You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.05.11 | গণবিরােধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান- নাটোরের বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
১১ই মে ১৯৬৪

গণবিরােধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
নাটোরের বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা

(ইত্তেফাক-এর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
নাটোর, ৯ই মে গতকল্য এখানে আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন এবং প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের আগমন উপলক্ষে প্রদেশের সুদূরবর্তী এই নাটোর মহকুমার জনসাধারণের মধ্যে অভূতপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয়। জনগণের অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য নেতৃবৃন্দ সংগ্রামের যে আহ্বান জানাইয়াছেন বিগত ছয় বৎসরের রাজনৈতিক স্তব্ধতা সত্ত্বেও এই এলাকার জনসাধারণ তাহাতে সাড়া দিয়া রাজনৈতিক জীবনে নূতন গতি সঞ্চার করিয়াছে। নাটোর উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কর্মী সম্মেলনে যােগদানের জন্য গমন করেন। স্থানীয় সিনেমা হলে উক্ত সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
নাটোর মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব আশরাফুল ইসলাম কর্মী সম্মেলনে প্রদত্ত তাহার রিপাের্টে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করেন এবং সঠিক পথ নির্দেশের জন্য নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন জানান।
সকালে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিকালে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং মওলানা তর্কবাগীশ, শেখ মুজিবর রহমান, জনাব মতিয়ার রহমান, খােন্দকার মােশতাক আহমদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
শেখ মুজিবর রহমান তাহার বক্তৃতায় বলেন (বক্তৃতার একাংশ গতকল্যকার ‘ইত্তেফাক’-এ প্রকাশিত হইয়াছে) যে, বিপ্লবের যে অন্তর্নিহিত কণ্টক ছিল অবশেষে তাহার পরিপূর্ণ প্রকাশ দেখা যাইতেছে। এই অবস্থায় জনসাধারণকে সম্যকরূপে সমস্ত কিছু উপলব্ধি করিয়া উপর হইতে চাপিয়া বসা গণ-বিরােধী শাসকদের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ আওয়াজ তুলিতে হইবে। মওলানা তর্কবাগীশ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কোন অভাব নাই।
জনাব সােহরাওয়ার্দী যে আদর্শ ও চিন্তাধারা রাখিয়া গিয়াছেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে যে ত্যাগ স্বীকারের নজীর সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহাই আওয়ামী লীগকে নব প্রেরণা সবারে সঞ্জীবিত করিয়া তুলিবে। জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতি গুরুত্ব আরােপ করিয়া সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান বলেন যে, তথাকথিত বিপ্লবের মােট ফল হইতেছে এই যে, ইহার ফলে জনগণের দুর্দশা এবং দুই অংশের মধ্যে অসাম্য বৃদ্ধি পাইয়াছে। জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে যে কোন অবস্থার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
খােন্দকার মােশতাক আহমদ বলেন যে, মুসলিম লীগ কোটারীর শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সার্বভৗমত্বকে কায়েম করার উদ্দেশ্য লইয়াই ১৯৪৯ সালে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কিন্তু দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে যেটুকু অধিকার অর্জিত হইয়াছিল, “বিপ্লব” তাহাকে নস্যাৎ করিয়া দেওয়ায় পুনরায় আওয়ামী লীগকে সগ্রামে অবতীর্ণ হইতে হইয়াছে। অস্ত্রবল অপেক্ষা জনমতের শক্তিই অধিক, শাসকচক্রকে তাহা সম্যকরূপে বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব কামরুজ্জামান বর্তমান শাসনতন্ত্রের অসারতা উল্লেখ করিয়া বলেন যে, মুষ্টিমেয় সংখ্যক লােকের ভােটে যে সমস্ত প্রতিনিধি নির্বাচিত, তাঁহাদের কোন ক্ষমতায় নাই। জাতীয় পরিষদের কার্যবিবরণীর দৃষ্টান্ত দিয়া তিনি বলেন যে, বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে একটি প্রহসনে পরিণত করিয়াছেন এবং দেশ স্বৈরতন্ত্রের পথে অগ্রসর হইতেছে। নাটোর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব কাবুউদ্দিন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সুদূর পল্লী হইতে জনসাধারণ দলে দলে আসিয়া জনসভায় যােগদান করেন এবং সভা আরম্ভ হওয়ার অল্পক্ষণের মধ্যেই সমগ্র পার্কটি পূর্ণ হইয়া যায় এবং উহার পরে বহু লােক পার্শ্ববর্তী রাস্তায় দাঁড়াইয়া অধীর আগ্রহে বক্তৃতা শ্রবণ করিতে থাকে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব