You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২৩শে জুন ১৯৬৩

শেখ মুজিবের বিবৃতি
গান্ধারা ইণ্ডাষ্ট্রিজ সম্পর্কে ট্রাইব্যুনাল দাবী

সাবেক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন যে, “জাতীয় পরিষদে সম্প্রতি আলােচিত” এক তথ্যে প্রত্যেকটি চিন্তাশীল পাকিস্তানী হতবাক ও স্তম্ভিত হইয়াছেন। সামরিক শাসনামলে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ‘স্বজনপ্রীতি, ‘দুর্নীতি’ ‘ব্যক্তিস্বার্থ ও ‘মুনাফা অর্জনের’, অভিযােগে মামলা দায়ের, গালাগালি ও কুৎসা রটনা করা হইয়াছে।
সামরিক সরকার দেশের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিকদের ‘এবডাে’ ও ‘পােডাে’ আইনবলে রাজনীতির অযােগ্য ঘােষণা করিয়াছেন- ‘আয়ের তুলনায় অধিক। সম্পত্তি রাখার জন্য তাঁহাদের গ্রেফতার করিয়াছেন। দুর্নীতি ও গর্হিত কাৰ্য্যাবলীর দায়ে মামলা দায়ের করিয়াছেন এবং নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করিয়াছেন। কতিপয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ঠুনকো মামলা দায়ের করিয়াছেন; কিন্তু আদালত সকলকেই বেকসুর খালাস দিয়াছেন। কিন্তু অতীতে কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা কোন রাজনীতিকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির এইরূপ তথ্য প্রকাশিত হয় নাই। গান্ধারা ইণ্ডাষ্ট্রিজ লিঃ সম্পর্কে যে তথ্য প্রকাশিত হইয়াছে পদত্যাগ করিতে বলার জন্য যে কোন গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে ইহাই যথেষ্ট কারণ।
জনাব ফজলুল কাদির চৌধুরী ও জনাব মােহাম্মদ শােয়েব ইহার স্বপক্ষে যাহা বলিয়াছেন, তাহাতে বিষয়টির অন্তর্নিহিত দুর্বলতাই প্রকাশিত হইয়াছে। একথা কেহই বিশ্বাস করিবেন না যে, ক্ষমতা দখলের সময়ে যাহার পুত্র সামরিক বিভাগের একজন ক্যাপ্টেন মাত্র ছিলেন এবং যাহার পুত্রের শ্বশুর লেফটেন্যান্ট জেনারেল হইয়া অবসর গ্রহণ করেন, তিনি রাতারাতি একজন শিল্পপতি বনিয়া গান্ধারা ইণ্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এর মত একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও ‘জেনারেল মােটরস’ খরিদ করিতে পারেন।
জনসাধারণের একথা জিজ্ঞাসা করার অধিকার আছে যে, কর্ণফুলী পেপার মিলস কেন দাউদ কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হইল? কাহার প্ররােচনায় ইহা করা হইল? প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের পুত্র কি উক্ত কর্পোরেশনের একজন ডিরেক্টর? একথা কি সত্য যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের পরিবারে সদস্যগণ পেট্রোকেমিক্যাল ইণ্ডাষ্ট্রিজ ও হােটেল মােট্রেপেপালের স্বার্থ নিয়ন্ত্রণ করিতেছেন? পাকিস্তানী সংবাদপত্র ব্যতীত বিদেশী পত্র-পত্রিকায়ও প্রেসিডেন্ট সম্পর্কিত নানা দুঃখজনক সংবাদ প্রকাশিত হইতেছে। অভিযােগগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট ও তাহার সরকারকে পদত্যাগ করিয়া সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারপতিদের সমবায়ে গঠিত একটি ট্রাইবুনালের সম্মুখে তাহাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযােগের মােকাবিলা করার জন্য সরকারের প্রতি জাতির আহ্বান জানাইবার অধিকার রহিয়াছে, যাহাতে বিষয়গুলি পরিস্কার হইয়া যায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয় সদস্য হিসাবে তিনি এইরূপ ট্রাইবুনালের নিকট আত্মসমর্পন করিতে ইতস্ততঃ করিবেন না।
শেখ মুজিবুর তাঁহার বিবৃতিতে আর বলেন, প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা-বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মর্যাদা হ্রাস পাইয়াছে। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান যখন দুর্ভিক্ষ, বেকার সমস্যা, প্লাবন, ঘুর্ণি প্রভৃতি দূর্যোগে বিপর্যস্ত তখন প্রেসিডেন্টের সরকার ইসলামাবাদের উন্নতির জন্য ১০ কোটি টাকা ব্যয় করিতেছেন। দুই প্রদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বৈষম্য যখন বাড়িয়াই চলিয়াছে পূর্ব পাকিস্তানীরা যখন প্রাদেশিক স্বায়ত্ব শাসন দাবী করিতেছে তখন পূর্ব পাকিস্তানীদের এই সকল ন্যায্য দাবী ঢাকিবার জন্য নানা প্রকার আন্তর্জাতিক বিষয়ের অবতারণা করিতে চেষ্টা করিতেছেন। আমাদের দাবী অতীব সহজ। আমরা শুধু আমাদের আয় দ্বারা দেশ উন্নত করিতে চাই, যাহাতে লক্ষ লক্ষ লােক ঘুণি-অনাহার-প্লাবনে মারা না যাইতে পারে। আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কাজ করার অধিকারও আমাদের আছে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!