সংবাদ
১লা জুন ১৯৬০
শেখ মুজিবর রহমানকে নির্দোষ বলিয়া ঘােষণা
অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় ঢাকার স্পেশাল জজের রায়
ঢাকা, ৩১শে মে (এ,পি,পি)। সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ও অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান ও তাহার ভ্রাতা শেখ আবু নাসেরকে ঢাকার স্পেশাল জজ জনাব এ,এস,এম, রাশেদ যথাক্রমে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আর্থিক সুযােগ গ্রহণ এবং অসৎ কাৰ্যে প্ররােচনা দানের অভিযােগ প্রমাণিত না হওয়ায় নির্দোষ বলিয়া ঘােষণা করিয়াছেন।
মামলার শুনানীকালে মােট ১৫জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তন্মধ্যে দুইজন আল-আমীন ইণ্ডাষ্ট্ৰীজের অংশীদার এবং অপর সাক্ষীগণ পুলিশ অফিসারসহ সরকারী কর্মচারী। মামলার বিবরণে প্রকাশ, শেখ আবু নাসের আল-আমীন ইণ্ডাষ্ট্রিজের অংশীদারদিগকে একটি ক্যালেণ্ডারিং কারখানা স্থাপনের অনুমতি লইয়া দেওয়ার আশ্বাস দিয়া বিনা পুজিতে তাহাদের সহিত অংশীদারভুক্ত হন। পরিশেষে তিনি তাঁহার ভ্রাতা তৎকালীন প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প সচিব অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমানের মাধ্যমে অনুমতি লাভ করিতে সক্ষম হয়। আরও অভিযােগ করা হয় যে, শেখ মুজিবর রহমান আওয়ামী লীগ তহবিলের জন্য আল-আমীন ইণ্ডাষ্ট্ৰীজের অংশীদারদের নিকট হইতে ১৫ শত টাকা চাঁদা আদায় করেন।
মামলার রায় দানকালে স্পেশাল জজ বলেন যে, একজন মন্ত্রী সরকারী কর্মচারী নহেন, এই যুক্তিতে বিবাদী পক্ষের কৌসুলী অত্র আদালতের এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার নাই বলিয়া যে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি তাহার সহিত একমত নহেন। আদালত মনে করেন যে, মন্ত্রী একজন সরকারী কর্মচারী সেইহেতু উক্ত মামলার বিচার করার অধিকার অত্র আদালতে রহিয়াছে। শেখ মুজিবর রহমানকে অব্যাহতি দান করিয়া আদালত মন্তব্য করেন যে, উক্ত ফার্মের সহিত জড়িত করা এবং লেনদেনের ব্যাপারে মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ প্রমানিত হয় নাই। আদালত আরও মন্তব্য করেন যে আওয়ামী লীগের চাদা হিসাবে ১৫শত টাকা শেখ মুজিবর রহমানকে দেওয়া হইয়াছে বলিয়া যে অভিযােগ করা হইয়াছে তাহাও প্রমাণিত হয় নাই।
জজ মন্তব্য করেন যে, পার্টনারশীপ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হইতেছে আল-আমীন ইণ্ডাষ্ট্রীজের ৪ অংশীদার। তন্মধ্যে দুইজন আদালতে হাজির হয় নাই এবং অপর দুইজনও মামলার অভিযােগ সমর্থন করে নাই। উপরােক্ত দুইজন সাক্ষী যাহারা মামলার প্রতিকুলে চলিয়া যায়। তাহাদের সম্পর্কে আদালত মন্তব্য করেন যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ তাহাদিগকে ভাগাইয়া লইয়াছে বলিয়া তিনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন। উল্লেখিত দুইজন সাক্ষী আদালতে বলে যে, ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে প্রদত্ত বিবৃতি তাহারা দুর্নীতি দমন বিভাগের পুলিশের চাপে পড়িয়াই দিয়াছিল। এ সম্পর্কে জজ বলেন যে, পুলিশের চাপে তাহারা বিবৃতি দিয়াছিল, একথা বিশ্বাস করিতে তিনি রাজী নহেন। সাক্ষীদ্বয়ের প্রদত্ত প্রমাণকেও আদালত বিশ্বাস করেন না। তবে আদালত সাক্ষীদের প্রদত্ত প্রমাণেও মামলার স্বপক্ষে সমর্থন যােগ্য কিছুই দেখেন না।
উপসংহারে আদালত মন্তব্য করেন যে, বাদীপক্ষ শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযােগ প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হইয়াছে এবং শেখ আবু নাসের কর্তৃক কুপ্ররােচনা দানের কোন প্রশ্নই উঠে না।
জনসাধারণের নিকট শেখ মুজিবর রহমানকে হেয় করার জন্য এই মামলা করা হইয়াছে বলিয়া বিবাদীপক্ষ যে বক্তব্য পেশ করিয়াছে, জজ উহার সহিত একমত নহেন।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন জনাব আজিম উদ্দীন আহমদ ও জনাব মােয়াজ্জেম হােসেন। বিবাদীপক্ষ সমর্থন করেন জনাব এইচ, এস সােহরাওয়ার্দী, জনাব জহির উদ্দীন, জনাব আজম ও জনাব জিললুর রহমান।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব