You dont have javascript enabled! Please enable it! 1963.12.16 | গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্দোলনকে জয়যুক্ত করার আহবান | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৬৩

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্দোলনকে জয়যুক্ত করার আহবান
পল্টন ময়দানের বিরাট শােক সভায় নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা

(স্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য রবিবার মরহুম জননায়ক জনাব হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বিষয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের উদ্যোগে আউটার ষ্টেডিয়ামে আয়ােজিত এক বিরাট শােকসভায় দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পরলােকগত নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে জনসাধারণের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার হাসেল করার সঙ্কল্প গ্রহণ করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক উজিরে আলা জনাব নুরুল আমিন এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রত্যেক বক্তাই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করার শপথ গ্রহণ করেন।
মাগরেবের নামাজের পরেও সভা কিছুক্ষণ চালু থাকে। সভার শেষে সােহরওয়ার্দীর পল্টন ময়দানের সর্বশেষ টেপরেকর্ড করা বক্তৃতা বাজাইয়া শােনানাে হয়।
জনাব নুরুল আমিন তাহার সভাপতির ভাষণে বলেন যে, আজ আমরা যদি মরহুম নেতার মত অনুযায়ী ঐক্যবদ্ধ হইয়া দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়ােগ না করি, তাহা হইলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সগ্রামে জয় লাভের আশা তিরােহিত হইবে।
তিনি বলেন যে, দেশের জনসাধারণ তাঁহাদের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়া না পাওয়া পর্যন্ত মরহুম নেতার আত্মা শান্তি পাইবে না- অশান্ত হইয়া ঘুরিয়া বেড়াইবে।
জাতীয় পরিষদে বিরােধী দলের সহকারী নেতা জনাব ইউসুফ খাটক বলেন যে, পাকিস্তানের সহিত জনাব হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দীর নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পাকিস্তানে চিরদিন জনাব সােহরওয়ার্দীর নাম সকলেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিবে।
জনাব খাটক আরও বলেন যে, দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়ােজন এখন যত বেশি হইয়া পড়িয়াছে, তেমন আর কোনদিন ছিল না। গণতন্ত্রের বিপথে দেশকে শক্তিশালী করে।
পরিষদ উজিরে আলা এবং আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, যে নেতা পাকিস্তান আন্দোলনের পুরােধা, পাকিস্তানে সুষ্ঠু গণতন্ত্র বিকাশের অক্লান্ত সৈনিক ছিলেন, তাঁহাকে রাজনৈতিক কাজের অযােগ্য ঘােষণা করিয়া জেলে প্রেরণ করা হইয়াছিল। এই মনােকষ্ট জনাব সােহরাওয়ার্দীর স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া পড়ার মূল কারণ। সদাসর্বদা জনগণের মধ্যে যিনি কাজ করিতেন, তাঁহাকে স্বদেশ হইতে বহু দূরে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিতে হইল ইহা অপেক্ষা মর্মান্তিক ব্যাপার আর কি হইতে পারে? সাবেক আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হইলে মরহুমের অতৃপ্ত আত্মা কখনই শান্তি পাইবে না। সাবেক মােছলেম লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান বলেন যে, মরহুম নেতা সারা জীবন জনগণের অধিকার ও সংবাদপত্রের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ভীকভাবে সগ্রাম করিয়া গিয়াছেন। তিনি জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষায় এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মিলনের প্রতীক ছিলেন। জাতীয় পরিষদের বিরােধী দলের বিশিষ্ট সদস্য চৌধুরী ফজলে এলাহী বলেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে তাহার ন্যায় দূরদর্শী, প্রতিভাবান ও দরদী নেতা একজনও নেই। তাঁহার মৃত্যু জাতীয় জীবনকে নেতৃত্বের দিক হইতে একটি বিরাট শূন্যতার মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছে। সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া) বলেন যে, জনাব সােহরওয়ার্দী জেল হইতে বাহির হইয়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলনের সূচনা করেন, সেই আন্দোলনকে অগ্রসর করার দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তাইয়াছে। এই আন্দোলনকে আরও জোরদার করিতে হইবে।
অন্যতম জাতীয় পরিষদ সদস্য মুফতি মাহমুদ বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানে জনাব সােহরওয়ার্দীর শােকে অধীর হইলে চলিবে না, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দুর্জয় সংগ্রাম শুরু করার শপথ গ্রহণ করিতে হইবে।
জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী (মােহন মিয়া) বলেন যে, জনাব সােহরওয়ার্দী জীবন দিয়া যে পথ নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন, সেই পথেই আমাদের অগ্রসর হইয়া অভীষ্ট সিদ্ধ করিতে হইবে।
পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান। বলেন যে, দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত মরহুম নেতার আত্মা যেমন তৃপ্তি হইবে না, তেমনি আমাদেরও কর্তব্য সম্পাদন হইবে না। জনাব মাহমুদ আলী, জনাব জহীরুদ্দিন ও পীর মােহসেন উদ্দিনও (দুদু মিয়া) এই সভায় বক্তৃতা করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব