আজাদ
৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৩
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড়
বিশ্বের কোন স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার নজির নাই
জাতীয় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক অবিলম্বে সংশােধিত প্রেস অর্ডিন্যান্স বাতেল করার দাবী
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
সরকার কর্তৃক সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী সংশােধিত প্রেস অর্ডিন্যান্স জারী করায় দেশের সর্বত্র গণমানুষে প্রচণ্ড বিক্ষোভের সঞ্চার হইয়াছে। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ এই জঘন্য গণতন্ত্রবিরােধী ও বাকস্বাধীনতা হরণকারী অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিয়া অবিলম্বে উহার প্রত্যাহার দাবী করিতেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের দশজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা গতকল্য বুধবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন যে, পাকিস্তানের সংবাদপত্রসমূহের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য সরকার যে নজীরবিহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন, তাহাতে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা আতঙ্কিত হইয়া পড়িয়াছি।
তাঁহারা বলেন যে, বর্তমানের এই ব্যবস্থা সামরিক শাসনামলেও কল্পনা করা যায় নাই। নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত কঠোর ভাষায় এই ব্যবস্থার তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন। করিয়া এহেন একনায়কত্ববাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবিচলিতভাবে প্রতিবাদমুখর হইয়া উঠিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। উক্ত বিবৃতিদাতাগণ হইতেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বিশিষ্ট নেতা জনাব নূরুল আমীন, জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব হামিদুল হক চৌধুরী, শেখ মুজিবর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, জনাব মাহমুদ আলী, জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরী, সৈয়দ আজিজুল হক, জনাব আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও জনাব মােহাম্মদ সােলায়মান।
তাঁহারা বলেন যে, দুনিয়ার কোন স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এইভাবে খর্ব করার কথা কল্পনাও করা যায় না। সংবাদপত্রের স্বাভাবিক কার্যাবলী পরিচালনা অসম্ভব করিয়া তুলিয়া সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশে স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া উঠাকেই অসম্ভব করিয়া তুলিতেছেন। আমরা এহেন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোরতম ভাষায় আমাদের প্রতিবাদ জ্ঞাপন করিতেছি এবং এই সমূহবাদী স্বৈরতন্ত্রী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দ্বিধাহীনভাবে প্রতিবাদমুখর হইয়া উঠিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাইতেছি।
পরিশেষে তাঁহারা সংবাদপত্রের প্রতি বাস্তব ও বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ ব্যবহার অবলম্বনে পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করিতে বিশ্বের জনমতের প্রতি আবেদন জানাইতে অনুরােধ করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব