You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
১১ই মে ১৯৬৪

সেদিন সুদূর নয়, যখন-
জনগণের রুদ্ররােষে ক্ষমতাসীনদের হাওয়াই-প্রাসাদ ধসিয়া পড়িবে
জনমত উপেক্ষার পরিণাম সম্পর্কে পাবনার বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের হুশিয়ারি

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রেরিত)
পাবনা, ৯ই মে- অদ্য এখানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, জনসাধারণের মতামতকে উপেক্ষা করিয়া এবং জনগণের দাবীকে অস্বীকার করিয়া পৃথিবীর কোন শাসকই কোনদিন টিকিয়া থাকিতে পারে নাই এবং পাকিস্তানেও সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিবে। তিনি বলেন, সেদিন সুদূর নহে, যখন জনগণের রুদ্ররােষে বর্তমান শাসকবর্গের হাওয়াই-প্রাসাদ ধূলিসাৎ হইয়া যাইবে। তিনি ঘােষণা করেন, জনগণ আজ নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইয়া উঠিয়াছে।
এই পর্যায়ে সভায় সমবেত হাজার হাজার মানুষের উল্লাস ও হর্ষধ্বনির এবং মুহুর্মুহু করতালি ও জিন্দাবাদের মাঝে শেখ মুজিবর রহমানের বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠস্বর তলাইয়া যায়। জনতাকে উদ্দেশ করিয়া তিনি বলেন যে, তথাকথিত বিপ্লবীদের আসল চেহারা আজ দেশবাসীর কাছে ধরা পড়িয়াছে; তাহাদের মুখােশ উন্মােচিত হইয়াছে এবং সমগ্র প্রদেশে জনসাধারণ এই একনায়কত্বের অবসান ঘটাইয়া নিজেদের লুপ্ত অধিকারসমূহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় শপথ গ্রহণ করিয়াছে। শেখ মুজিবর রহমান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন যে, “আপদ, বিপদ, এবং মুসিবত এই তিনটি বস্তু আজ দেশবাসীর উপর সওয়ার হইয়াছে এবং দেশ শাসন করিতেছে। তিনি তাঁহার বক্তব্যের একটি প্রণিধানযােগ্য ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন।
তিনি দেশের শাসন ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনের বিভিন্ন ধাপে অধিষ্ঠিত ‘রাজপুরুষদেরকে উল্লেখিত ত্রুটির প্রতিনিধি বলিয়া উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ঐ সকল রাজপুরুষ যখন যেখানে তশরিফ রাখেন, তখনই সেখানে ‘আপদ, বিপদ কিংবা মুসিবত’ নামিয়া আসে। শেখ মুজিবর রহমান নির্যাতিত রাজনৈতিক কর্মীদের কথা স্মরণ রাখিবার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এবং কোন কিছু ক্ষমা না করিয়া রুদ্ররােষে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইয়া লুপ্ত অধিকারসমূহ পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। শেখ সাহেব বলেন যে, তাঁহার আশঙ্কা হয় তিনি ঢাকায় ফিরিয়া গেলে তাঁহাকে কারাবরণ করিতে হইবে। কিন্তু তিনি এই নির্যাতনের ভয়ে ভীত না হইয়া ‘লাখে লাখে’ কারাবরণ করিয়া সরকারের কারাগারগুলিকে পূর্ণ করিয়া তােলার জন্য জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, পাবনায় তিনি যখনই আসিয়াছেন, তখনই ক্যাপ্টেন মনসুরকে সঙ্গে পাইয়াছেন কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটিয়াছে। ক্যাপ্টেন মনসুর এখন কারারবদ্ধ রহিয়াছেন। তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর, আমজাদ হােসেন, রণেশ মৈত্র এবং অন্য সকল রাজবন্দীর আশু মুক্তি দাবী করেন। সভায় শেখ সাহেব ব্যতীত মওলানা তর্কবাগীশ এবং জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য জনাব কামরুজ্জামান, মতিউর রহমান, খন্দকার মােশতাক আহমদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভার পূর্বে স্থানীয় সাধারণ এবং আওয়ামী কর্মিগণ নেতৃবৃন্দকে বিপুলভাবে মাল্যভূষিত করেন। সভায় মরহুম জনাব সােহরাওয়ার্দীর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে অবিলম্বে বন্দীদের মুক্তি দান, প্রাদেশিক নির্বাচন, সার্বজনীন ভােটাধিকার প্রবর্তন এবং জাতীয় পরিষদ নির্বাচনী বিল বাতিল দাবী জানানাে হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!