You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.03.18 | গণতন্ত্র হাছেল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলিতে থাকিবে- দেশবাসীর কর্তব্য সম্পর্কে সংগ্রাম কমিটীর বিবৃতি | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৮ই মার্চ ১৯৬৪

গণতন্ত্র হাছেল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলিতে থাকিবে
দেশবাসীর কর্তব্য সম্পর্কে সংগ্রাম কমিটীর বিবৃতি

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
সৰ্বদলীয় সার্বজনীন ভােটাধিকার ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন পরিষদের পক্ষ হইতে ৮জন নেতা এক যুক্ত আবেদনে বুধবার ও আগামীকল্য বৃহস্পতিবারের মিছিল, সভা ও সমাবেশকে সৰ্ব্বতােভাবে সফল করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন যে, সার্বজনীন ভােটাধিকার ও প্রত্যক্ষ নির্বাচন আদায়ের জন্য বর্তমানে যে আন্দোলন শুরু হইয়াছে উক্ত দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাহা অব্যাহত থাকিবে।
ন্যাপ সভাপতি মওলানা ভাসানী, আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা তর্কবাগীশ, আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান, ন্যাপের জনাব মহীউদ্দিন আহমদ, নেজামে এছলাম পার্টির সভাপতি মওলানা সৈয়দ মােছলেহ উদ্দীন, সেক্রেটারী মওলানা ছিদ্দিক আহমদ, সাবেক জামাতে এছলামীর জনাব আখতার উদ্দীন এম, এন, এ এবং মওলানা আবদুল আলী এম পি,এ উক্ত বিবৃতি প্রদান করেন। তাহারা বলেন যে, আমাদের শাসকবর্গ দেশবাসীকে ভােটাধিকার লাভের অযােগ্য ঘােষণা করিয়া চরম স্বৈরাচারী পন্থায় দেশ শাসনের ব্যবস্থা করিয়াছেন। জাতীয় জীবনের এক চরম সন্ধিক্ষণে আজ আমরা অবস্থান করিতেছি। সমাজের সর্বশ্রেণী ও সর্বস্তরে আজ এক চরম হতাশা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্যোগ বিরাজ করিতেছে। নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধিতে সমাজ ধ্বংসের পথে। নগর শুল্ক হইতে শুরু করিয়া হাজারাে রকম ট্যাক্স ও বর্ধিত খাজনার চাপে দেশবাসীর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। উন্নয়নমূলক কাজের নামে কোটি কোটি টাকার খেলা চলিতেছে; অর্ডিন্যান্সের যাতাকলে বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হইয়াছে এবং গণতন্ত্রের নামে ব্যক্তিতন্ত্র চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে।
তাঁহারা বলেন, পাকিস্তান জনগণের ভােটে অর্জিত হইয়াছে অথচ আজ সেই পাকিস্তানের জনগণকে ভােটাধিকার হইতে চিরতরে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলিয়াছে। বর্তমান সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কমিশনের সােপারেশও উপেক্ষা করিয়া এবং গণদাবীর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করিয়া স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে পাকাপােক্ত করার জন্য জাতীয় পরিষদের বর্তমান অধিবেশনে আইন পাশ করিয়া লওয়ার চেষ্টা চলিতেছে।
তাঁহারা আরও বলেন যে, বর্তমান সরকার অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশে চালু করিতে চাহিতেছেন এবং ক্ষমতাবিহীন জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদকে তামাশায় পরিণত করিয়া অর্ডিন্যান্স দ্বারা দেশ শাসন করিয়া চলিয়াছেন? ফলে গত ছয় বৎসরে স্বৈরাচারী শাসনে দিশেহারা আমাদের জাতীয় মানসে এই সত্যই এখন সুস্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, হয় দাসত্ববরণ নতুবা সুদৃঢ় গণঐক্য ও গণআন্দোলন দ্বারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ছাড়া তৃতীয় কোন পথ খােলা নাই।
আমরা জানি, গণঐক্য ও দুর্বার গণ-আন্দোলনই আমাদের পথ। আমাদের হতাশ হওয়ার কিছু নাই। দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকারের ঐতিহ্য আমাদের রহিয়াছে।
তাই সকল শ্রেণীর, সকল পেশার, সকল দল ও মতের মানুষের নিকট আমরা আবেদন জানাইতেছি যে, সাৰ্বজনীন ও প্রত্যক্ষ ভােটাধিকার আদায়ের দাবীতে নিয়মতান্ত্রিক গণআন্দোলন গড়িয়া তুলুন এবং অদ্য বুধবার সারা প্রদেশব্যাপী রাস্তার মােড়ে মােড়ে সভানুষ্টান ও খণ্ড মিছিল বাহির করুন ও আগামীকাল প্রদেশের সর্বত্র হরতাল, জনসভা ও শােভাযাত্রা করুন। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলিতে থাকিবে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব