সংবাদ
২১ শে জুলাই ১৯৬২
বর্তমানে একমাত্র কর্তব্য পূর্ণ গণতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য যে কোন মূল্যে জন
ঐক্য বজায় রাখা
বিধি-নিষেধের বেড়াজাল লইয়া আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবনের প্রশ্ন উঠে নাই
আতাউর রহমান ও শেখ মুজিবর রহমানের যুক্ত বিবৃতি
ঢাকা, ২০শে জুলাই।- জনাব আতাউর রহমান খান এবং জনাব শেখ মুজিবর রহমান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, রাজনৈতিক দল আইন বিধিবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণ এবং রাজনৈতিক কর্মীদের একটি অংশ পুরাতন রাজনৈতিক দলসমূহ পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে চিন্তা করিতেছেন। কাৰ্যতঃ কতিপয় ব্যক্তি কোন কোন রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে ঘােষণা প্রদান করিয়াছেন।
‘রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ এবং একমাত্র মুক্ত পরিবেশের রাজনৈতিক দল সমৃদ্ধি লাভ করিতেও কর্মতৎপর হইয়া উঠিতে পারে। কিন্তু যে দেশের গণতন্ত্রের অস্তিত্ব নাই, যেখানে জনগণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র তাহাদের উপর চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছে, যেখানে জনসাধারণ মৌলিক অধিকার ভােগে বঞ্চিত এবং যেখানে পাকিস্তানের নির্মাতা ও প্রধান নেতৃবর্গ বিনাবিচারে কারান্তরালে রহিয়াছেন সেখানে রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবনের কোন প্রশ্নই উঠিতে পারে না। রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে সাধারণভাবে জনসাধারণের মধ্যে আদৌ কোন আগ্রহ নাই।
“যথাযথভাবে কালাকানুন নামে অভিহিত এই আইন প্রধানতঃ সরকার এবং ইহার মােসাহেবগণকে লইয়া কোনরকমের একটা দল গঠনের উদ্দেশ্যে বিধিবদ্ধ করা হইয়াছে। ইহা সকল সময়ের জন্য সরকারকে সমর্থন জানাইবে। সাধারণ জনগণের মধ্যে এইরূপ কোন পার্টি সম্পর্কে কোন আগ্রহ থাকিতে পারে না।
আমাদের নেতা জনাব এইচ এস সােহরাওয়ার্দী আটক আছে এবং মওলানা ভাসানী, খান আবদুল গফফার খান এবং খান আব্দুল কাইয়ুম খান সহ অন্যান্য পার্টির নেতৃবৃন্দও কারাগারে আটক আছেন।
অধিকাংশ উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে কোনও রাজনৈতিক দলের সহিত যুক্ত থাকা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। এই সময়ে এবং আইনের বিধিনিষেধ সংক্রান্ত ব্যবস্থার অধীনে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন অতীব অবাঞ্ছনীয় হইবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক জনগণের ঐক্য গঠন এবং তাহাদের দ্বারা উপস্থাপিত লক্ষ্যে আমরা বিশ্বাস করি। যে কোন মূল্যে ঐক্য অবশ্যই বজায় রাখিতে হইবে এবং এই ঐক্যকে ব্যাহত অথবা দুর্বল করিতে পারে এমন কিছুই করিতে দেওয়া হইবে না।
এইরূপ পরিস্থিতিতে সাধারণভাবে আমাদের দেশবাসী এবং বিশেষভাবে আওয়ামী লীগের প্রবীণ কর্মী, বন্ধু এবং সমর্থকদের নিকট এই আবেদন করা আমাদের কর্তব্য বলিয়া মনে করি যে, এই স্তরে পার্টির পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে কোন চিন্তা করিবেন না বরং উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যথা একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র এবং দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র হাসেলের জন্য নেতৃবৃন্দ কর্তৃক সংগঠিত একতাকে সমর্থন করিবেন এবং উহা জোরদার করিয়া তুলিবেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব