আজাদ
২৫শে আগস্ট ১৯৬০
শেখ মুজিবের মামলা
পদাধিকার বলে ঢাকার স্পেশাল জজ জনাব এ, মওদুদের এজলাসে গতকল্য (বুধবার) প্রাক্তন প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প উজীর শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত সরকারী পদমর্যাদার অপব্যবহার সংক্রান্ত মামলার আর এক দফা শুনানী হয়। এইদিন প্রাদেশিক সরকারের প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জনাব মুয়িদ খান এবং শিলপ, শ্রম ও বাণিজ্য দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি সেক্রেটারী জনাব আবুল খায়েরের সাক্ষ্য গৃহীত হয়।
পূৰ্ব্বাহ্নে ৩নং সরকারী সাক্ষী জনাব হাশেম আলীর অসমাপ্ত জেরা শেষ হয়। জেরায় তিনি বলেন, ভারত হইতে আনীত সমুদয় কয়লার শতকরা ৬০ ভাগ ঈশ্বরদী এবং ৪০ ভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে আনার কথা ছিল। ঈশ্বরদীতে আনীত কয়লার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে পুনঃ প্রেরণের এবং শতকরা ২০ ভাগ তথায় রাখার কথা ছিল।
সাক্ষী আরও বলেন, মােট ২১ ব্যক্তি টেণ্ডার বাতিল করেন। তন্মধ্যে ১৪টি টেণ্ডার সরাসরি বাতেল করা হয়। বাকী ৭ টীর মধ্য হইতে আরও তিনটি রেটের প্রশ্নে বাদ দিয়া অবশিষ্ট ৪টির যােগ্যতা বিবেচনা করিয়া মেসার্স হাসান আহমদকে এজেন্সী দেওয়া হয়। ব্যবসায়ে অভিজ্ঞতার কথা টেণ্ডারে উল্লেখ করিতে হইবে বলিয়া উল্লেখ থাকিলেও তাহারা টেণ্ডার দাতাদের অভিজ্ঞতার বিবরণ বিবেচনা করেন নাই বলিয়া সাক্ষী উল্লেখ করেন। কারণ তাহা হইলে নবাগত ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত হইতে হইত।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি টেণ্ডারের সহিত আর্নেষ্টমানি হিসাবে ট্রেজারী চালানে এক হাজার টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল। মেসার্স হাসান আহমদ নিশ্চয়ই উক্ত টাকা ট্রেজারী চালানে কিনা ব্যাংক ড্রাফটে জমা দিয়াছিলেন। তাহা না হইলে তাহার টেণ্ডার বিবেচনা করা হইত না। টেণ্ডার বিবেচনার সময় মেসার্স হাসান আহমদ এই ব্যবসায়ে নবাগত কিনা, তাহার সাক্ষী জানিতেন না বলিয়া উল্লেখ করেন।
মেসার্স হাসান আহমদকে এজেন্সী দেওয়ার জন্য টেণ্ডারের ব্যাপারে কতিপয় নীতি গ্রহণ ও বিষয় বিবেচনা করা হইয়াছিল- একথা সত্য নহে বলিয়া সাক্ষী জানান। সাক্ষী আরও বলেন যে, টেণ্ডার খােলার আগে আমরা টেণ্ডারদাতাদের নাম জানিতামনা, তবে ইচ্ছা করিলে খামের উপরের লেখা দেখিয়া উহা জানা যাইতে পারিত। টেণ্ডার খােলার সময় টেণ্ডারদাতারা কেহ উপস্থিত ছিলেন না।
পরবর্তী সাক্ষী জনাব মুয়িদ খান বলেন যে, তিনি, জনাব হাশেম আলী এবং ফজলে হক চৌধুরী টেণ্ডার কমিটির সদস্য ছিলেন।
টেণ্ডারগুলি খােলার পূৰ্ব্বে তাঁহারা জনাব চৌধুরীকে (ডিরেক্টর কনজিউমার গুডস) একটি সর্বনিম্ন গ্রহণযােগ্য রেট ধার্য্য করিতে বলেন। তিনি উহা করার পর টেণ্ডারগুলি খােলা হয়। একুশটি টেণ্ডারের মধ্যে ১৪টির রেট উক্ত রেট অপেক্ষা কম থাকায় উহাদিগকে সরাসরি বাতেল করা হয়। বাকি সাতটির মধ্যে ৩টী দফা সম্পর্কে রেট কম থাকায় ঐ তিনটিকে বাতিল করা হয়। অবশিষ্ট ৪টার মধ্যে মেসার্স হাসান আহমদের “কোটেশন” সর্বাপেক্ষা কম হওয়ায় তাঁহাকে এজেন্ট নিযুক্ত করা হয়। এই নিযুক্তি অবশ্য তাঁহাদের কার্য সম্পাদনের যােগ্যতা ও পূর্ব পরিচয়াদি তদন্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন যে, মেসার্স কোল মাইনিং কোম্পানী কোন টেণ্ডার দিয়াছিলেন কিনা এবং উহাতে তাহাদের কয়লা ব্যবসায় সংক্রান্ত ব্যাপারে ১৫ বৎসরের অভিজ্ঞতা থাকার কথা উল্লেখ ছিল কিনা, তাহা তাহার মনে নাই। হাসান আহমদ কোম্পানীর কোন পূর্ধ্ব অভিজ্ঞতা ছিল কিনা, তাহাও তিনি স্মরণ করিতে পারিতেছেন না।
গতকল্যকার শেষ সাক্ষী জনাব আবুল খায়ের বলেন যে, সেক্রেটারীয়েটের ফাইলে মেসার্স হাসান আহমদ কোম্পানীর এজেন্সী বাতিল করার কোন সােপারেশ ছিল না। তিনি আরও বলেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্প উজীর ও শিল্প দফতরের সেক্রেটারীর সহিত ভারত হইতে ষ্টিম কোল আমদানী করিয়া উহা হইতে সফট কোক তৈয়ার করার কথা আলােচনা হয়। কিন্তু কোল মাইনিং ট্রেডিং কোম্পানীর উদ্যোগে উহা হয় কিনা, তাহা তিনি বলিতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, সাবেক শাসনতন্ত্র পাশ হওয়ার পূর্বে শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের সহিত পরামর্শ করার দাবী কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট জানান হয়। এমন কি সাবেক শাসনতন্ত্র প্রদেশগুলিকে শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দিলেও বৈদেশিক মুদ্রা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকায় প্রাদেশিক সরকার শিল্প প্রতিষ্ঠা করিতে পারিতেন না। জনাব আবুল খায়েরের সাক্ষ্য শেষ হইলে আদালতের অধিবেশন গতকল্যকার মত শেষ হয়। অদ্য বৃহস্পতিবার সকালে এই মামলার শুনানী পুনৰ্ব্বার শুরু হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব