You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.05.09 | রাজশাহীর আওয়ামী লীগ সভায় ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের হামলা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৯ই মে ১৯৬৪

রাজশাহীর আওয়ামী লীগ সভায় ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের হামলা
জনতার উত্তম-মধ্যম খাইয়া দূষ্কৃতিকারীদের পৃষ্ঠ-প্রদর্শন ও ৪ ব্যক্তি আহত

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ-প্রতিনিধি)
রাজশাহী, ৭ই মে- অদ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় ভুবন-মােহন পার্কে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভায় জন দশেক ভাড়াটিয়া গুণ্ডা গােলযােগ সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা করিলে জনসাধারণ তাহাদের বেশ উত্তম-মধ্যম দিয়া তাড়াইয়া দেয়। এই গুণ্ডাদের সকলেই ছিল রিকশাওয়ালা বা টাঙ্গাওয়ালা।
সভার প্রথম বক্তা জনাব কামরুজ্জামানের বক্তৃতা সমাপ্ত হওয়ার পর যেইমাত্র আওয়ামী লীগের সমাজ সেবা সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান মাইকের কাছে গিয়াছেন, সেই সময় সভার এক কোণ হইতে গুণ্ডাদল ‘আইয়ুব জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে শুরু করে। জনসাধারণ এবং কর্মীরা পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পূর্বেই গুণ্ডারা আগাইয়া গিয়া মঞ্চের প্রায় কাছাকাছি উপস্থিত হয়। এই পর্যায়ে জনসাধারণ তাহাদের উপর ঝাপাইয়া পড়িলে তাহারা ইট-পাটকেল ছুড়িতে থাকে। ফলে, ৪ ব্যক্তি আহত হয়। ইহাদের মধ্যে ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়িয়া দেওয়া হয়। অপর ২ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাহাদেরকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব মুজিবর রহমান ছাড়াও আরও কয়েকজন সামান্য আহত হন।
গােলযােগের প্রথম দিকে ডিউটিরত পুলিস নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে। কিন্তু জনসাধারণ যখন গুণ্ডাদের পিছন ধাওয়া করে, তখন তাহারা। তৎপর হইয়া উঠে এবং লাঠিচার্জ করে। পরে গুণ্ডামির অভিযােগে জনৈক টাঙ্গাওয়ালাকে হাজতে লইয়া যাওয়া হয়। পুলিসের অতিরিক্ত সুপারিন্টেনডেন্টের সঙ্গে এব্যাপারে যােগাযােগ করা হইলে তিনি পুলিসের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযােগের সত্যতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, গােলযােগের সম্ভাবনা সম্পর্কে পুলিশ পূর্বে কোন খবর পায় নাই। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন যে, স্থানীয় কনভেনশন লীগের নেতারাই গুণ্ডাদের ভাড়া করিয়া আনেন। তাহারা অভিযােগ করেন যে, সরকার দলীয় জনৈক অত্যুৎসাহী এম, পি, এ বেশ দীর্ঘদিন যাবৎ এ ব্যাপারে কোশেশ চালাইয়া আসিতেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভায় গুণ্ডারা যে আক্রমণ চালাইতে পারে তাহাও অনেকটা প্রকাশ্য সত্য ব্যাপার ছিল। ইতিপূর্বে এ সম্পর্কে অবহিত হইয়া ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি যখন উপরােক্ত এম, পি, এর সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করেন, তখন তিনি শ্লেষের সঙ্গে জানান যে, কোনই গােলযােগ সৃষ্টি হইবে না। অথচ গােলযােগের পর তাঁহার সঙ্গে আর যােগযােগ করা সম্ভব হয় না।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়াছে যে, আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর দৈহিক আক্রমণ চালানাের জন্য কয়েক শত গুণ্ডাকে নগদ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু জনসাধারণের সতর্কতার জন্য গুণ্ডারা পরিস্থিতি প্রতিকুল বলিয়া দেখিতে পায়। গােলযােগের পর মুষ্টিমেয় লৌহ শিরস্ত্রাণধারী পুলিসকে নিকটবর্তী এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। গােলযােগের ফলে আহত ব্যক্তিগণ হইতেছেন ৪ জনাব মাতবর হােসেন, জনাব মতিউর রহমান, জনাব রফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব মুজিবর রহমান। জনাব মাতবর হােসেন এবং মতিউর রহমান কপালে মারাত্মক আঘাত পান। অত্যাধিক রক্তপাতের দরুন তাহারা অজ্ঞান হইয়া পড়েন।
শেখ মুজিবরের বক্তৃতা
সভার কাজ পুনরায় শুরু হইলে শেখ মুজিবর রহমান বক্তৃতা প্রসঙ্গে সরকার গুণ্ডা দমনে ব্যর্থ হইলে সেক্ষেত্রে কর্মীদের এই দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান। রাজশাহীর মত বিভাগীয় শহরে গুণ্ডামির ফলে নাগরিক জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যাহত হইয়াছে দেখিয়া তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি শ্রোতাদের স্মরণ করাইয়া দেন যে, বর্তমান শাসন আমলে গুণ্ডামি একটা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
মওলানা তর্কবাগীশ কোরান শরিফ হইতে উদ্ধৃতি দিয়া বলেন যে, অত্যাচার নির্যাতন কখনও চিরকাল অব্যাহত থাকিতে পারিবে না। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব মুজিবর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। আগামীকল্য নেতৃবৃন্দ নাটোরে এক জনসভায় বক্তৃতা করিবেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব