You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.03.07 | সরকার বিরােধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তীব্র নিন্দা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
৭ই মার্চ ১৯৬৪

সরকার বিরােধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তীব্র নিন্দা
আওয়ামীলীগ সম্মেলনে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের বক্তৃতা

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন যে, দেশে বিরােধী দলের রাজনৈতিক তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য বর্তমান সরকার দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন। নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বর্তমান সরকারের দমনমূলক ব্যবস্থাকে নির্লজ্জ আখ্যা দিয়া বলেন যে, বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারী করিয়া সভা-সমিতি নিষিদ্ধ করা হইয়াছে, রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে ডিআইবি পুলিশ লেলাইয়া দেওয়া হইয়াছে এবং জেলা, মহকুমা ও শহরের সব্বত্র সরকার বিরােধী কর্মীদের নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হইতেছে। তিনি বলেন যে, ইহার পরেও নানা আইন ও হুকুম জারী করিয়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করিয়া সরকার জনগণের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করিতেছেন।
গতকল্য শুক্রবার সাড়ে তিনটায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের তিনদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়। পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগ নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান উহার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক মােছলেম লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমানের আওয়ামী লীগে যােগদানের করা ঘােষণা করেন। অতঃপর শাহ আজিজুর রহমান তাঁহার আওয়ামী লীগে যােগদানের কারণ বিশ্লেষণ করেন। পাকিস্তান গণতন্ত্রী দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খওয়াজা আহমদও গতকল্য আওয়ামী লীগে যােগদানের কথা ঘােষণা করেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে দেশে একটি সুশৃংখল ও সুসংগঠিত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের একান্ত প্রয়ােজন বলিয়া আমরা দল পুনরুজ্জীবিত করিয়াছি। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য এই প্রতিষ্ঠান দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি আরও বলেন যে, আমরা দেশবাসীকে এই বলিয়া আশ্বাস দিতে পারি যে, দল পুনরুজ্জীবনের ফলে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি আরও দৃঢ় এবং সংঘবদ্ধ হইয়া উঠিবে। তিনি আরও বলেন যে, দেশে বিরােধী দলের তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকার প্রচণ্ড দমননীতি শুরু করিয়াছেন। সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারী করিয়া সভা-সমিতি নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করিয়া জনসাধারণের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হইয়াছে।
নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান দৃঢ়তার সহিত বলেন যে, যে কোনরূপ দমননীতি চালানাে হউক না কেন জনসাধারণের দৃঢ় সংকল্পের নিকট সরকারের পরাজয় স্বীকার করিতেই হইবে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহার রিপাের্টে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিশ্লেষণ করেন। মওলানা তর্কবাগীশ সভাপতির দীর্ঘ ভাষণে বর্তমান পরিণতির পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নীতি সম্পর্কে আলােচনা করেন। সভায় প্রথমে গৃহীত এক প্রস্তাবে মরহুম এইচ, এস, সােহরওয়ার্দীর এন্তেকালে গভীর শােক প্রকাশ করা হয়। মরহুম শেরে বাংলার এন্তেকালেও শােক প্রকাশ করিয়া দ্বিতীয় একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। অপর এক প্রস্তাবে মানকা শরিফের পীর, মিয়া এফতেখারুদ্দিন, বিচারপতি জনাব এস. আর. কায়ানী, বগুড়ার জনাব মােহাম্মদ আলী, মওলবী তবিজুদ্দীন খান, জনাব হামিদ নিজামী, আল্লামা মাশরেকী, হাসনত উল্লাহ হাফিজুদ্দিন আহমদ এবং কালু মােল্লার মৃত্যুতে শােক প্রকাশ করিয়া তৃতীয় একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ডেলিগেটগণ সম্মেলনের স্থান হইতে (গ্রীন রােড) হাটিয়া জনাব সােহরওয়ার্দীর মাজার জিয়ারত করেন। অদ্য শনিবার সকাল ৯টায় পুনরায় সম্মেলন শুরু হইবে। এইদিন সাংগঠনিক বিষয়ে আলাপ আলােচনা করা হইবে। এইদিন জাতীয় পরিষদে পার্লামেন্টারী দল গঠনের চেষ্টা করা হইবে বলিয়া বেগম রােকেয়া আনােয়ার গতকল্য রাত্রে জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব