ইত্তেফাক
৪ঠা মে ১৯৬৪
দরিদ্র চাষীদের কর মওকুফের দাবী
গাইবান্ধার জনসভায় আওয়ামী লীগ সম্পাদকের বক্তৃতা
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
গাইবান্ধা, ৩রা মে বিপুল করতালির মধ্যে আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান অদ্য এখানে ঘােষণা করেন যে, চাষােপযােগী ২৫ বিঘার কম জমির মালিকদের পাঁচ বৎসরের জন্য সম্পূর্ণরূপে কর মওকুফ করাই আওয়ামী লীগের দাবী। অনুরূপভাবে আগামী বাজেটেই কর মওকুফ করার জন্য তিনি সরকারের নিকট দাবী জানান।
অদ্য অপরাহ্নে গাইবান্ধা ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বক্তৃতাপ্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান দেশের জনসাধারণের দুর্গতির বিবরণ দান করিয়া বলেন যে, উপর্যুপরি ফসল নষ্ট হওয়ায় জীবনধারণের শেষ সম্বলটুকু কৃষকদের বন্ধক দিতে হইয়াছে ফলে তাহাদের অবস্থা চরমে পৌঁছিয়াছে অথচ সরকার নানা অজুহাতে কর বৃদ্ধি করিয়াই চলিয়াছেন। তিনি আরও বলেন যে, অপরদিকে সরকার প্রয়ােজনীয় ও অপ্রয়ােজনীয় বহু শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কোন না কোন অজুহাতে কর হইতে অব্যাহতি দান করিতেছেন। কর মওকুফ প্রস্তাব ব্যাখ্যা করিয়া তিনি বলেন যে, কর আদায়ের ব্যয় আদায় উক্ত প্রস্তাবের অন্তর্ভুক্ত নহে। কর মওকুফ করা হইলে রাজস্বখাতে তেমন বেশী ঘাটতি পড়িবে না বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
শেখ মুজিবর আরও বলেন যে, গরীব জনসাধারণকে রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা হইতে দূরে রাখার জন্যই বর্তমান সরকার সচেষ্ট রহিয়াছেন এবং এইভাবে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমান ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য। অংকুরেই একনায়কত্ব বিনাশ করার সংগ্রামে আগাইয়া আসার জন্য তিনি জনসাধারণের নিকট আহ্বান জানান।
পরিশেষে শেখ মুজিব বলেন যে, কায়েমী স্বার্থীদের দীর্ঘদিনের বিশ্বাসঘাতকতা বিপ্লবরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য জনসাধারণকে আওয়ামী লীগে যােগদান করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে খােন্দকার মােস্তাক আহমদ বলেন যে, মুসলিম লীগের কবল হইতে দেশকে মুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করে এবং ১৯৫৪ সালে জনগণের সেই আশা পূরণ করার সংগ্রামে অগ্রনায়কের ভূমিকা গ্রহণ করে। বর্তমানেও হৃত গণঅধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আওয়ামী লীগ সগ্রামে অবতীর্ণ হইয়াছে।
জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব কামরুজ্জামান বলেন যে, একব্যক্তির শাসনকায়েমই বর্তমান শাসনতন্ত্রের লক্ষ্য।
সভায় জনাব মতিউর রহমানও বক্তৃতা করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব