You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩

ডঃ মাহমুদ হােসেনের পদত্যাগ প্রশ্নে নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ

ঢাকা, ১৩ই ফেব্রুয়ারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডক্টর মাহমুদ হােসেনের পদত্যাগ প্রসঙ্গে অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহমুদ আলী সংবাদপত্রে প্রকাশার্থ এক বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন।
বিবৃতিতে জনাব মাহমুদ আলী বলেন, “-একথা সুস্পষ্ট যে, চাপের ফলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্বীয় দফতর হইতে পদত্যাগ করিয়াছেন। যেভাবে তাঁহাকে অপসারিত করা হইয়াছে, উহাতে সৎ বুদ্ধিসম্পন্ন ও সংস্কৃতিমনা প্রতিটি মানুষই মর্মাহত হইবেন।
ডক্টর মাহমুদ হােসেন তাহার দুই বৎসরের কার্যক্রমের মধ্যে শুধুমাত্র সাধারণ ছাত্রদের নিকট প্রিয়পাত্রে পরিণত হন নাই, উপরন্তু সাহসিকতার সঙ্গে শিক্ষার সর্বোচ্চ বেদীর মর্যাদা উচ্চে তুলিয়া ধরিবার ব্যাপারে জনসাধারণের শ্রদ্ধা অর্জন করিয়াছেন।
আমার মতে, বর্তমান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতার উপরে অনাহূত হস্তক্ষেপ করিয়া শিক্ষার পবিত্র উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে বৃহত্তম অমঙ্গল সাধন করিবেন।
আজিকার ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গকে আমি স্মরণ করাইয়া দিতে চাই, এই মুহূর্তের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য দেশের ভবিষ্যৎকে বিকাইয়া দেওয়ার প্রচেষ্টা হইতে বিরত থাকুন।”
শেখ মুজিবর
অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “বর্তমান শাসকচক্র শুধুমাত্র দেশের প্রশাসনিক ব্যাপারেই নয়- এমন কি শিক্ষার ক্ষেত্রেও যে কি রূপ দমননীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের আশ্রয় লয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বাধ্যতামূলক পদত্যাগ তাহার আর একটি চলন্ত দৃষ্টান্ত।
ইহার ফলে প্রদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা নষ্ট হইয়াছে। সম্ভাব্য সকল রকম অভাব হইতে জানা যায় যে, সকল ছাত্রের বিরুদ্ধে বর্তমানেই আইনগত কাৰ্য্যক্রম ঝুলিতেছে, তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকার এবং ঈদের পরে বিশ্ববিদ্যালয় খুলিলে নাকি আবার তাহা বন্ধ করিয়া দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করায় ডঃ মাহমুদ হােসেনকে পদত্যাগ করিতে বাধ্য করা হইয়াছে। দেশের শাসন পরিচালনা ও সুগভীর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন শিক্ষাবিদ হিসাবে নিশ্চয়ই তিনি ছাত্রদের পক্ষে কোন জাতীয় ব্যবস্থা মঙ্গলকর আর কোনটিই বা অমঙ্গলকর তাহা নিশ্চয়ই তিনি ভালভাবে বিচার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে এমন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যাহার পবিত্রতা নষ্ট করা উচিত নয় এবং পৃথিবীর সর্বত্র গণতান্ত্রিক সরকারসমূহ যাহার প্রতি সর্বতাে ভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিয়া থাকে, সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের কি উচিত নয় তাঁর অধস্তনদের নগ্ন হস্তক্ষেপ ও দমননীতির ব্যাপারটি খতাইয়া দেখা?
জনসাধারণ নিশ্চয়ই একথা বিচার করিতে পারে যে, আমাদের বর্তমান শাসনতন্ত্র কিভাবে ছাত্রদের শিক্ষার বিষয়টি লইয়া ছিনিমিনি খেলিতেছে। সাম্প্রতিককালে প্রদেশের সর্বত্র একের পর এক অব্যাহত গতিতে ছাত্রদিগকে গ্রেফতার করা ইহার আর একটি প্রমাণ।
এমতাবস্থায় রাজনীতিকরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্ধারের জন্য ছাত্র সমাজকে কাজে লাগাইতেছে- এই বলিয়া তাহাদের গলাবাজী কি মূর্খতা সুলভ দেখায় না? উপরােক্ত ঘটনা কি এই কথাই প্রমাণ করে না যে, আসলে বর্তমান শাসন কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের নিজেদের কাজে লাগাইতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। বরঞ্চ ছাত্রদিগকে তাহারা শুধু মাত্র স্বার্থোদ্ধারের জন্য কাজ করিয়া যাইতে বাধ্য করিতেছে? ইহা ছাড়া আর কিভাবেই ভাইস চ্যান্সেলরের পদত্যাগের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়?”

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!