ইত্তেফাক
৫ই মে ১৯৬৪
আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিণত হইতে দিবে না
রংপুরের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের ঘােষণা
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
রংপুর, ৩রা মে- অদ্য স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরী ময়দানের এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান অভিযােগ করেন যে, দ্বিতীয় রাজধানী গড়িয়া তােলার নামে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম পাকিস্তানে জৌলুস চালাইয়াছে আর পূর্ব পাকিস্তানকে কাঙ্গালে পরিণত করিয়াছে।
জাতীয় সংহতির নামে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের মধ্যে যে আকাশ চুম্বি বৈষম্য সৃষ্টি করা হইয়াছে, শেখ মুজিবর রহমান একে একে তাহার ফিরিস্তি বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনগণ প্রতিবাদ না করিলে ‘রক্ত শােষণ চলিতেই থাকিবে।
পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিণত করার বিরুদ্ধে সবাইকে সগ্রাম শুরু করার জন্য শেখ মুজিব জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ঘােষণা করেন যে, আওয়ামী লীগ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিণত করার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিবে। শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, জনগণের রাষ্ট্রপরিচালনা সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা ছিনাইয়া নেওয়ার ফলে পূর্ব পাকিস্তানীরা আজ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হইয়াছে। জনগণের হৃত রাজনৈতিক অধিকার ফেরৎ দেওয়া না হইলে পূর্ব পাকিস্তান একটি ‘খাস উপনিবেশে পরিণত হইবে বলিয়া তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি সমান নাগরিক অধিকার ও সমান অর্থনৈতিক অধিকার দাবী করার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান। ওয়ার্কস প্রােগ্রামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিব বলেন, ওয়ার্কস প্রােগ্রাম কাহারও মহানুভবতার পরিচয় নয়; বরং ইহা জাতীয় অর্থ অপচয়ের পরিচয়। আওয়ামী লীগ সম্পাদক বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানে মূলধন সরবরাহ করিতে প্রস্তুত নহে, তাই কিছু সংখ্যক লােককে ঘুষ দিয়া দলে রাখার জন্যই অত্যন্ত চালাকির সহিত ওয়ার্কস প্রােগ্রামের ব্যবস্থা করিয়াছে। শেখ মুজিবর রহমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আজাদী অর্জনের জন্য সংগ্রাম করার উদ্দেশ্যে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হইতে আহ্বান জানান। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জনাব নুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ ছাত্রদের উপর সরকারী দমন নীতির কঠোর সমালােচনা করেন। তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া বলেন যে, ছাত্র নির্যাতনের পরিণাম ভাল হইবে না।
প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জনাব মতিয়র রহমান তাহার বক্তৃতায় জনগণের উপর করের বােঝা চাপাইবার প্রতিবাদ করেন। এবং করদাতাদের দুঃখ-দুর্দশার বিষয় বিবৃত করেন।
খােন্দকার মােস্তাক আহমদেরও এই সভায় বক্তৃতা দানের কথা ছিল; কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দরুন সভার কাজ সংক্ষিপ্ত করার ফলে তিনি বক্তৃতা করিতে পারেন নাই।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব