You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২৪শে এপ্রিল ১৯৬৩

ওয়াহিদুজ্জামানের প্রতি শেখ মুজিবের চ্যালেঞ্জ

ঢাকা, ২৩শে এপ্রিল। সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন যে, লাহাের বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সহিত আলােচনা প্রসঙ্গে জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের যে বক্তব্য গতকল্যকার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে, তাহার প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে।
তিনি বলেন, জনমত সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর হইতে জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের লম্বা লম্বা কথা এতদিন পর্যন্ত আমি উপেক্ষা করিয়া আসিয়াছি। কিন্তু যখন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত সংবাদপত্র বিশেষ করিয়া দৈনিক ইত্তেফাক ও পাকিস্তান অবজারভারের উপর বেপরােয়া আক্রমণের সীমায় পৌছিয়াছেন এবং তাঁহার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় তাহার মনােনীত প্রার্থী যেকোন ব্যক্তিকে পরাজিত করিয়া উপনির্বাচনে জয়লাভ করিবে এই কথা বলিয়া পশ্চিম পাকিস্তানী জনসাধারণকে বােকা বানাইবার চেষ্টা করিতেছেন, তখন আর এক মুহূর্তও চুপ করিয়া থাকা যায় না। পাকিস্তানের জনসাধারণের নিকট ইহা নিশ্চয়ই অজানা নয় যে, ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জনাব ওয়াহিদুজ্জামান আমার সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়া ১০ হাজার ভােটের ব্যবধানে পরাজিত হন। পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণের জানা প্রয়ােজন যে, গত তথাকথিত নির্বাচনে যেখানে কেবলমাত্র বুনিয়াদী গণতন্ত্রীরাই ভােটার ছিল, আমি নিরাপত্তা বন্দী হিসেবে কয়েক বৎসর কারান্তরালে থাকায় এই নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযােগ্য ছিলাম এবং নির্বাচনী কেন্দ্রের অপর রাজনৈতিক নেতা জনাব আবদুস সালাম খান এবডাে আইন অনুযায়ী অযােগ্য ঘােষিত হইয়াছিলেন, তাঁহার সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কেহই ছিল না ইহা ছাড়া গত নির্বাচনের সময় আমি নিরাপত্তা আইনে কারাগারে আটক ছিলাম। তদুপরি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীবৃন্দ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার অধিকতর শ্রেয়ঃ মনে করে ফলে ইহা সম্পূর্ণরূপে সীমাবদ্ধ ভােটাধিকার ও ব্যক্তিভিত্তিক নির্বাচন হিসাবেই অনুষ্ঠিত জানান হয়। ইহা খুবই বিস্ময়কর যে, জনাব জামান উক্ত পদত্যাগের সংবাদ পরে অস্বীকার করিয়াছেন।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, যদি জনাব জামান তাঁহার জনপ্রিয়তার ব্যাপারে গর্বিত হন তবে আমি তাঁহাকে চ্যালেঞ্জ জানাইতেছি। তিনি আসুন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত যে কোন নির্বাচনে তাহার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের সুযােগ সুবিধা পূর্ণ মর্যাদায় থাকিয়া তিনি আমার সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন ইনশাল্লাহ আমি তাঁহাকে আরও অধিক ভােটের ব্যবধানে পরাজিত করিব। প্রেসিডেন্ট যদি আমার উপর হইতে বাধা নিষেধ প্রত্যাহার করেন তবে আমি আরও একধাপ অগ্রসর হইতে পারি। যদিও আমি সীমাবদ্ধ ভােটাধিকার ব্যবস্থার বিরােধী তা সত্বেও জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের চ্যালেঞ্জের মােকাবেলা করিতে আমি বর্তমান ভােটাধিকারেও তাঁহার সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে প্রস্তুত। তাহা হইলে তিনি মন্ত্রিত্বের পদ হইতে পদত্যাগ করিয়া মাঠে আসিতেছেন না কেন? আমি নিশ্চিত যে, তাহার কখনও এই ধরনের সৎসাহস ছিল না ও নাই এবং তিনি ইহাকে এড়াইয়া যাইবেন।
এমতাবস্থায় জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের ফাঁকা বুলিতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমি আমার পশ্চিম পাকিস্তানী ভাইদের অনুরােধ জানাইতেছি। আমি জানি, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ তাহার কথায় না হাসিয়া পারিবেন না, কারণ তাঁহার ক্ষমতার দৌড় ও অতীত কাৰ্যকলাপ জনসাধারণ জানেন।
জনাব রহমান বলেন, “দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ ও পাকিস্তান অবজারভারের প্রতি সরকারী নীতির পক্ষে জনাব ওয়াহিদুজ্জামানের “সাফাই” সম্পর্কে আরও কয়েকটি কথা সংযােজন করিতে চাই। ইহা খুবই আনন্দের ব্যাপার যে, তিনি স্বিকার করিয়াছেন যে, এই পত্রিকাগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। কিন্তু এই সঙ্গে তিনি বলিয়াছেন যে, এই গুলি মতামত প্রকাশের পত্রিকা। আমি তাহাকে বলিতে চাই যে, প্রত্যেকটি সংবাদপত্রই একটি মতামত প্রকাশের পত্রিকাও বটে এবং সরকারী বিজ্ঞাপনসমূহ পত্রিকার সাকুলেশনের ভিত্তিতে বণ্টন করা উচিত। কারণ সরকারী অর্থ কাহারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!