আজাদ
২২শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪
গণবিরােধী শক্তির কুটি ও ভীত-সন্ত্রস্ত নেতৃত্বের
স্পর্শমলিন শূন্যতার মধ্যে মহান ২১শে উদযাপিত
বেদনাহত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার প্রাণস্পর্শী মিছিল
(স্টাফ রিপাের্টার)
বাংলা ভাষাকে তাহার ন্যায্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে কয়টি তরুণ বারাে বৎসর পূৰ্ব্বে তাহাদের অমূল্য জীবন দান করিয়া বাপ-মা, ভাই-বােন, আত্মীয়-পরিজন, সহপাঠি, বন্ধুবান্ধব, দেশ ও দেশবাসীর নিকট হইতে চিরবিদায় লইয়া চলিয়া গিয়াছেন, তাহাদের অমর কীৰ্ত্তির স্মরণে প্রতি বছরের ন্যায় গতকল্যও ঢাকাসহ সমগ্র প্রদেশে ভাবগম্ভীর পরিবেশে শহীদ দিবস উদযাপিত হয়।
কিন্তু যে মহৎ উদ্দেশ্যে ভাষা আন্দোলনের সৃষ্টি হইয়াছিল এবং যে লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য এই বীর তরুণেরা অকাতরে আত্মদান করিয়াছিলেন। আজ ১২ বছর পরেও সেই লক্ষ্যে আমরা উপনীত হইতে পারিয়াছি কি না। গতকল্যকার শহীদ দিবসে এই প্রশ্নটি সকলের মনে এক বিরাট জিজ্ঞাসার দাগ কাটিয়া যায়।
তাই গতকল্যকার অনুষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন বক্তা বাংলা ভাষার প্রতি চিরাচরিত অবজ্ঞা ও বিদেশী ভাষার প্রাধান্য অব্যাহত থাকার প্রতি ইঙ্গিত করিয়া অবিলম্বে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবী উত্থাপন করেন। গতকল্য ভাের রাত্রি হইতেই শহরের বিভিন্ন অঞ্চল হইতে দলে দলে ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে আজিমপুর গােরস্তানে অমর শহীদানের কবর জেয়ারতে গমন করেন। সূর্যোদয়ের বহু পূৰ্বেই শহরের আজিমপুর মুখী সড়কগুলি ছাত্র-জনতার ভীড়ে চঞ্চল হইয়া উঠে।
দলে দলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নগ্নপায়ে সােবেহ সাদেকের সময় অমর শহীদ বরকত আর শফিউর রহমানের মাজারে পরম ভক্তিভরে ফুলমাল্য অর্পণ করিয়া হৃদয়ের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অতঃপর এই জনতা পুনরায় অসংখ্য পােষ্টার সহ মিছিল সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মীনারে সমবেত হইয়া এক সভায় মিলিত হন। মওলানা ভাসানী, জনাব আতাউর রহমান খান, শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ কবর জেয়ারতে অংশ গ্রহণ করেন।
গতকল্যকার মিছিলের বিশেষ উল্লেখযােগ্য বিষয় হইতেছে বহুসংখ্যক অবাঙালী ছাত্র-ছাত্রী উর্দু ভাষায় লিখিত বহু পােষ্টারসহ উহাতে অংশ গ্রহণ করেন। গতকল্য সকালে শহীদানের কবর জেয়ারতের পর মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগমন করিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জনাব রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে এক বিরাট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, পীর মােহসেনউদ্দিন (দুদু মিঞা), জনাব মহিউদ্দিন প্রমুখ বক্তা বক্তৃতা দান করেন।
সভায় ছাত্র নেত্রী মতিয়া চৌধুরী, ছাত্র নেতা জনাব ওবায়দুর রহমান, জনাব বদরুল হক, জনাব সিরাজুন নবী, জনাব নুরুল আলম, মাহবুবুল হক দুলন, জনাব ফোরকান মিঞা, আলী নিয়াজ মিঞা এবং ঢাকা রিক্সা মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি জনাব শফিউদ্দিন আহমদ বক্তৃতা দান করেন। গতকল্যকার সভায় শহীদ বরকতের ভগ্নী এবং শহীদ শফিউর রহমানের দ্বাদশবর্ষীয় পুত্র শফিকুর রহমান উপস্থিত ছিল। শহীদ বরকতের ভগ্নী বলেন যে, ভারতে শহীদ বরকতের পিতা-মাতা অতি দুরবস্থার মধ্যে দিন। কাটাইতেছেন। তাহাদের পাকিস্তানে আনয়নের ব্যবস্থা করার জন্য তিনি অনুরােধ জানান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব