সংবাদ
২২শে মে ১৯৬০
জুলুম ও চাপে পড়িয়া বিবৃতি দানে বাধ্য হইয়াছি
শেখ মুজিবের মামলায় আর একজন সাক্ষীর উক্তি ও তৃতীয় দিনে ৪ জন সাক্ষীর জেরা
ঢাকা, ২১শে মে (এ,পি,পি)। অদ্য স্পেশাল জজ জনাব এ,এস,এম, রাশেদের কোর্টে সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ও অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী জনাব শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁহার ভ্রাতার মামলার শুনানী শুরু হইলে বাদীপক্ষের অপর একজন সাক্ষী বাকিয়া বসে। এখানে উল্লেখযােগ্য যে, গতকল্য বাদীপক্ষের আর এক জন সাক্ষী বাঁকাইয়া বসে।
বাদীপক্ষের কৌসুলী উভয় সাক্ষীর জেরা করেন। কৌসুলী অপর একজন সাক্ষীর জেরা করিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। উক্ত সাক্ষী, অদ্য যে সাক্ষী বাঁকাইয়া বসে তাহার পিতা। “আল আমিন ইন্ডাষ্ট্রিজের অন্যতম অংশীদার এবং সাক্ষী আনােয়ার আলী বলেন যে, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে বর্তমান মামলার সহিত সংশ্লিষ্ট তিনি যে বিবৃতি দিয়াছেন, তাহা দুর্ণীতি দমন বিভাগের পুলিশের চাপে পড়িয়াই দিয়াছেন।
বাদীপক্ষের কৌসুলীর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন যে, ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে তিনি যে বিবৃতি দিয়াছেন, তাহা তৎকর্তৃক সঠিকভাবে রেকর্ড করা হইলেও ইহা সত্য নহে।
তিনি আদালতে পুনরায় বলেন, তাহার উপর বল প্রয়ােগ করার ও চাপ দেওয়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সম্মুখে তিনি উক্ত বিবৃতি দান করিতে বাধ্য হইয়াছেন। উক্ত বিবৃতি দানকালে আমার উপর কি পরিমাণ জুলুম করা হইয়াছিল, তাহা যে কেহ অনুমান করিতে পারেন। তিনি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় অথবা অপর কোন ব্যক্তিকে উক্ত বল প্রয়ােগ এবং চাপের কথা বলিয়াছিলেন কি না প্রশ্ন করা হইলে সাক্ষী বলেন, তিনি তাহা করেন নাই; কারণ পুলিশ তাহাকে উক্ত বিষয় প্রকাশ করিতে নিষেধ করিয়াছিল।
সওয়াল-জওয়াবকালে সাক্ষী বলেন, ইহা সত্য নয় যে জনাব শেখ আবু নাসেরকে “আল-আমীন ইন্ডাষ্ট্রীজের”অংশীদার হিসাবে গ্রহণকালে আওয়ামী লীগের তহবিলে ১৫ শত টাকা দেওয়া হইয়াছিল অথবা আওয়ামী লীগের তহবিলে কোন চাদা দিবার কথা হইয়াছিল।
“আল আমীন ইন্ডাষ্ট্রিজের” হিসাবের খাতার উল্যেখ করিয়া সাক্ষী বলেন, উক্ত হিসাবের খাতায় আওয়ামী লীগ দলকে দায়ী করিবার জন্য তিনি জনাব মুজিবর রহমান চৌধুরীকে ১৫ শত টাকা দিয়াছেন বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনুরূপ পরিমাণ কোন অর্থ দেওয়া হয় নাই। তিনি আরও বলেন, উক্ত হিসাবের খাতায় যে সমস্ত খরচ দেখানাে হইয়াছে। তাহার কতকগুলি প্রকৃতপক্ষে করা হইয়াছে এবং কতকগুলি করা হয় নাই। সাক্ষী বলেন, ১৯৫৯ সনের কোন এক সময়ে একই দিনে হিসাবের খাতাটি ক্রয় করা হইয়াছে, হিসাব তৈয়ার করা হইয়াছে ও পুলিশের নিকট অর্পণ করা হইয়াছে।
ইতিপূৰ্ব্বে উক্ত মামলায় বাদী পক্ষের প্রথম সাক্ষী জনাব মুজিবর রহমান। চৌধুরীকে কিছু সময়ের জন্য বিবাদী পক্ষের কৌসুলী জেরা করেন। গতকল্য বাদী পক্ষের কৌসুলী উক্ত সাক্ষীর জেরা করেন।
ইহাছাড়া স্বরাষ্ট্র দফতরের (দুর্নীতি দমন) জনৈক অফিসারসহ বাদীপক্ষের আরও তিনজন সাক্ষীকে অদ্য জেরা করা হয়।
বিবাদী পক্ষের কৌসুলী জনাব সােহরাওয়ার্দীর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী, স্বরাষ্ট্র দফতরের (দুর্নীতি দমন) জনৈক সেকশনাল অফিসার বলেন, ১৯৫৮ সনের অক্টোবর মাসে সামরিক আইন জারি হইবার পর জনাব মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অপর দুইটি মামলায় তাহাকে খালাস দেওয়া হয়। বাদীপক্ষের তরফ হইতে জনাব মােয়াজ্জেম হােসেনসহ জনাব আজিজুদ্দিন আহমদ এবং বিবাদী পক্ষের তরফ হইতে জনাব আবদুস সালাম খান, জনাব জহিরুদ্দিন ও জনাব আজমসহ জনাব সােহরাওয়ার্দী উক্ত মামলা পরিচালনা করিতেছেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব