You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৩০শে এপ্রিল ১৯৬৪

নিৰ্যাতনমূলক ব্যবস্থা বন্ধের দাবী
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বিবৃতি

ঢাকা, ২৯শে এপ্রিল। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ব্যাপক দমন-নীতি এমন এক নয়া পৰ্য্যায়ে আসিয়া পৌঁছিয়াছে যে, জনসাধারণের মধ্যে গভীর উত্তেজনা ও উদ্বেগের সঞ্চার হইয়াছে। বিশেষ করিয়া ছাত্রদের উপর জুলুম ও নিৰ্যাতন সকল সীমা লংঘন করায় গােটা দেশ বিশেষভাবে মর্মাহত ও স্তম্ভিত হইয়া পড়িয়াছে।
জাতীয় আওয়ামী পার্টির প্রেসিডেন্ট মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান, নেজামে এছলাম পার্টির সেক্রেটারী জেনারেল জনাব ফরিদ আহমদ এম, এন, এ এবং সাবেক জামাত-এ-এছলামের জনাব আখতার উদ্দীন আহমদ এম, এন, এ অদ্য ঢাকায় প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে উপরােক্ত অভিযােগ করেন। বিবৃতিতে বলা হয় যে, জনসাধারণ ব্যাপকভাবে ছাত্র নির্যাতনের নিন্দা করিয়াছেন।
জনসাধারণের মধ্যে এই অসন্তোষ ও প্রতিক্রিয়ার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের প্রতি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করিবেন বলিয়া আশা করা গিয়াছিল। কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, ছাত্রদের প্রতি দমননীতি চালাইয়া যাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তাহাদের সিদ্ধান্তে অটল রহিয়াছেন।
ইহার ফলে জনসাধারণের মনে তীব্র বিক্ষোভের সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সরকার এবং শিক্ষা বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের এবং দেশের অকল্যাণকারী কোন মারাত্মক বিশৃংখলা ডাকিয়া আনিবেন না বলিয়া বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়।
ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও স্বার্থ প্রদেশের শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করিয়া ফেলিয়াছে।
দেশের তরুণ ছাত্রদের উপর এখন নির্যাতন বন্ধ হওয়া উচিত। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও আরও কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের গোঁড়া নীতিতে বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বিবৃতিতে বলা হয় যে, সরকারী কর্মচারীর প্রতিহিংসা ক্ষমার অযােগ্য হইলেও অনুধাবন যােগ্য। কিন্তু সরকারের হস্তের ক্রীড়নক এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ যেভাবে নিজেদের সন্তানদের উপর নির্যাতন চালাইয়া যাইতেছেন তাহা অবােধগম্য ও অসহ্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি দিয়াছেন তাহাতে মনে হয় তাহারা কতিপয় নির্দেশ অথবা কোন অসাধু উদ্দেশ্যে কাজ করিতেছেন।
কিন্তু গত ২১শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অপ্রীতিকর ঘটনার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করিতে পারেন নাই। বিবৃতিতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সকল রকম দলীয় ও ব্যক্তিগত রাজনীতির উর্দ্ধে থাকিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নিজেদের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার আহ্বান জানান হয়। শিক্ষা পরিবেশকে স্বাভাবিক করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসাবে ছাত্রদের উপর হইতে সকল প্রকারের বিধিনিষেধ আশু প্রত্যাহার করার জন্য বিবৃতিতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ এবং করটিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান হয়। গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের আশু মুক্তি এবং তাহাদের উপর সমূদয় মামলা ও গ্রেফতারী পরােয়ানা প্রত্যাহারের জন্য বিবৃতিতে সরকারকে অনুরােধ করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!