ইত্তেফাক
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪
শহীদ সােহরাওয়ার্দীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার শপথ
ময়মনসিংহ কাউন্সিল সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা
(ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
ময়মনসিংহ, ২৩শে ফেব্রুয়ারী- অদ্য স্থানীয় টাউন হলে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভা ও কর্মী সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান মরহুম সােহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন প্রসঙ্গে বলেন ঃ জনাব সােহরাওয়ার্দী আমাদের মধ্যে না থাকিলেও তাঁহার আদর্শ, আশা ও আকাংক্ষা আছে। আমরা যদি তাঁহাকে সত্যি সত্যি ভালবাসি; তাহা হইলে তার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করিতে হইবে। এই দেশের মানুষকে ভালবাসিয়া তিনি নিঃসঙ্গভাবে জীবন বিসর্জন দিয়াছেন। তাই তাঁর আত্মা শান্তিতে নাই। যে পর্যন্ত না দেশে গণতন্ত্র কায়েম হয়, সে পর্যন্ত তাঁহার আত্মা শান্তি লাভ করিবে না। তাই যদি আমরা গণতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত না হই, তাহা হইলে মরহুমের আত্মা আমাদের অভিশাপ দিবে। আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ঐতিহ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান বলেন ঃ আওয়ামী লীগের ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস, দুঃখের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের এমন কোন কর্মী নাই যে নাকি জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে নাই। আজ যে কোন রাজনৈতিক দল যায় বর্তমান সরকার পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হইয়াছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ব্যাপারে ঠকানাে হইয়াছে। এই দাবী আওয়ামী লীগই প্রথম উত্থাপন করে। রাষ্ট্রভাষার দাবী, প্রদেশের স্বায়ত্তশাসনের দাবী, রাজবন্দীদের মুক্তি দাবী, ব্যক্তি-স্বাধীনতার দাবী, সামরিক বাহিনীসহ সকল সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য অংশের দাবী নিয়া আওয়ামী লীগ কর্মীরা ১৯৪৯ সাল হইতে অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া আসিতেছে। এজন্য তাহাদের বহু অত্যাচার, জেল-জুলুম সহ্য করিতে হইয়াছে। কিন্তু আজ পূর্ব পাকিস্তানে যে কোন রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার জন্য ঐসকল দাবী সম্বল করিয়াই মাঠে আসিতে হয়।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উল্লেখযােগ্য ভূমিকার কথা উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিবর রহমান বলেন ঃ হিন্দু-মুসলমান মিলনের ব্যাপারে ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্যই মরহুম সােহরাওয়ার্দীকে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হইতে বহিষ্কার করা হইয়াছিল। তিনি ভারতকে উহার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লােকদের ফিরাইয়া লইতে এবং যাহাতে পাকিস্তান হইতে কোন সংখ্যালঘু চলিয়া না যায় সে ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, উভয় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় কায়েদে আজম ও মহাত্মা গান্ধী তথা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট প্রশ্নে শেখ মুজিবর রহমান বলেন ঃ ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থাকা প্রয়ােজন। তবে উহার পশ্চাতে অবশ্যই সুসংগঠিত কর্মীবাহিনী থাকা প্রয়ােজন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব