You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৬৩

বিভিন্ন স্থানে জনসমুদ্রের গর্জন ও মৌলিক অধিকার ফিরাইয়া দাওঃ
রাজবন্দীদের মুক্তি চাই ও প্রেস অর্ডিন্যান্স বাতিল কর

খুলনা, ৭ই সেপ্টেম্বর (নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত)। গতকল্য অপরাহ্নে খুলনা পৌরসভার ময়দানে অনুষ্ঠিত ২৫ হাজার লােকের এক মহতী জনসভায় অবিলম্বে বিনাশর্তে সকল রাজবন্দীর মুক্তি, রাজনৈতিক কর্মীদের উপর হইতে গ্রেফতারী পরওয়ানা প্রত্যাহার, সম্প্রতি প্রবর্তিত সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বকারী অর্ডিন্যান্স বাতিল এবং শাসনতন্ত্রে জনগণের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারসহ দেশে গণতন্ত্রের পুনঃ প্রবর্তনের সর্বসম্মত দাবী জানানাে হয়। প্রদেশব্যাপী ‘দাবী দিবস উদযাপনের আহ্বানে সাড়া দিয়া এই সর্বদলীয় জনসভার আয়ােজন করা হয়। খুলনা পুনরুজ্জীবন বিরােধী মুসলিম লীগ নেতা জনাব আফসার উদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় বক্তৃতা করেন অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক নেতা শেখ মুজিবর রহমান, খুলনা জেলায় ন্যাপ-নেতা এডভােকেট আব্দুল জব্বার, এডভােকেট আব্দুল জলিল, এডভােকেট মনসুর আলী, খুলনা জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনে বিরােধী দলের প্রার্থী জনাব মমিন উদ্দিন আহমদ, মালিক আজহার উদ্দিন, জনাব হামিদুর রহমান গেলেদার এবং আরও অনেকে।
প্রত্যেক নেতাই তাহাদের বক্তৃতায় রাজবন্দীদের মুক্তি দাবী বারংবার উচ্চারণ করেন। তাহারা বলেন যে, রাজবন্দীরা সকলেই দেশপ্রেমিক। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের নিকট হইতে দেশের স্বাধীনতা আদায় এবং অর্থনৈতিক বন্ধনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করিয়া জাতির সেবা করার ব্যাপারে তাহাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রহিয়াছে। কিন্তু সরকার এইসব মহানুভব স্বার্থত্যাগী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়া মাসের পর মাস কারাগারে পচাইতেছেন। বক্তাগণ সরকারের এই কাৰ্য্যকে ক্ষমাহীন অপরাধ বলিয়া অভিহিত করেন।
সম্প্রতি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করিয়া এক অর্ডিন্যান্স জারি করা হইয়াছে, তজ্জন্য বক্তাগণ সরকারের নিন্দা করেন। তাহারা বলেন যে, বিশ্বের কোন দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই অর্ডিন্যান্স সমগ্রভাবে জাতিকে গলা টিপিয়া হত্যার চেষ্টা করা হইয়াছে, জনগণের উপর নির্যাতন নিপীড়ন এবং দেশের অবর্ণনীয় দুর্ণীতি চাপা দেওয়ার জন্যই সরকার সংবাদপত্রের উপর এই ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন বলিয়া তাহারা ঘােষণা করেন। তাঁহারা আরও বলেন যে, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম এবং দেশকে স্বাধীন বিশ্বের আলােক হইতে অন্ধকারাচ্ছন্ন করিয়া রাখার জন্যই সরকার সংবাদপত্রের উপর এই ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং দেশের স্বাধীনতার অপরিহার্য শর্তস্বরূপ। সংবাদ পত্রের এই স্বাধীনতা খর্ব করার যে কোন ব্যবস্থা দেশকে ধ্বংসের পথে লইয়া লইবে।
বক্তাগণ বলেন যে, “দেশ একনায়ত্ববাদী সরকারের শাসনে শাসিত হইতেছে। এই একনায়কত্ববাদি সরকারের মুকাবিলা জুলুমবাজির অবসান এবং দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা কল্পে জনগণকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন চালাইতে হইবে। সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে শেখ মুজিবর রহমান এক ব্যক্তির শাসনের “সরকার ও তাহার পকেট শাসনতন্ত্রের তীব্র ভাষায় সমালােচনা করেন। তিনি বর্তমান শাসনতন্ত্রকে অন্যান্য কবলার ন্যায় একটি রেজিষ্ট্রীকৃত দলিল বলিয়া আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, বর্তমান শাসনতন্ত্রে এমনকি জনগণের মৌলিক অধিকার পর্যন্ত স্থান পায় নাই।
সভায় রাজবন্দীদের মুক্তি, প্রেস অর্ডিন্যান্স বাতিল, রাজনৈতিক কর্মীদের উপর হইতে গ্রেফতারী পরওয়ানা প্রত্যাহার, গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন, নগর শুল্ক বাতিল ও মঙ্গলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তরিত করেন প্রভৃতি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!