You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
৯ই জানুয়ারি ১৯৬৩

নয়া অর্ডিন্যান্স দুইটির বিরুদ্ধে নেতৃবৃন্দের তীব্র প্রতিবাদ
‘দেশবাসীর মৌলিক অধিকার আরও অধিক পরিমাণে খর্ব করা হইয়াছে’

(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
রাজনৈতিক দল আইন সংশােধন ও এবডােপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অধিকার আরও খৰ্ব্ব ও নিয়ন্ত্রিত করিয়া গত ৭ই জানুয়ারী যে দুইটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হইয়াছে, পূর্ব পাকিস্তানে তাহার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হইতেছে।
নয় নেতার অন্যতম শেখ মুজিবর রহমান এবং জনাব মাহমুদ আলি ও জাতীয় পরিষদ সদস্য মেজর আফসার উদ্দীন এবং খাজা নাজিমুদ্দিন সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে অর্ডিন্যান্স দুইটিকে “উদ্ভট আইন” বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। অর্ডিন্যান্স দুইটি শুধুমাত্র এবডােভুক্ত রাজনৈতিক নেতাদেরই নয় বরং সমগ্র পাকিস্তানের সাড়ে নয় কোটি মানুষের মৌলিক অধিকারকেই আরও অধিক পরিমাণে খর্ব করিয়াছে বলিয়া তাঁহারা উল্লেখ করেন।
মাহমুদ আলী
গতকল্য (মঙ্গলবার) সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহমুদ আলী এক বিবৃতিতে বলেন যে, এবডাে ও রাজনৈতিক দল বিধি সংশােধন করিয়া যে দুইটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হইয়াছে তাহার মাধ্যমে বর্তমান শাসন কর্তৃপক্ষ পুনরায় দেশবাসীর উপর তাঁহাদের অবিশ্বাসের প্রমাণই প্রতিষ্ঠীত করিলেন। তিনি বলেন, উহার মধ্য দিয়া প্রমাণ পাওয়া যায় যে, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের ইচ্ছা ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করার কোন ক্ষমতাই দেশবাসীর নাই। দ্বিতীয়তঃ তাঁহারা ইহাও নিশ্চিত করিয়া তুলিয়াছেন যে, যদিও নিৰ্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান পরিষদ গঠিত তথাপি জনসাধারণের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা উক্ত পরিষদের নাই।
তিনি বলেন, যদিও দেশের সাড়ে নয় কোটি অধিবাসীর অধিকাংশ আজ গণতন্ত্র অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ তথাপি বর্তমান শাসন কর্তৃপক্ষ এই উদ্ভট আইনের মাধ্যমে জনসাধারণকে বাধ্যতার মধ্যে আনয়নের প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন। সর্বশেষে জনাব মাহমুদ আলী বলেন, বর্তমান শাসনকর্তাদের ভাবা উচিত ছিল স্বাধীনতার উপরই মানুষের অস্তিত্ব নির্ভর করে।
তিনি বলেন, সুতরাং ইহা আশ্চর্যের কিছুই নয় যে, পাকিস্তানের জন্য সাধারণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আগাইয়া আসিবেন।

শেখ মুজিব
সাবেক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান তাঁহার বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্ট কর্তৃক জারিকৃত নয়া অর্ডিন্যান্সদ্বয়ের সাহায্যে এবডাে ঘােষিত রাজনীতিকদের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা আরােপিত হওয়ায় দেশের দমনমূলক আইনের সমাবেশের ক্ষেত্রে আর এক নয়া অধ্যায় সংযােজিত হইল- কোন গণতান্ত্রিক দেশের ইতিহাসে এইরূপ সমপর্যায়ের ঘটনার দৃষ্টান্ত বিরল। সৰ্ব্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন প্রেসিডেন্ট কতিপয় রাজনৈতিক এতিমের উপর নির্ভরশীল এবং উক্ত রাজনৈতিক এতিমদের তােষণে হয়রান হইয়া পড়িয়াছেন বলিয়া বােধ হইতেছে। এই রাজনৈতিক এতিমদের পশ্চাতে কোন জনসমর্থন নাই- দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের কোনরূপ ইচ্ছাও তাহাদের নাই। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁহার অনুচরবৃন্দ বর্তমানে সর্বাপেক্ষা স্বৈরাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করিয়াছেন এক্ষণে তাহা স্ফটিক স্বচ্ছ হইয়া উঠিয়াছে।
দেশে গণতন্ত্র আবার ফিরিয়া আসিবে, জনসাধারণের মনে এই সর্বশেষ ক্ষীণ আশাটুকুরও অবসান হইয়াছে। জনসাধারণের ধৈর্য্যের সীমা অতিক্রান্ত হইয়াছে এবং আল্লাহ জানেন দেশের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি ঘটিবে।
আমি সুনিশ্চিত এবং দেশের রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনগণও আমার সহিত একমত হইবেন যে, অর্ডিন্যান্স দুইটি কেবল এবডাে ঘােষিত রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেই প্রযুক্ত হয় নাই বরং সমগ্র জাতির বাকস্ফুরণ ক্ষমতাকে রুদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হইয়াছে এবং এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যে কেহ ন্যায়তঃ আশা করিতে পারেন যে, জাতির আত্মসচেতন মহল কর্তৃপক্ষের এই স্বেচ্ছাচারিতার নিকট মাথা নত করিবে না।
মেজর আফসারউদ্দিন
চট্টগ্রাম হইতে জাতীয় পরিষদ সদস্য মেজর আফসার উদ্দিন গতকল্য এক বিবৃতিতে বলেন, “অর্ডিনেন্স দুইটিতে ১৯৬২ সালের রাজনৈতিক দল আইনের সংশােধন করায় জনসাধারণের মৌলিক অধিকার বাক-স্বাধীনতা, সভাসমিতির স্বাধীনতার উপর আরােপিত পূর্ববর্তী বাধানিষেধকে আরও সংহত করিয়া সকল অধিকারের প্রতি এক চরম আঘাত হানা হইয়াছে। স্বাধীনতাকামী প্রত্যেকটি পাকিস্তানী এই নয়া অর্ডিনেন্সে অবশ্যই মর্মাহত হইবেন। আমি সরকারের নিকট অনুরােধ জানাইতেছি, জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে এবং তাঁহাদের নিজেদের কল্যানে ধূর্ততার আশ্রয় গ্রহণের পরিবর্তে দূরদর্শিতার পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করুন।”
জাতীয় পরিষদে পাক পিপলস গ্রুপের সদস্য মেজর আফসার উদ্দিন চট্টগ্রাম সফরে আগমন করিয়া গতকল্য সংবাদপত্রে এবডাে ঘােষিত নেতাদের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত অর্ডিন্যান্স দুইটি পাঠ করিয়া মর্মাহত হন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!