You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২১শে অক্টৈাবর ১৯৬৩

শেখ মুজিবরের অভিযােগ
গােপালগঞ্জ উপনির্বাচনে ভীতি প্রদর্শন ও সরকারী যন্ত্রের ব্যবহার

(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
“নির্বাচনে গভর্নর ও তাহার কর্মচারিগণ হস্তক্ষেপ করিয়াছেন, একথা গভর্নর অস্বীকার করেন নাই। বরং তিনি ১৯৩৭ সালে পটুয়াখালী নির্বাচনে স্যার নাজিমুদ্দিনের ভূমিকার কথা তুলনা হিসেবে উল্লেখ করেন। এ যেন কাহারও বিরুদ্ধে আদালতে চৌর্যবৃত্তির অভিযােগ আনিলে অনুরূপ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ব্যর্থতার দোহাই দিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করা।” গতকল্য (রবিবার) সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান গােপালগঞ্জ উপনির্বাচনে সরকারী হস্তক্ষেপের অভিযােগ প্রসঙ্গে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। স্বীয় বাসভবনে আহূত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি গােপালগঞ্জ উপনির্বাচনে সরকারী হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন যে, যে মুহূর্তে বিরােধী দল উপনির্বাচনে প্রার্থী দাড় করাইবার সিদ্ধান্ত নেয় তখনই প্রেসিডেন্ট গভর্ণর ও মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অংশ গ্রহণের ক্ষমতা দিয়া একটি নয়া অর্ডিন্যান্স জারী করেন। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, প্রেসিডেন্ট শাসনতন্ত্রের কিছু সংশােধন করিলে সুপ্রীম কোর্ট উহা অবৈধ ঘােষণার পরই জাতীয় পরিষদের কতিপয় আসন শূন্য হইয়া পড়ে। প্রেসিডেন্ট যদি গভর্ণর ও মন্ত্রীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়টিকে সঠিক পন্থা বলিয়া মনে করেনতবে কেন তিনি শাসনতন্ত্রে সেইরূপ বিধান সন্নিবিষ্ট করেন নাই। আর শাসনতন্ত্রে যখন সন্নিবেশিত হয় নাই তখনই বা কেন বিল-এর আকারে এই বিষয়টি জাতীয় পরিষদে পেশ করা হয় নাই এবং আইন হিসাবে গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয় নাই। তাহা হইলে পূর্বাহ্নেই বিরােধীদল কোনরূপ সিদ্ধান্তে পৌছিবার পূর্বে নােটিশ পাইতেন এবং এইরূপ আতর্ক অবস্থার শিকার হইতেন না। আর এই সবই করা হইয়াছিল জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের কয়েকদিন পূর্বে কোন অর্ডিন্যান্সে জরুরী অবস্থার সময়ই জারী করা হইয়া থাকে, জাতীয় পরিষদের অধিকার ও কর্তব্য পালন সংকোচ করার জন্য নহে। যে অর্ডিন্যান্সের বলে সমস্ত বিষয়টাকে পুরােপুরি ও সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত করা হইয়াছে সরকারের পক্ষে তেমন একটি অর্ডিন্যান্স জারী করা কি ন্যায়সঙ্গত হইয়াছে।
প্রচারণায় সরকারী সক্ষমতা ব্যবহার
শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের নিকট আরও বলেন, গভর্ণরের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বলিয়াছেন যে, মন্ত্রীরা যেখানে প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করিতে পারিবেন সেখানে গভর্ণরকে কেন প্রচারণায় নামিতে দেওয়া হইবে না, উহা তিনি বুঝিতে পারেন না আমি তাঁহার প্রতিপাদ্য ও উপসংহার- কোনটার সহিতই একমত নহি। প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে মন্ত্রিগণ প্রেসিডেন্ট-নিয়ােজিত তাহারই উপদেষ্টাবৰ্গ। তাহারা প্রেসিডেন্টের নিকটই দায়ী। অপর দিকে পার্লামেন্টারী পদ্ধতিতে নির্বাচিত মন্ত্রীবর্গ পার্লামেন্টের নিকট দায়ী থাকেন এবং চূড়ান্তভাবে জনসাধারণের কাছে দায়ী। