ইত্তেফাক
১লা জুন ১৯৬০
দুর্নীতির অভিযােগ হইতে শেখ মুজিবের বেকসুর খালাস
ঢাকা বিভাগের স্পেশাল জজ কর্তৃক মামলার রায় প্রদান
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (মঙ্গলবার) ঢাকা বিভাগের স্পেশাল জজ জনাব এ, এস, এম, রাশেদ প্রাক্তন প্রাদেশিক মন্ত্রী ও অধুনালুপ্ত প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবুর রহমানকে মন্ত্রী হিসাবে সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বীয় পদ মর্যাদাবলে আর্থিক সুবিধা অর্জনের অভিযােগ হইতে মুক্তি প্রদান করিয়াছেন।
স্পেশাল জজ একই মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছােট ভাই শেখ আবু নাসেরকেও দুর্নীতি অবলম্বনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সক্রিয়ভাবে হিবিট করার অভিযােগ হইতে মুক্তি প্রদান করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সনের ২নং আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী ও শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধি ১০৯ধারা যােগে উক্ত আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়।
বাদী পক্ষ এই মামলায় ১৫জন সাক্ষী পেশ করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহারা শেখ মুজিবুর রহমানের রিরুদ্ধে সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বীয় পদ মর্যাদাবলে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ সম্পর্কিত অভিযােগ সম্পর্কে কোন প্রমাণ উপস্থিত করিতে পারেন নাই। ফলে, স্পেশাল জজ তাঁহাকে অভিযােগ হইতে মুক্তি প্রদান করেন। এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধেও বাদীপক্ষ অভিযােগ প্রমাণ করিতে না পারায় স্পেশাল জজ তাঁহাকেও মুক্তি প্রদান করেন।
এই মামলায় জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী প্রধান কৌসুলী হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ সমর্থন করেন। এডভােকেট আবদুস সালাম খান, জনাব জহীর উদ্দীন ও অন্যান্য কতিপয় আইনজীবী তাঁহাকে সাহায্য করেন। এডভােকেট জনাব আজম শেখ আবু নাসেরের পক্ষ সমর্থন করেন। পূর্বাহ্নে স্পেশাল জজ এই মামলার বিচারে এই আদালতের এখতিয়ার সম্পর্কে তাঁহার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেন। “মন্ত্রীরা সরকারী কর্মচারী নহেন” এই যুক্তিতে এই মামলার বিচারে স্পেশাল জজের এখতিয়ার সম্পর্কে বিবাদীপক্ষের কৌসুলী যে প্রশ্ন উত্থাপন করেন, স্পেশাল জজ তাহা রায়ে উহা খণ্ডন করিয়া বলেন যে, এই মামলার বিচারে এই আদালতের এখতিয়ার রহিয়াছে।
বিবাদী পক্ষ এই মামলা পরিচালনার ব্যাপারে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরী সম্পর্কে আইনঘটিত যে প্রশ্ন উত্থাপন করেন স্পেশাল জজ তাহার রায়ে উহাও খণ্ডন করেন এবং বলেন যে, এই মামলা সম্পর্কিত মঞ্জুরী বৈধ হইয়াছে।
দুর্নীতি দমন ব্যুরাের ইন্সপেক্টর জনাব আবদুল জলিল তাহার নিজস্ব সূত্র হইতে সংবাদ পাইয়া অনুসন্ধান কার্য চালান এবং ১৯৫৯ সনের ২রা ফেব্রুয়ারী রমনা থানায় এজাহার প্রদান করেন। অতঃপর দুর্নীতি দমন ব্যুরাের ইন্সপেক্টর জনাব মেহরাব আলী চৌধুরী উক্ত মামলার তদন্ত কার্যের জন্য ভারপ্রাপ্ত হইয়া দীর্ঘকাল পরে অর্থাৎ ১৯৫৯ সনের ৯ই নবেম্বর চার্জশীট দাখিল করেন।
অভিযােগের বিবরণ
অভিযােগের বিবরণে বলা হয় ঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মােহাম্মদ আনােয়ার আলী, হাজী সেকেন্দার আলী ও গােলাম হায়দার চৌধুরীর অংশীদারিত্বে আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ জেলার সাতীহাটিতে একটি কাপড় ক্যালেণ্ডারিং কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। ১৯৫৬ সনের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ প্রদেশে মন্ত্রিসভা গঠনের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত লাইসেন্স মঞ্জুর বা বাতিল না হইয়া পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্প বিভাগে পড়িয়া থাকে। শেখ মুজিবুর রহমান বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রম বিভাগের মন্ত্রী হওয়ার পর উক্ত ফার্মের অংশীদার মুজিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ কয়েক ব্যক্তি শেখ মুজিবুরের ১৫নং আবদুল গণী রােডে অবস্থিত সরকারী বাসভবনে গিয়া উক্ত লাইসেন্স প্রদানের অনুরােধ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁহার ছােটভাই শেখ আবু নাসেরের মাধ্যমে শর্ত হিসাবে আওয়ামী লীগ তহবিলে ১৫০০ টাকা চাঁদা দাবী ও তাঁহার ছােটভাই শেখ আবু নাসেরকে বিনা পুঁজিতে তিন আনা শেয়ার প্রদানের প্রস্তাব করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান কোন উপায়ন্তর না দেখিয়া ১৯৫৭ সনের ২রা ফেব্রুয়ারী হইতে ১৪ই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শেখ আবু নাসেরের মাধ্যমে উক্ত ১৫শত টাকা প্রদান ও শেখ আবু নাসেরকে পার্টনার হিসাবে গ্রহণ করিয়া একটি পার্টনারশীপ দলিল সম্পাদন করে।
এইরূপে শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় পদমর্যাদার অপব্যবহার করিয়া তাঁহার ভাইয়ের জন্য বিনা পুঁজিতে আল আমিন ইণ্ডাস্ট্রীজ-এর শেয়ার গ্রহণ ও আওয়ামী লীগের জন্য অথবা নিজে উপরােক্ত ১৫শত টাকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। অতএব, তিনি ১৯৪৭ সনের ২নং আইনের (৫) ২ ধারা অনুযায়ী, দণ্ডযােগ্য অপরাধ করিয়াছেন।
শেখ আবু নাসের উপরােক্ত অপরাধে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করিয়াছেন বলিয়া তাঁহাকে উক্ত আইনের ৫(২) ধারা ও পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হইয়াছে।
সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালােচনা
বাদীপক্ষ কমপক্ষে ১৫ জন সাক্ষী পেশ করেন। উহাদের মধ্যে মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও আনওয়ার আলী আল-আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজের পার্টনার। অন্যান্যের মধ্যে অফিসারসহ সকলেই সরকারী কর্মচারী। পুলিশ অফিসারদের সাক্ষ্যকে বাদ দিলে তদানীন্তন শিল্প বিভাগের ডিরেক্টর জনাব রুহুল কুদুসের সাক্ষ্য ছাড়া অন্যান্যের সাক্ষ্য মােটামুটিভাবে গতানুগতিক।
তদুপরি পার্টনারশীপ ব্যবসায় সম্পর্কিত অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ঃ যথা, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, গােলাম হায়দার চৌধুরী, হাজী সেকান্দার আলী ও তাহার পুত্র আনায়ার আলী সকলেই আল-আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজের মূল পার্টনার ছিলেন। ইহাদের মধ্যে মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও আনওয়ার আলী সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন। অপর দুই ব্যক্তি বিবাদী পক্ষের বশীভূত হইয়াছেন বলিয়া বাদীপক্ষ আদালতে দরখাস্ত করিয়াছেন এবং একই কারণে তাঁহাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় নাই। মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও আনােয়ার আলী তাহাদের সাক্ষ্যে বাদীপক্ষকে সমর্থন করেন নাই। পক্ষান্তরে তাহারা সম্পূর্ণরূপে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধেই চলিয়া গিয়াছে। মুজিবুর রহমান চৌধুরী তাহার সাক্ষ্যে বলিয়াছেন যে, সেক্রেটারীয়েটে ছাড়া তিনি অন্য কোথাও আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজের লাইসেন্স ইত্যাদির ব্যাপারে চেষ্টা তদবিরের জন্য যান নাই। তিনি আরও বলিয়াছেন যে, একত্রে পার্টনারশীপ ভিত্তিতে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজ গঠন করা হইয়াছে। শেখ আবু নাসেরকে একত্রে ব্যবসা করার জন্যই পার্টনার হিসাবে গ্রহণ করা হইয়াছে। এই সাক্ষী হইলেন আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্ৰীজের ম্যানেজিং পার্টনার এবং তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে কোন দিক দিয়াই এই প্রতিষ্ঠানের সহিত জড়িত করেন নাই। তাঁহার সাক্ষ্য হইতে দেখা যাইতেছে যে, তিনি শুধু পুলিশের নিকট জবানবন্দী প্রদান করেন নাই, পক্ষান্তরে জনৈক প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকটও বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন এবং উহা তাঁহাকে পড়িয়া শুনাইবার পর তিনি উহাতে দস্তখত দিয়াছেন। অবশ্য সাক্ষী এই আদালতে বলেন যে, তিনি দুর্নীতিদমন বিভাগীয় পুলিসের চাপে পড়িয়া ও বাধ্য হইয়া জবানবন্দী বা বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন। এই পর্যায়ে বাদীপক্ষ তাহাকে “প্রতিকুল” ঘােষণা করিয়াছেন এবং আদালত সাক্ষীকে জেরা করার জন্য বাদীপক্ষকে অনুমতি প্রদান করেন।
জেরাকালে সাক্ষী বলেন যে, তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে যে বিবৃতি প্রদান। করেন উহা সত্য ছিল না। কিন্তু তিনি বলেন যে, দুর্নীতি দমন পুলিসের চাপে পড়িয়াই উহা করিয়াছেন। স্পেশাল জজ বলেনঃ এই সাক্ষী যে বিবাদী পক্ষের বশীভূত হইয়াছেন এ-ব্যাপারে আমি স্থির নিশ্চিত এবং আমি ইহা বিশ্বাস করিতে অপারগ যে, দুর্নীতি দমন বিভাগের চাপে পড়িয়া তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট বিবৃতি প্রদান করিয়াছেন। তিনি আরও বলেন ঃ এই সাক্ষীকে বশীভূত করার ব্যাপারে যে কেহ ই দায়ী হউক না কেন, এই সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে এই সাক্ষ্য হইতে বাদীপক্ষের সমর্থন সূচক কোন কিছু পাওয়া যাইতেছে না।
আনােয়ার আলীর সাক্ষ্য প্রসঙ্গে
অতঃপর স্পেশাল জজ পরবর্তী সাক্ষীর-সাক্ষ্য পর্যালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, তাহার সাক্ষ্যও পূর্ববর্তী সাক্ষীর সমপর্যায়ভুক্ত। তাহার সাক্ষ্য হইতেও শেখ মুজিবুর রহমানকে আল-আমিন ইণ্ডাষ্ট্রিজ-এর পার্টনারশীপ সম্পর্কিত ব্যাপারে কোন প্রকারে জড়িত করা হয় নাই। স্পেশাল জজ বলেনঃ অতএব আমার এইরূপ নিশ্চিত ধারণা হইয়াছে যে, এই সাক্ষীও বিবাদী পক্ষের বশ হইয়াছেন এবং এই শ্রেণীর সাক্ষীর সাক্ষ্যের উপর আস্থা স্থাপন করা যায় না।
মুজিবুরের বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাব
জজ আরও বলেন ঃ অতএব শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তাঁহাকে জড়াইয়া লেনদেন সম্পর্কিত অভিযােগ সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নাই। তিনি বলেনঃ প্রকৃতপক্ষে মুজিবুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক আওয়ামী লীগ ফাণ্ডের জন্য অর্থ প্রদান সম্পর্কিত অভিযােগ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে বাদী পক্ষ আদৌ কোন সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে পারেন নাই।
এক্সারসাইজ খাতায় হিসাব সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ
জনাব রাশেদ বলেন ঃ আনওয়ার আলীর সাক্ষ্যের উপর আস্থা স্থাপন করা যায় না, উহা আগেই বলা হইয়াছে। কিন্তু খসড়া এক্সারসাইজ খাতায় যে পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষিত হইয়াছে, উহাতে এই হিসাব যে খাঁটি তৎসম্পর্কে সন্দেহের উদ্রেক হয়। তদুপরি কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অনুরূপ খসড়া খাতায় হিসাব রাখা কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হয়। বিবাদীপক্ষের কৌসুলী এজাহারে উল্লেখক্রমে বলিয়াছেন যে, আওয়ামী লীগ তহবিলে চাঁদা বাবত শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৫শত টাকা প্রদানের আদৌ কোন উল্লেখ করা হয় নাই। তদুপরি দুর্নীতি দমন ব্যুরাের ইন্সপেক্টর জনাব জলিল প্রাথমিক তদন্তের পর এজাহার প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁহার সাক্ষ্যে প্রয়াস পাইয়াছে যে, তিনি তদন্তকালে মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আনােয়ার আলী ও গােলাম হায়দার চৌধুরীর সহিত যােগাযােগ করিয়াছেন এবং অভিযােগ সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে সকল তথ্য সংগ্রহ করিয়াছেন। কিন্তু তাহার এজাহারে লেনদেন সম্পর্কিত অভিযােগের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করা হইয়াছে। বাদীপক্ষ এই অভিযােগ আনয়নের কারণ যাহাই থাকুক না কেন, উহাকে প্রমাণ করার ব্যাপারে ব্যর্থ হইয়াছেন। অতএব, আমি এই খাতার উপর কোনরূপ গুরুত্ব আরােপ করিতে অসমর্থ এবং উহাকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করা হইতেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগ তহবিলে ১৫শত টাকা প্রদানের অভিযােগ প্রমাণিত হয় নাই। অনুরূপ অভিযােগে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিকূল ধারণা পােষণ করা যায় না। এইরূপে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইতেছি যে, সরকার পক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন।
মামলার পটভূমিকা সম্পর্কে মতভেদ
জনাব রাশেদ বলেন ঃ এই মামলার পটভূমিকা সম্পর্কে বিবাদী পক্ষের কৌসুলী যে সকল বক্তব্য পেশ করেন উহা গ্রহণ করিতে তিনি অসমর্থ। তিনি বলেন ঃ আমরা বর্তমান মামলার সহিত সম্পর্কিত এবং আমাদের সম্মুখে যে সকল তথ্য রহিয়াছে উহা অভিযুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হইয়াছে- এইরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নহে।
শেখ আবু নাসের প্রসঙ্গে
শেখ আবু নাসের প্রসঙ্গে স্পেশাল জজ রায়ে বলেন ঃ অভিযুক্ত শেখ আবু নাসের শেখ মুজিবুর রহমানের ছােট ভাই-এই নিছক অজুহাত ও বিনা মূলধনে তাহাকে তিন আনা শেয়ার প্রদানের শর্তে আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজের পার্টনার হিসাবে গ্রহণের অভিযােগ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমান তাহার ভাইএর জন্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে স্বীয় সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়াছেন, বাদীপক্ষ উহা প্রমাণ করিতে পারেন নাই।
তিনি বলেন ঃ বাদীপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে তাঁহাদের অভিযােগ প্রমাণ করিতে পারেন নাই। উহা ইতিপূর্বে পরিলক্ষিত হইয়াছে। অতএব শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার অভিযােগ আদৌ উঠে না।
এই মামলায় বিবাদী পক্ষে জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী প্রধান কৌসুলী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। এডভােকেট জনাব আবদুস সালাম খান ও জনাব জহীর উদ্দীন তাঁহাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন। এতদ্ব্যতীত জনাব জিল্লুর রহমান ও জনাব কোরবান আলীও এই মামলার ব্যাপারে সাহায্য করেন। পক্ষান্তরে এডভােকেট এম, আজম বিশেষভাবে শেখ আবু নাসেরের পক্ষ সমর্থন করেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার জনাব আজিজুদ্দীন আহমদ। তাঁহাকে সাহায্য করেন জনাব মােয়াজ্জেম হােসেন খান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব