ইত্তেফাক
১৩ই মে ১৯৬৪
অধিকারের সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবেই
চুয়াডাঙ্গার বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবর রহমানের বক্তৃতা
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
চুয়াডাঙ্গা, ১১ই মে- অদ্য স্থানীয় আমবাগানে আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান ঘােষণা করেন যে, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের সহিত শান্তিতে বসবাস করিতে ইচ্ছুক। কাজেই দেশের উভয় অংশের মধ্যে সমানভাবে সকল সম্পদ বণ্টন করা উচিত। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানের সহিত আমাদের কোন ঝগড়া নাই, তবে ইহাও সত্য যে, পূর্ব পাকিস্তানের কষ্ট ও দুর্দশার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিরতরে উৎখাত করিতে হইবে। গভর্নর জনাব আবদুল মােনেম খানের সমালােচনা করিয়া শেখ মুজিব বলেন, ইহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, জনাব মােনেম খানের মত লােক শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মত নেতার সমালােচনা করার সাহস রাখেন। তিনি জনাব মােনেম খানকে গণপরিষদের সদস্য থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য একটি বাক্য উচ্চারণ করিয়াছেন কিনা, তাহা প্রকাশ করিতে আহবান জানান। এই ঐতিহাসিক জনসভায় শেখ মুজিব বর্তমান সরকারের নিকট জিজ্ঞাসা করেন যে, কেন দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য সাড়ে তেত্রিশ শত কোটি এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সাড়ে নয় শত কোটি টাকা বরাদ্দ করা হইয়াছে।
বর্তমান সরকারকে লক্ষ্য করিয়া আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন যে, যেখানে নয়া রাজধানী নির্মাণের মত একটা পাগলামি করা হইতেছে, সেখানে টাকার অভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণের অন্য ‘ত্রুগ মিশন পরিকল্পনা কার্যকরী করা সম্ভব হইতেছে না কেন? জনসাধারণের প্রতি লক্ষ্য করিয়া শেখ সাহেব বলেন, সরকার আসিবে এবং যাইবে; কিন্তু যে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হইতেছে, উহার শতকরা ৭৫ ভাগ পূর্ব পাকিস্তানকে পরিশােধ করিতে হইবে। অথচ এই সকল বৈদেশিক ঋণের মাত্র ২০ ভাগ পূর্ব পাকিস্তান ভােগ করে।
মুহুর্মুহু করতালি ও হর্ষধ্বনির মধ্যে শেখ মুজিব ঘােষণা করেন যে, স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য আমাদের যেভাবে সংগ্রাম করিতে হইয়াছে, অনুরূপভাবে হৃত অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্যও সংগ্রাম করিতে হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব