You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
১৫ই মে ১৯৬৪

‘একই হরফ ইউরােপ ও আরব বিশ্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করিতে পারে নাই’
বর্ণমালা পরিবর্তনের প্রস্তাব সম্পর্কে শেখ মুজিবর রহমানের বিবৃতি

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (বৃহস্পতিবার) পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন ও জাতীয় সংহতির জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মােহাম্মদ আইয়ুব খান আরবী হরফে বাংলা ও উর্দু লেখার যে প্রস্তাব দিয়াছেন, তাহা দেখিয়া আমি মর্মাহত হইয়াছি। এই প্রস্তাবের পিছনে কি উদ্দেশ্য রহিয়াছে তাহা আমি জানি না। প্রেসিডেন্টের জানা উচিত যে, এই প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জীবনপাত করিতে হইয়াছে। বাংলাভাষা ও হরফ পরিবর্তনের যেকোন প্রচেষ্টা জাতীয় সংহতির পক্ষে ক্ষতিকর হইবে। ১৯৫১ সালে তদানীন্তন শাসকচক্র বাংলাভাষার জন্য আরবী হরফ প্রবর্তনের চক্রান্ত করিয়াছিল ; কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান সুস্পষ্ট কারণে তাহা প্রত্যাখ্যান করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রবল বিরােধিতার দরুনই প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়। কে না জানে যে, সমগ্র ইউরােপই রােমান হরফ ব্যবহার করিয়া থাকে। কিন্তু একই হরফের ব্যবহার ইউরােপীয় সংহতির জন্য সহায়ক হয় নাই। মধ্যপ্রাচ্যের ১১টি দেশে আরবী হরফ প্রচলিত রহিয়াছে। কিন্তু একই হরফ থাকা সত্বেও আরব বিশ্বে কোন একতা নাই। একথা সকলেই জানে যে, আরবী, ফারসী ও উর্দু হরফের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নাই। বিবৃতির উপসংহারে শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ এই প্রশ্ন পুনরায় উত্থাপিত হইলে দেশের শতকরা ৫৬ ভাগ অধিবাসী বাঙ্গালীরা পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার প্রচলনের দাবী জানাইতে বাধ্য হইবে। আমি জনগণকে সদাসজাগ থাকিতে এবং এই ভয়ানক প্রচেষ্টা রুখিতে আহ্বান জানাইতেছি।
গণতান্ত্রিক যুবদল
গণতান্ত্রিক যুবদলের সাংগঠনিক কমিটির পক্ষে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির জন্য দেশময় যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হইয়াছে, জনসাধারণের মনােযােগকে সেইদিক হইতে বিক্ষিপ্ত করাই যে আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবটির উদ্দেশ্য, এই বিষয়ে কাহারও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। দিন দিন গণতান্ত্রিক আন্দোলন যেভাবে দুর্বার হইয়া উঠিতেছে, তাহাতে শাসকগােষ্ঠীর মধ্যে যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হইয়াছে ইহা তাহারই প্রমাণ বলিয়া বিবৃতিতে বলা হইয়াছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, আরবী হরফে বাংলা ও উর্দু লেখার জন্য প্রেসিডেন্ট যে প্রস্তাব করিয়াছেন, তাহা জনসাধারণের কাছে গভীর বেদনার রূপ লইয়া দেখা দিলেও ইহা কোন বিস্ময়ের ব্যাপার নহে। কারণ দেশবাসী জানে যে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন হইতে দেশবাসীকে সরাইয়া লইয়া। যাওয়ার জন্যই কায়েমী স্বার্থবাদী মহল স্থিরীকৃত সত্যকে বানচাল করিবার প্রয়াস পান। জনস্বার্থ বিরােধী কোন ব্যবস্থা অবলম্বন না করার জন্য যুবদলের সাংগঠনিক কমিটি কর্তাব্যক্তিদের সতর্ক করিয়া দেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!