি আরও বলেন যে, আজ যখন গ্রামের সাধারণ মানুষ করভারে জর্জরিত হইয়া ভােটের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া এক চরম সঙ্কটের সম্মুখীন হইয়াছে, তখন আওয়ামী লীগ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাপাইয়া পড়িয়াছে। সত্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দুই প্রদেশের মধ্যে বিদ্যমান পর্বত-প্রমাণ বৈষম্য দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ অতীতেও সগ্রাম করিয়াছে, এখনও সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীরা অতীতেও বহু জেল-জুলুম সহ্য করিয়াছে এবং এখনও অধিকার আদায়ের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী বলেন যে, বর্তমান সরকার বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের নিকট হইতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করিয়াছে এবং ইহার বেশির ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয়িত হইয়াছে। আগামী বৎসর হইতে এই ঋণের টাকার জন্য প্রতি বৎসর ৪৫ কোটি টাকা করিয়া সুদ দিতে হইবে। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্দেশ করিয়া সরাসরি বলেন যে, উপরােক্ত ঋণের যে পরিমাণ অর্থ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয় হইয়াছে শুধুমাত্র উহারই সুদ পূর্ব পাকিস্তান দিবে। পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয়িত ঋণের জন্য পূর্ব পাকিস্তান সুদ দিতে প্রস্তুত নয়। পূর্বাহ্নে নেতারা হাজীগঞ্জ হইতে ট্রেনযােগে চাদপুর কোর্ট ষ্টেশন অবতরণ করিলে এক বিপুল জনতা তাহাদের সম্বর্ধনা জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব