You dont have javascript enabled! Please enable it! 1962.06.20 | বহু দেশপ্রেমিক আটক থাকায় মুক্তিলাভে আনন্দ পাই নাই - শেখ মুজিব | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
২০শে জুন ১৯৬২

বহু দেশপ্রেমিক আটক থাকায় মুক্তিলাভে আনন্দ পাই নাই
– শেখ মুজিব

ঢাকা, ১৯শে জুন।- সদ্য কারামুক্ত অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান সংবাদপত্রে প্রকাশার্থে নিম্নলিখিত বিবৃতি দান করিয়াছেন ঃ
আমার প্রিয় নেতা জনাব হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দী, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, খান আবদুল গফফার খান সহ বহু দেশপ্রেমিক কারান্তরালে থাকায় আমার কারামুক্তি আমাকে আনন্দিত করিতে পারে নাই। স্বাধীনতা কামিয়াবের জন্য ইহাদের ত্যাগ ও জনগণের জন্য ইহাদের ভালবাসা সম্পর্কে সকলেই অবগত। এ সম্পর্কেও কেহ অজ্ঞাত নহেন যে, পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের সদস্যগণ ও জাতীয় পরিষদের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানী অধিকাংশ সদস্য যাহারা ঠিক সামরিক শাসনের আমলেই সীমাবদ্ধ ভােটাধিকারের মাধ্যমে নির্বাচিত হইয়াছেন, তাঁহারা সর্বসম্মতিক্রমে ও দ্ব্যর্থহীনভাষায় অবিলম্বে রাজবন্দীদের বিনা শর্তে মুক্তি দান ও রাজনৈতিক কর্মীদের উপর হইতে সকল হুলিয়া প্রত্যাহারের দাবী জানাইয়াছেন। ইহা বিস্ময়কর যে, এই ভূমিকার পশ্চাতে সমগ্র জাতির সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই গণদাবীর প্রতি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার কর্ণপাত না করিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলিয়া মনে হয়।
কতিপয় রাজবন্দীকে পর্যায়ক্রমে মুক্তিদান বিলম্বীকরণের কৌশল ছাড়া আর কিছুই নহে, যাহার অর্থ জনগণের নিকট অজ্ঞাত নহে। জনগণের কথা আল্লাহরই কথা এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ এখনও জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিলে ভাল করিবেন। কিছুদিন পূৰ্ব্বে মেসার্স নূরুল আমীন, আতাউর রহমান খান, আবু হােসেন সরকার, হামিদুল হক চৌধুরী, ইউসুফ আলী চৌধুরী, মাহমুদ আলী, সৈয়দ আজিজুল হক ও পীর মােহসেনউদ্দিন আহমদ সংবাদপত্রে যে যুক্ত বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন, তাহাতেও সকল রাজবন্দীর বিনা শর্তে মুক্তিদানের আবেদন জানান হইয়াছে। ইহারা পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ এবং ইহাদের পশ্চাতে জনসমর্থন রহিয়াছে। ইহাদের বিবৃতিতে জনগণের দাবীই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে এবং আমিও এই দাবীর সহিত শরিক হইতেছি। এই প্রসঙ্গে আমি জাতীয় পরিষদের সেই সকল পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যকে অভিনন্দন জানাইতেছি, যাহারা ন্যূণতম ৭দফা কর্মসূচী আদায়ের দাবী করিয়া জনপ্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছেন। এবং সেই সকল পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্যকে অভিনন্দন জানাইতেছি, যাহারা এই ৭-দফা দাবীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দান করিয়াছেন। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যে সকল ছাত্র-যুবক সংগ্রাম করিয়াছেন এবং যাতনা ভােগ করিয়াছেন, আমি তাঁহাদেরও অভিনন্দন জানাইতেছি।
আমি আমার নিজের ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পক্ষ হইতে জাতীয় পরিষদের সদস্যদের এই আশ্বাস প্রদান করিতেছি যে, ৭ দফা কর্মসূচীভিত্তিক তাহাদের ন্যায্য ও যৌক্তিকতাপূর্ণ দাবী জনগণেরই দাবী এবং আমি নিশ্চিত যে, ন্যায় ও ঐক্যের বলে তাঁহারা এই দাবী আদায়ে সক্ষম হইবেন।
আমি আশা করি, সরকার সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দান করিবেন এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় পরিষদ সদস্যদের ৭ দফা দাবী স্বীকার করিয়া লইবেন।
কারামুক্ত কতিপয় রাজবন্দীর উপর কতিপয় গুরুতর। কড়াকড়ি আরােপ করা হইয়াছে বলিয়া আমি জানিতে পারিয়াছি। ইহাদের গতিবিধির স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও অন্যান্য কাজের স্বাধীনতা হরণ করিয়া সম্প্রতি কারাগার হইতে মুক্তিদান করা হইয়াছে এবং ইহার পরিপ্রেক্ষিতে কতিপয় অতি উৎসাহী। গােয়েন্দা এ সম্পর্কিত নােটিশ অর্পণের জন্য ইহাদের পিছনে পিছনে ধাওয়া করিতেছে এবং নােটিশ গ্রহণের জন্য চাপ প্রয়ােগও করিতেছে। আমি মনে করি, সরকার যখন ইহাদের বিনাশর্তে মুক্তি দান করিয়াছেন তখন সরকারের ইহা নীতি নহে বরং ইহা কতিপয় স্বার্থান্বেষী লােকের অতি উৎসাহী তৎপরতা। আমি আশা করি, সরকার এই কাজ হইতে বিরত হওয়ার জন্য যথাযথ নির্দেশ দান করিবেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব