You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
৩রা মে ১৯৬৪

হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হউন
বগুড়ার বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানের উদাত্ত আহ্বান

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রেরিত)
বগুড়া, ১লা মে। অদ্য পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান স্থানীয় এডােয়ার্ড পার্কে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাকালে আজাদী লাভের সংগ্রামে যােগদানের জন্য অসংখ্য নির্যাতন ভােগকারীদের সােহরাওয়ার্দীর স্মৃতি মনে রাখিয়া লুপ্ত অধিকার পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত সংগ্রামে নিজেদের প্রস্তুত রাখার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। বর্তমান রাজনীতির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নীতি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, নির্যাতনের ঝড় নামিয়া আসিলেও নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য তিনি কৃতসংকল্প। তিনি হুঁশিয়ার করিয়া দেন যে, আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে যে কোন শক্তির সঙ্গে কাজ করিতে প্রস্তুত থাকিলেও ইহা অশুভ আঁতাতের উদ্দেশ্যে পরিচালিত কোন রাজনৈতিক তৎপরতা সহ্য করিবে না। তিনি সরকারকে লক্ষ্য করিয়া বলেন যে, তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী কিন্তু কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হইলে সরকারই তজ্জন্য দায়ী হইবেন। তিনি সরকারী দমননীতির তীব্র নিন্দা করিয়া বলেন যে, দমননীতি এমনভাবে চালানাে হইতেছে, যাহার ফলে প্রদেশের শিক্ষাজীবন সম্পূর্ণ বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছে। তিনি সরকারকে পুনরায় হুঁশিয়ার করিয়া দেন যে, ছাত্রদের উপর দমননীতির ষ্টিমরােলার চালানাে হইতেছে এবং ইহার ফলেই তাঁহাদের পতন ঘটিবে।
তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘােষণা করেন যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা নির্যাতনের ভয় পায় না। তিনি বলেন যে, প্রদেশে যদি স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করা হয় এবং ছাত্র বন্দীদের মুক্তি দান, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং তাহাদের ডিগ্রী প্রত্যর্পণ না করা হয় তবে আন্দোলন এমন আকার ধারণ করিবে, যাহাতে সবকিছু ভাসিয়া যাইবে। শেখ মুজিবর রহমান তিনটি প্রধান বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রকে দলনের জন্য সরকারী পরিকল্পনার উপর আলােকপাত করিয়া বলেন যে, বাঙ্গালীদের প্রকৃত তথ্য প্রাপ্তি হইতে বঞ্চিত করাই ইহার উদ্দেশ্য। জাতীয় স্বার্থের প্রতি যাহারা বিশ্বাসঘাতকরা করিতেছে, তাহাদের সতর্ক করিয়া দিয়া তিনি বলেন যে, তাহাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হইবে।
তিনি নিকৃষ্টতম দুর্নীতির প্রশ্রয় দান ও দেশের গুরুতর বৈষম্য সৃষ্টির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি দোষারােপ করেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও জেলার ১৩টি থানা হইতে আগত হাজার হাজার লােক আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তৃতা শ্রবণ করে। জনাব মুশতাক আহমদ বলেন যে, বর্তমান সরকার জনগণকে সর্বপ্রকার অধিকার হইতে বঞ্চিত করিয়াছেন। তিনি বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত ওয়ার্কস প্রােগ্রামের ভাঁওতা উদঘাটন করিয়া জনগণকে ইহার বাহ্যিক চাকচিক্য দ্বারা প্রতারিত না। হওয়ার জন্য আহবান জানান। তিনি বলেন যে, এই পরিকল্পনায় জাতিকে ধ্বংস করা হইবে।
আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক সমাজকল্যাণ সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান বলেন যে, সাধারণ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যই ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র বাতিল করা হয়। রাষ্ট্রের নামে জনগণের উপর উৎপীড়নের উদ্দেশ্যে এক শ্রেণীর অফিসার শ্রেণীর জন্য তিনি সরকারের প্রতি দোষারােপ করেন। জনগণ যে অধিক শক্তিশালী, তাহা প্রমাণের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগে যােগদানের জন্য স্থানীয় প্রবীণ নেতা জনাব ইলিয়াস জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব ইলিয়াস নূরুল আমীন মন্ত্রিসভার আমলে পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী ছিলেন। অদ্য তিনি আওয়ামী লীগ যােগদান প্রসঙ্গে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন যে, জনগণের মুক্তির জন্য সংগ্রামের ব্যাপারে আওয়ামী লীগই যে একমাত্র সংস্থা, তৎসম্পর্কে তিনি স্থির বিশ্বাসে উপনীত হইয়াছেন। জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব কামরুজ্জামান বলেন যে, স্বেচ্ছাচারী শাসন বজায় রাখার জন্য শাসনতন্ত্রের দ্বিতীয় সংশােধনী আনা হইতেছে। ইহা যাহাতে না হইতে পারে, তজ্জন্য জনমত সৃষ্টির জন্য তিনি জনসাধারণের নিকট আহ্বান জানান। মওলানা তর্কবাগীশ নিম্নতম স্তর হইতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয় খােলা, ছাত্রদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ডিগ্রী প্রত্যর্পণ এবং সাবেক পরিষদ সদস্য জনাব কোরবান আলী, শাহ মােয়াজ্জম, শেখ ফজলুল হক, জনাব। আজমত আলী শিকদার, জনাব আবদুস সমাদ ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তির দাবীতে প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। অপর এক প্রস্তাবে শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থার শ্রমিক ও কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা মূল বেতনের সহিত সংযােজন দাবী করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!