সংবাদ
১লা মার্চ ১৯৬৩
গণতন্ত্রের পুনঃ প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক অধিকার আদায়কল্পে
পূর্ব পাকিস্তানে সংগ্রামী জনগণের জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত
আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ রূপ প্রদানের জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সফল বাস্তবায়ন
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ ফিরাইয়া আনিবার মহান সংগ্রাম পরিচালনার উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানে সকল দল ও মতের প্রতিনিধিদের সম্মিলিত সংস্থা হিসাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হইয়াছে। পাকিস্তানের আজিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের পুনরুজ্জীবন বিরােধী চারটি সাবেক রাজনৈতিক দল প্রত্যেকের সমান সংখ্যক প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কমিটি গঠিত হইয়াছে। জনাব নূরুল আমীন কমিটির আহবায়ক নিযুক্ত হইয়াছেন। উক্ত কমিটি পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটি হিসাবে কাজ করিবে বলিয়া মনে হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্য হইতেছেন ও সাবেক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১। হাজি মােহাম্মদ দানেশ ২। জনাব মাহমুদ আলী সাবেক আওয়ামী লীগ ৩। শেখ মুজিবর রহমান ৪। মওলানা আবদুর রশীদ তর্ক বাগীশ সাবেক কৃষক শ্রমিক পার্টি ৫। জনাব হামিদুল হক চৌধুরী ৬। জনাব মােহাম্মদ সােলায়মান সাবেক মুসলিম লীগ ৭। শাহ আজিজুর রহমান এবং ৮। মওলানা পীর মহসীন উদ্দিন।
শাহ আজিজুর রহমান ফ্রন্টের কমিটিতে জনাব নূরুল আমীনের অনুসারী সাবেক মুসলিম লীগ গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। নেজামে ইসলাম পার্টি পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় এবং তিনি উহার সহিত কোন সংশ্রব রক্ষা না করায় ব্যক্তি হিসাবেই পীর দুদু মিয়া কমিটিতে আসন লাভ করিয়াছেন বলিয়া মনে হইতেছে।
কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সাবেক পূর্ব পাকিস্তান পরিষদে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পার্লামেন্টারী দলের নেতা হাজি মােহাম্মদ দানেশ বর্তমানে তথাকথিত জননিরাপত্তা আইনে রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে আটক রহিয়াছেন।
গতকল্য (বৃহস্পতিবার) অপরাহ সাবেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এক সভায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট কমিটি গঠিত হয় এবং উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুসারেই কমিটি গঠনের কথা ঘােষণা করা হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ। দীর্ঘদিন ধরিয়া বিভিন্ন মহল জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের গঠন ও সাবেক রাজনৈতিক দলসমূহের নেতৃবৃন্দের ঐক্য সম্পর্কে যে স্বকপােলকল্পিত গবেষণা চালাইতে ছিলেন, গতকল্যকার ঘােষণা তাহার অবসান ঘটাইল বলিয়া আশা করা যায়। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন প্রচেষ্টার সম্ভাব্য ব্যর্থতার উপর যাহারা তাঁহাদের রাজনৈতিক দাবার ঘুটি সাজাইতে ছিলেন। এক্ষণে নিঃসন্দেহে তাহাদিগকে দুর্বিপাকে পড়িতে হইতেছে।
জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের ঘােষণার সাথে সাথে কমিটির পক্ষ হইতে ঘােষণা করা হইয়াছে যে, অতঃপর কেন্দ্রীয় কমিটির গঠন প্রণালী অনুসারে ফ্রন্টে যােগদানকারী সাবেক রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জেলা, মহকুমা এবং ইউনিয়ন ভিত্তিতে কমিটি গঠিত হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব