You dont have javascript enabled! Please enable it! 1962.06.20 | ‘কারাগার হইতে মুক্তি পাইয়াও স্বস্তি পাইতেছি না’ আটক বন্দীদের প্রশ্নে শেখ মুজিবরের বিবৃতি | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
২০শে জুন ১৯৬২

‘কারাগার হইতে মুক্তি পাইয়াও স্বস্তি পাইতেছি না’
আটক বন্দীদের প্রশ্নে শেখ মুজিবরের বিবৃতিঃ
পরিষদ সদস্যদের প্রতি অভিনন্দন

অধুনালুপ্ত প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রাজবন্দী শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে বলেনঃ
আমার প্রিয় নেতা জনাব এইচ, এস, সােহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও খান আবদুল গফফার খানসহ অসংখ্য দেশপ্রেমিক এখনও কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আটক থাকায় কারাগার হইতে মুক্তি লাভ করিয়া আমি সামান্যই স্বস্তি লাভ করিতে পারিয়াছি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁহাদের আত্মােৎসর্গ ও জনসাধারণের ভালবাসার কথা সুপরিজ্ঞাত।
সামরিক শাসন আমলে অত্যন্ত সীমাবদ্ধ ভােটদাতাদের ভােটে নির্বাচিত হইলেও পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সকল সদস্য ও জাতীয় পরিষদের অধিকাংশ সদস্য দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অবিলম্বে সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং সকল গ্রেফতারী পরােয়ানা প্রত্যাহার দাবী জানাইয়াছেন। পরিষদে গৃহীত এই দাবীর প্রতি সমগ্র জাতির সমর্থন থাকিলেও কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার এই গণদাবীর প্রতি কর্ণপাত না করিতে বদ্ধপরিকর বলিয়া মনে হইতেছে। “কতিপয় রাজবন্দীকে পালাক্রমে মুক্তিদান কালহরণ নীতি ছাড়া আর কিছুই নয় এবং ইহার পরিণতিও জনসাধারণের নিকট অজ্ঞাত নয়। জনসাধারণ যাহা চাহেন, খােদাও তাহা চাহেন বিধায় বর্তমান শাসন-কর্তৃপক্ষ এখনও গণদাবীর নিকট নতি স্বীকার করিলে ভাল করিবেন।
“পূর্ব পাকিস্তানের জন-নেতা মেসার্স নূরুল আমীন, আতাউর রহমান খান, আবু হােসেন সরকার, হামিদুল হক চৌধুরী, ইউসুফ আলী চৌধুরী, মাহমুদ আলী, সৈয়দ আজিজুল হক ও পীর মহসিন উদ্দীন আহমদ কিছুদিন পূর্বে এক যুক্ত বিবৃতিতে (এপিপি উহা পরিবেশন করেন নাই। -বাঃ সঃ ইঃ) সকল রাজবন্দীকে মুক্তিদানের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। উক্ত যুক্ত বিবৃতিতে জনমতেরই প্রতিধ্বনি করা হয়। আমি এক্ষণে তাহাদের সঙ্গে সুর মিলাইয়া এই একই দাবী জানাইতেছি। এই প্রসঙ্গে জাতীয় পরিষদের যেসকল পূর্ব পাকিস্তানী সদস্য ৭-দফা কর্মসূচী গ্রহণের দাবী জানাইয়া জনসাধারণের কাঁধে কাঁধ মিলাইয়াছেন, তাঁহাদিগকে এবং পশ্চিম পাকিস্তানী যে-সকল সদস্য এই কর্মসূচী বিনাশর্তে সমর্থন করিয়াছেন, তাহাদিগকে আমি অভিনন্দন জানাইতেছি।
“আমি ব্যক্তিগতভাবে ও প্রদেশবাসীর পক্ষ হইতে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের এই আশ্বাস দিতেছি যে, ৭-দফা কর্মসূচী সম্পর্কে তাঁহাদের ন্যায্য নীতির প্রতি জনসাধারণের সমর্থন রহিয়াছে কেননা, ৭-দফা দাবী জনসাধারণেরই দাবী। আমার সুনিশ্চিত বিশ্বাস, জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ একতার জোরে এই দাবী আদায় করিতে সক্ষম হইবেন।
“আমি আশা করিতেছি যে, সরকার অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিদান করিবেন এবং দেশের বৃহত্তম স্বার্থে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের ৭দফা দাবী মানিয়ে লইবেন।
“সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত কতিপয় রাজবন্দীর উপর কড়া বিধি-নিষেধ আরােপ করা হইতেছে বলিয়া আমি জানিতে পারিয়াছি। তাঁহাদের চলাফেরা ও বাকস্বাধীনতা এবং অন্যান্য ক্রিয়া- কর্মের স্বাধীনতা হরণ করা হইয়াছে। এছাড়া, গােয়েন্দা বিভাগের কতিপয় অতিউৎসাহী ব্যক্তি এই মর্মে নােটিস প্রদানের জন্য তাহাদের পিছু ধাওয়া করিতেছে। এমনকি নােটিসসমূহ গ্রহণের জন্য তাহাদের প্রতি চাপ দান করা হইতেছে। উপরােক্ত রাজবন্দিগণ বিনাশর্তে মুক্তিলাভ করায় তাহাদের উপর বিধি-নিষেধ আরােপ সরকারের নীতি নয় বলিয়া মনে হয়। কতিপয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অত্যুৎসাহী কার্যকলাপের দরুনই ইহা করা হইতেছে। আমি আশা করিতেছি যে, এই ধরনের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ না করার জন্য সরকার যথােপযুক্ত নির্দেশ দান করিবেন।” -এ,পি,পি।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব