You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
১৮ই জানুয়ারি ১৯৬৩

পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক গ্রেফতার ও নির্যাতনে
গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সদিচ্ছা অসত্য প্রমাণিত হইয়াছে
– শেখ মুজিবর

জাতীয় পরিষদের বিরােধী দলের ডেপুটি নেতা এবং সাবেক ‘ন্যাপ’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জনাব মসিহুর রহমানসহ প্রদেশে ব্যাপক ধর-পাকড়, বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনমূলক নীতির আশ্রয় গ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্যায়ভাবে বন্ধ ঘােষণা করার প্রতিবাদে সাবেক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (বৃহস্পতিবার) সংবাদপত্রে প্রকাশার্থে এক বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “শাসক চক্র জনসাধারণকে পুনরায় হতাশ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানের উপর অত্যাচারের ষ্টিম রােলার চালাইতে শুরু করিয়াছে। জাতীয় পরিষদের বিরােধী দলের ডেপুটি নেতা জনাব মসিহুর রহমান, জনৈক ছাত্রনেতা শাহ মােয়াজ্জম হােসেন ও বহু প্রাক্তন পরিষদ সদস্য ও নেতৃবৃন্দ নির্বিশেষে গ্রেফতার শুরু করা হইয়াছে। এবং এখনও ছাত্রসহ বহু ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা ঝুলিতেছে। এবডাে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অর্ডিন্যান্স জারীর অব্যবহিত পরেই এই ধরনের নির্যাতনমূলক ব্যবস্থার তাৎপর্য উপলব্ধি করিতে কষ্ট হয় না। জনাব মুজিবর রহমান বিবৃতিতে আরও বলেন, “এই সমস্ত নিৰ্যাতনের খবর এবং রংপুরে ভাড়াটিয়া গুণ্ডাদের গুণ্ডামির কাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানী সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয় নাই বলিলেই চলে। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত না হওয়াও সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।”
রাজনীতির ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানেন যে, জনসমর্থনবিহীন কোন গােষ্ঠী শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠীত থাকার জন্য একটা অন্যায় নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আরও অসংখ্য অন্যায় নীতি গ্রহণ করিয়া থাকেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্যায়কারী খড়কুটার মতই ভাসিয়া যায়। দেশে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্টের সদিচ্ছা আর একবার অসত্য প্রমাণিত হইয়াছে।” জনাব মুজিবর রহমান অতঃপর বলেন যে, প্রেসিডেন্টের বর্তমান রাজনৈতিক সহচরগণ তাঁহাকে যে কুপরামর্শ দিয়া থাকেন, তাহার ফল কখনই শুভ হইতে পারে না।
বিবৃতির এক অংশে জনাব মুজিবর রহমান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক কর্মীগণ অতীতে বহুক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিপদের অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছে এবং সাহসের সহিত তাহার মােকাবিলা করিয়াছে। শেষ পর্যন্ত সেই সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীলরা নিশ্চিহ্ন হইয়া গিয়াছে। বিবৃতির উপসংহারে জনাব রহমান এইরূপ আশা পােষণ করেন যে, সরকার সমস্ত নিৰ্যাতনমূলক আইন ও অর্ডিন্যান্স বাতিল, রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত সকল গ্রেফতারী পরােয়ানা প্রত্যাহার ও সকল ধৃত ব্যক্তিদের মুক্তিদান করিবেন। এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করিবেন ও একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের পথ সুগম করিয়া তুলিবেন। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, প্রেসিডেন্ট এবং তাহার অনুচরগণ বর্তমান পরিস্থিতি উপলব্ধি করিবেন এবং অনুসৃত নীতি পুনর্বিবেচনা করিবেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!