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে গভর্ণর জনসাধারণ কর্তৃক নির্ধারিত এবং জনসাধারণের নিকট দায়ী সুতরাং জনসাধারণের নিকট তাহার আবেদনের অধিকার রহিয়াছে। কিন্তু পাকিস্তানে এই পদ্ধতিতে (প্রেসিডেন্ট পদ্ধতিতে) গভর্ণরও প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত, তাই জনসাধারণের নিকট আবেদনের অধিকারও তাহার থাকিতে পারে না। উহার অন্তর্নিহিত নীতি এই যে-কোন পদে নির্বাচিত হইয়াছেন, তাহারই নির্বাচক মন্ডলীর সম্মুখীন হওয়ার অধিকার রহিয়াছে। কারণ তিনি তাহাদের নিকট হইতেই ক্ষমতার অধিকারী হইয়াছেন। কিন্তু যিনি শাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত তিনি শাসন কর্তৃপক্ষের নিকটই দায়ী থাকিবেন। সরকারী কর্মচারীদের রাজনীতি হইতে দূরে থাকার জন্য যেখানে সরকারী সার্কুলার দেওয়া হইয়াছে সেখানে মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট, ডেপুটি কমিশনার ও পুলিশ কর্মচারিগণকে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করিতে দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে সরকারী নির্দেশটাই অর্থহীন হইয়া পড়িয়াছে।
শেখ মজিবর রহমান বলেন যে, গােপালগঞ্জে ভােটারদের বিশেষভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভােটারদের ভীতি প্রদর্শন করিয়া ভােট আদায় করা হইয়াছে।
সংখ্যাসাম্যের সমাধি রচিত হইয়াছে
শেখ মজিবর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে অতঃপর উভয় অংশের মধ্যে সংখ্যাসাম্যের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পূর্বাপর ভূমিকা এবং তদানীন্তন গণপরিষদের সদস্য হিসাবে জনাব আবদুল মােনায়েম খান উভয় অংশের মধ্যে বৈষম্য দৃষ্টিতে কি ভূমিকা পালন করিয়াছেন তাহা বর্ণনা করেন। তিনি ইহাও বলেন, এখন পুনরায় আবার সংখ্যাসংখ্যের মূলে কুঠারাঘাত করা। হইয়াছে, তাই ন্যায্যভাবেই আমরা এখন প্রতিক্ষেত্রে শতকরা ৫৬ ভাগ দাবী করিতে পারি।
উদাহরণ দিয়া তিনি বলেন যে, করাচী হইতে ফেডারেল রাজধানী অপসারণ এখানকার করদাতাদের প্রতি অবিচারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রকৃতপক্ষে পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশে পরিণত করা হইয়াছে।
জমির খাজনা ও কৃষক সমাজ
জনাব শেখ মুজিবর রহমান বিস্ময় প্রকাশ করিয়া বলেন যে, শিল্পে নির্দিষ্টকালের জন্য আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা রহিয়াছে। কিন্তু কৃষি ব্যবস্থা লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও তাহাদের উপর ট্যাক্স ধরা হয়। তিনি প্রস্তাবে করেন যে, ৩০ বিঘা অথবা অনুর্ধ জমি যে পরিবারের আছে তাহাদের জমির খাজনা রেহাই দিতে হইবে। তিনি ওয়াপদার উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গে বলেন, ইহারা যেখানে সেখানে খাল কাটিয়াছেন সেই খালের উভয় পার্শ্বের একর প্রতি জমির উপর ২০ বৎসরের জন্য প্রতি বৎসর ৭৫ টাকা হারে উন্নয়ন ট্যাক্স ধরা হইয়াছে। তিনি ইহার অবসান দাবী করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!