You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
৪ঠা এপ্রিল ১৯৬৪

নিৰ্যাতনের জন্য তিনটি জনপ্রিয় পত্রিকাকে বাছিয়া লওয়া হইয়াছে কেন?
শাসনকর্তাদের নিকট শেখ মুজিবর রহমানের জিজ্ঞাসা
জামানত তলবের নােটীশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবী

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী ও সৰ্ব্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের জনাব শেখ মুজিবর রহমান দৈনিক আজাদ”, “সংবাদ,” এবং “ইত্তেফাক পত্রিকার প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক জামানত তলবের শাে-কজ নােটিশ জারীর কঠোর প্রতিবাদ করিয়া দেশের সর্বনাশের পথ প্রশস্ত না করিয়া গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারকে অবিলম্বে উক্ত নােটিশ প্রত্যাহার করিয়া লওয়ার দাবী জানান।
তিনি বলেন যে, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াইয়ে সাময়িকভাবে “মিথ্যার” জয়জয়কার দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত সত্যই জয়যুক্ত হইবে। শেখ মুজিবুর রহমান গতকল্য এক বিবৃেিত বলেন যে, পূৰ্ব্ব পাকিস্তান সরকার দৈনিক ‘আজাদ’ ও ‘সংবাদ পত্রিকার উপর ৩০ হাজার টাকা করিয়া এবং ইতিপূৰ্ব্বে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপর ২৫ হাজার টাকার জামানত কেন তলব করা হইবে না তাহার কারণ দর্শাইবার নােটীশ জারী করিয়াছেন বলিয়া যে সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে তাহা দেশের সকল গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিকেই বিস্মিত ও হতবাক করিয়া দিয়াছে। স্বাধীনভাবে খবর, মতবাদ ও জনমত পরিবেশন করার দায়িত্বে নিযুক্ত জাতীয় সংবাদপত্রগুলিকে ইতিপূৰ্বেই নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে শৃঙ্খলিত করা হইয়াছে এবং বর্তমানে ঘন ঘন নিরাপত্তা আইন ও প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স নামক কালা-কানুন প্রয়ােগ করিয়া উক্ত বিধিনিষেধকে আরও কঠোর করা হইতেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, বর্তমানে শাসকচক্র অবাধে সংবাদ ও মতামত প্রকাশ করিতে না দিয়া তাহাদের একনায়কত্ববাদী শাসন চিরস্থায়ী করিতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছেন।
তিনি বলেন যে, জনসাধারণকে তাহাদের সার্বজনীন প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করিয়া সংবাদপত্রের কণ্ঠরােধ করিয়া জনসাধারণের অধিকার আদায়ের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাহারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করিতেছে তাহাদের দমনকল্পে অত্যাচার চালাইয়া এবং সম্প্রতি নানারূপ নিৰ্যাতনমূলক কার্য্যের মাধ্যমে কায়েমী স্বার্থবাদী মহল দেশকে কোনপথে চালিত করিতেছেন তাহা সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি শাসকবর্গকে ইতিহাস হইতে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য সতর্ক করিয়া দিয়া বলেন যে, যে সকল দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে খর্ব করার জন্য দমননীতি চালান হইয়াছে, ইতিহাস হইতে তাহার পরিণতি সম্পর্কে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত।
শেখ মুজিবর রহমান অতঃপর বলেন যে, যেখানেই সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সংগ্রাম চলিয়াছে, তথায় মিথ্যা সাময়িকভাবে প্রধান্য পাইলেও সৰ্ব্বদা সত্যই পরিণামে জয়যুক্ত হইয়াছে। আমরা যাহারা গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী, তাহাদেরকে সাময়িকভাবে দমন করা সম্ভব হইতে পারে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে বর্তমানে দমননীতি চালানাে হইতেছে, তাহা বন্ধ করা না হইলে এবং গণতন্ত্র ফিরাইয়া দেওয়া না হইলে শাসন কর্তৃপক্ষ দেশকে এক ভয়াবহ পরিণতির পথে ঠেলিয়া দিবেন।
শেখ মুজিব প্রশ্ন করেন যে, শুধুমাত্র তিনটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিক পত্রিকাকে বাছিয়া লইয়া নিৰ্যাতন করা হইতেছে কেন, সরকার তাহার কারণ ব্যাখ্যা করিবেন কি?
তিনি সকল শ্রেণীর জনসাধারণকে সরকারের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও নিপীড়নমূলক কার্য্যের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিতে আহ্বান জানান এবং সরকারকে নির্যাতনমূলক কাৰ্য্য হইতে বিরত হইতেও সংবাদপত্রের কণ্ঠরােধ না করিয়া জনসাধারণের দাবীর প্রতি মৰ্য্যাদাশীল হইতে আবেদন জানান। তিনি বলেন যে, সরকার জনসাধারণের দাবী নতশিরে মানিয়া লইলেই সকলের এবং সামগ্রিকভাবে জাতির মঙ্গল হইবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!