সংবাদ
১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯৬০
শেখ মুজিবর রহমানের ২ বৎসর কারাদণ্ড
জেলা দায়রা আদলতের রায় ও আপীল সাপেক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন জামীন মঞ্জুর
ঢাকা, ১২ই সেপ্টেম্বর (এ,পি,পি) – সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ও প্রাক্তন আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান এবং স্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং এজেন্ট কাজী আবু নাসেরকে অদ্য এখানে। যথাক্রমে অসদাচরণ ও উক্ত কাজে সহায়তার অভিযােগে তাহাদের প্রত্যেককে দুই বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানার টাকা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হইয়াছে।
জেলা ও সেসন জজ এবং পদাধিকারবলে সিনিয়র স্পেশাল জজ জনাব এ, মওদুদ উক্ত দণ্ডাদেশ দান করেন এবং হাইকোর্টে আপিল সাপেক্ষ অভিযুক্ত উভয়ের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করা হইয়াছে।
স্পেশাল জজ তাঁহার রায়ে এই মর্মে মন্তব্য করেন যে, তকালীন দুর্নীতি দমন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও ১৯৫৭ সনের পূর্ব পাকিস্তান দুর্নীতি দমন আইন পাশের প্রধান উদ্যোক্তা শেখ মুজিবর রহমান দুর্ভাগ্য বশতঃ নিজেই উক্ত দুর্নীতিমুলক কাৰ্য্যে জড়িত হইয়া পড়েন। অভিযুক্ত কাজী আবু নাসের সম্পর্কে বিচারপতি মন্তব্য করেন যে, ঘটনার অন্তরালে থাকিয়া কলকাঠি চালনায় তিনিই প্রধান নায়ক হিসাবে অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান যে সকল অপরাধমুলক কাজ করেন তাহাতে সহায়তা ও প্ররােচনা দান করেন। শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ হইতেছে যে, একজন সরকারী কর্মচারী হিসাবে তিনি তাঁহার সরকারী পদ মর্যাদার অপব্যবহার করিয়া অপর অভিযুক্ত ব্যক্তি কাজী আবু নাসেরের জন্য আর্থিক সুবিধাদী আদায়ের সুযােগ গ্রহণ করেন। বাদীপক্ষ হইতে কাজী আবু নাসেরকে শেখ মুজিবর রহমানের বন্ধু হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কাজী আবু নাসেরের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ হইতেছে যে, অপরাধমুলক কাজে তিনি শেখ মুজিবর রহমানকে সহায়তা দান করেন।
এখানে উল্লেখযােগ্য যে, বাদীপক্ষ শেখ মুজিবর রহমান ও কাজী আবু নাসেরকে বন্ধু হিসাবে উল্লেখ করেন এবং অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান ও কাজী আবু নাসের উভয়েই আদালতের সম্মুখে বিবৃতি মারফৎ তাহাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। বাদীপক্ষ হইতে এই মর্মে অভিযােগ আনয়ন করা হয় যে, অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প দফতরের মন্ত্রিত্বের দায়িত্বভার গ্রহণের পর “আকস্মিকভাবে ও যথেচ্ছ উপায়ে” ভারত হইতে কয়লা আমদানীর ব্যাপারে মেসার্স হাসান আহমদ এণ্ড কোম্পানীর এজেন্সী বাতিল করেন। মেসার্স হাসান আহমদ এণ্ড কোম্পানীর এজেন্সী বাতিলের পর জনাব রহমান মেসার্স কোল মাইনিং এণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীকে তদস্থলে নিয়ােগ করেন। অভিযুক্ত কাজী আবু নাসের উক্ত কোল মাইনিং এ্যাণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীর ম্যানেজিং এজেন্ট ছিলেন।
বাদীপক্ষ হইতে অভিযােগে আরও বলা হয় যে, বিভাগীয় সেক্রেটারী কর্তৃক আপত্তি উত্থাপন করা সত্ত্বেও অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান উক্ত এজেন্সী বাতিল করিয়া দেন এবং ফাইনান্সিয়াল রুলস ও প্রচলিত পদ্ধতি লঙ্ঘন করিয়া কোল মাইনিং এ্যাণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীর স্বপক্ষে নির্দেশ দান করেন। বাদীপক্ষ হইতে অভিযােগ করা হয় যে, শেখ মুজিবর রহমান উক্তরূপ নির্দেশ প্রদান পূৰ্ব্বক কোল মাইনিং এ্যাণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করিয়াছেন। এবং কোম্পানী সম্পর্কে তিনি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী। অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক কোল মাইনিং এ্যাণ্ড ট্রেডিং কোম্পানীকে হার্ড কয়লা সফট কয়লায় রূপান্তরিত করার জন্য দর্শনীয় একটি কারখানা স্থাপনের অনুমতি দান সংক্রান্ত নির্দেশ প্রদান প্রসঙ্গে স্পেশাল বিচার পতি তাঁহার রায়ে মন্তব্য করেন যে, অভিযুক্ত আবু নাসের ও তাহার ফার্মকে অনুগ্রহ প্রদর্শনের নিমিত্ত অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান কোল মাইনিং এ্যাণ্ড ট্রেডিং কোম্পানী কর্তৃক কারখানা স্থাপনকে অজুহাত হিসাবে গ্রহণ করে এবং নিশ্চিতভাবে উহা তাহাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধি। অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান ও কাজী আবু নাসের তাঁহাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগসমুহ অস্বীকার করেন।
বাদীপক্ষের সাক্ষীদের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার জনাব ডব্লিউ, এ, কাদরী, যশাের ও দিনাজপুরের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটদ্বয় এবং বগুড়ার নওয়াবজাদা হাসান আলী সাক্ষ্য প্রদান করেন।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ সরকারী উকিল জনাব আজিজউদ্দিন আহমদ এবং তাঁহাকে সাহায্য করেন জনাব মােয়াজ্জম হােসেন খান। বিবাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব এইচ, এস, সােহরাওয়ার্দী এবং তাঁহাকে সাহায্য করেন জনাব আবদুস সালাম খান ও জনাব জহিরুদ্দিন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব