You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
১৮ই মার্চ ১৯৬৩

গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র কায়েমের জন্য নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের আহ্বান
ফেডারেল পদ্ধতির সরকার ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবীঃ পল্টনের
বিশাল জনসমাবেশের প্রস্তাব

(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গতকল্য (রবিবার) ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিপুল সংখ্যক জনতার সমাবেশে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট জনসাধারণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবী জানায়।
গতকল্য পল্টন ময়দানে সঙ্কল্পবদ্ধ জনতা পুনরায় প্রদেশবাসীর রাজনৈতিক সচেতনতাকে প্রমাণিত করিয়াছে। মুহুর্মুহু ধ্বনির মাধ্যমে তাঁহারা ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন যে, গণতন্ত্র ফিরাইয়া আনার সংগ্রামে এ দেশের জনসাধারণ যে কোন মূল্য দিতে প্রস্তুত। এই মহতী জনসভা আর একবার প্রমাণ করিয়াছে যে, সমগ্র দেশবাসী আজ নিশ্চিতভাবেই অকুণ্ঠচিত্তে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পশ্চাতে সমবেত হইয়াছে।
গতকল্য অপরাহে জাতীয় ফ্রন্ট নেতা জনাব নূরুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিপুল সংখ্যক জনতার সম্মুখে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট দাবী জানায়- প্রাপ্ত বয়স্ক ভােটাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করিতে হইবে। প্রদেশসমূহকে সর্বাধিক স্বায়ত্ব শাসন দান করিয়া ফেডারেল পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার দাবী জানাইয়া বলা হয় যে, শাসনতন্ত্র জনসাধারণের স্বার্বভৌমত্বকে অবশ্যই স্বীকার করিতে হইবে।
জাতীয় ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ জনসাধারণকে দাবী আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানান। তাঁহারা সুদৃঢ় কণ্ঠে ঘােষণা করেন, যদি জনতা সংঘবদ্ধভাবে নিজেদের হৃত স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন তাহা হইলে তাহাদের দাবী উপেক্ষা করার সামর্থ্য দুনিয়ার কাহারও নাই।
জনতার মুহুর্মুহু ধ্বনির মধ্যে বক্তৃতা দানকালে জাতীয় নেতৃবৃন্দ দেশের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করিয়া একতার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করেন। তাঁহারা বলেন, বর্তমান শাসনতন্ত্রে জাতীয় পরিষদকে কোন অধিকারই দেওয়া হয় নাই। এখানে প্রবর্তন করা হইয়াছে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হইলে তাহা আর যাহাই হউক না কেন গণতন্ত্র হয় না বলিয়া উল্লেখ করিয়া বলা হয় যে, আজিকার সংগ্রাম পূর্ণগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। উদ্বেল জনতা বার বার রাজবন্দীদের মুক্তি চাই, জাতীয় ফ্রন্ট ‘জিন্দাবাদ’ ধ্বনীতে পল্টন ময়দানে প্রকম্পিত করিয়া তুলে।
সভাপতির ভাষণে জনাব নূরুল আমীন বলেন, অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য আজ সংঘবদ্ধ হইতে হইবে। তিনি বলেন, এই সংগ্রাম প্রতিরােধের উদ্দেশ্যে প্রচারণা করা হয় আমরা প্রাদেশিকতা করি। কিন্তু উক্ত প্রচারণা সর্ব মিথ্যা সম্পদ। বণ্টন করিতে যাইয়া যাহারা এক প্রদেশকে শতকরা ৮১ ভাগ এবং অন্য প্রদেশকে ১০ ভাগ প্রদান করে প্রাদেশিকতা তাহারাই করিয়া থাকে।
জাতীয় ফ্রন্টের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবর রহমান চ্যালেঞ্জ প্রদান করিয়া বলেন যে, যদি বর্তমান সরকার দেশবাসীর শতকরা দশজন মানুষের ভােটও লাভ করিতে পারে তাহা হইলে জাতীয় ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ তাহাদের নেতৃত্ব মানিয়া লইতে প্রস্তুত। …

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!