You dont have javascript enabled! Please enable it! 1961.07.06 | দুর্নীতির মামলায় শেখ মুজিব বেকসুর খালাস | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
৬ই জুলাই ১৯৬১

দুর্নীতির মামলায় শেখ মুজিব বেকসুর খালাস

ঢাকা, ৫ই জুলাই (এ,পি, পি)। প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী এবং অধুনাবিলুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সদস্য জনাব শেখ মুজিবর রহমান এবং কাজী আবু নাসের সকল অভিযােগ হইতে বেকসুর অব্যাহতি লাভ করিয়াছেন। জনাব বিচারপতি মােহাম্মদ আসির এবং জনাব বিচারপতি সেকান্দার আলীর সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অদ্য (বুধবার) জনাব শেখ মুজিবর রহমান এবং জনাব কাজী আবু নাসেরকে নির্দোষ বিবেচনায় তাঁহাদের আপীল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্পেশাল জজের দণ্ডাদেশ বাতিল করিয়া অভিযুক্তদ্বয়কে সকল অভিযােগ হইতে বেকসুর অব্যাহতি প্রদান করিয়াছেন।
ঢাকার স্পেশাল জজ ইতিপূৰ্ব্বে অপরাধমূলক অসদাচরণের অভিযােগে জনাব শেখ মুজিবর রহমানকে এবং উক্ত কাৰ্যে প্ররােচিত করার অভিযােগে জনাব কাজী আবু নাসেরকে দুই বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা। জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
জনাব শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযােগ আনীত হয় যে, তিনি প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রীপদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া এবং তাঁহার বন্ধুর জন্য আর্থিক সুবিধা বিধান করিয়া পাবলিক সার্ভেন্ট হিসাবে অপরাধমূলক অসদাচরণ করেন। স্পেশাল জজের দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনাব শেখ মুজিবর রহমান এবং জনাব কাজী আবু নাসের ঢাকা হাইকোর্টে যে আপীল আবেদন পেশ করেন, তাহার রায় প্রদানকালে মাননীয় বিচারপতিগণ মাননীয় স্পেশাল জজের রায়ের কয়েকটি বিষয়ে মতানৈক্য প্রকাশ করেন। মাননীয় বিচারপতিদ্বয় আপীল মামলার রায়ে বলেন যে, বাদী (সরকার) পক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগসমূহ সন্দেহাতীত রূপে প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন। মাননীয় বিচারপতিগণ অভিমত পােষণ করেন যে, অপরাধমূলক অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান কিংবা তাহার বন্ধু বলিয়া কথিত অসদাচরণে প্ররােচিত করার দায়ে অভিযুক্ত করায় আবু নাসের কাহাকেও উল্লিখিত অভিযােগ অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। সরকার পক্ষের অভিযােগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, জনাব শেখ মুজিবর রহমান প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকাকালীন তাহার বন্ধু “কোলমাইনিং এণ্ড ট্রেড কোম্পানীর কাজী আবু নাসেরের বিশেষ আর্থিক সুযােগের সৃষ্টি করে এবং সেচ্ছাচারভাবে তাড়াহুড়া করিয়া হাসান আহম্মদ এণ্ড কোম্পানী কয়লা আমদানীর লাইসেন্স বাতিল করিয়া তাহা “কোল মাইনিং এণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীর কাজী আবু নাসেরকে প্রদান করেন এবং এ সকল কার্যের দ্বারা তিনি অপরাধমূলক অসদাচরণে লিপ্ত হন। অভিযুক্তদের আপীল মামলার রায় ঘােষণায় মাননীয় বিচারপতিগণ বলেন যে, কাজী আবু নাসেরকে কয়লা আমদানী এবং উহার বিলিবণ্টনের নিমিত্ত কাজী আবু নাসেরকে এজেন্সী প্রদান করিয়া জনাব মুজিবর রহমান। তাঁহার (নাসের) জন্য আর্থিক সুবিধার সৃষ্টি করিয়াছিলেন বলিয়া নথিপত্রে কোনও সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। কাজী আবু নাসেরের সহিত শেখ মুজিবর রহমানের বন্ধুত্বের প্রশ্নে মাননীয় বিচারপতিগণ তাঁহাদের (মুজিবনাসের) পূৰ্ব্ব আন্তরীকতা ছিল বলিয়া বাদী পক্ষ কর্তৃক প্রদর্শিত যুক্তি অগ্রাহ্য করেন। এই প্রসঙ্গে মাননীয় বিচারপতিগণ সরকার পক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের পরস্পর বিরােধীতা এবং সামঞ্জস্যহীনতায় উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, নথিপত্রে এইরূপ কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই, যাহার দ্বারা প্রমাণ করা যাইতে পারে যে, মুজিবর রহমানের সহিত কাজী আবু নাসেরের এইরূপ বন্ধুত্ব ছিল যাহার জন্য জনাব মুজিবুর রহমান জনাব আবু নাসেরের জন্য বিশেষ আর্থিক সুবিধা বিধানে উৎসাহিত হইতে পারেন। মাননীয় বিচারপতিগণ মনে করেন যে জনাব মুজিবর রহমান মেসার্স হাসান আহমদ এণ্ড কোম্পানীর এজেন্সী বাতিল করিয়া কোন অন্যায় করেন নাই। কারণ, চুক্তিপত্রের শর্তানুসারে যে কোন মুহুর্তে মেসার্স হাসান আহম্মদের এজেন্সী বাতিল করার ক্ষমতা সরকারের ছিল। তদুপরি মেসার্স হাসান আহম্মদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বহু অভিযােগও সরকারের গােচরীভূত ছিল। মাননীয় বিচারপতিগণ বলেন যে, মেসার্স কোলমাইনিং এণ্ড কোম্পানীকে (কাজী নাসের) কয়লা আমদানী এবং উহার বিলিবণ্টনের এজেন্সি প্রদান প্রদেশের শিল্পোন্নয়নের সহায়ক হইবে বলিয়া জনাব মুজিবর রহমান ধারণা করিয়াছিলেন- এই যুক্তিকেও উড়াইয়া দেওয়া যায় না।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব