You dont have javascript enabled! Please enable it!

আজাদ
২৬শে মে ১৯৬০

মুজিবের মামলার শুনানী সমাপ্ত

৩১শে মে পর্যন্ত রায়দান স্থগিত গতকল্য (বুধবার) ঢাকা বিভাগের স্পেশাল জজ জনাব এ এস, এম রাশেদের এজলাসে প্রাক্তন প্রাদেশিক উজীর শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁহার ভ্রাতা শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির মামলার শুনানী সমাপ্ত হয়।
আগামী ৩১শে মে মামলার রায় দেওয়া হইবে। আদালতের কাজ শুরু হইলে জনাব শহীদ সােহরওয়ার্দী গতকল্যকার শেষ সাক্ষী এই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে জেরা করেন। তাঁহার জেরা সমাপ্ত হওয়ার পর আসামীরা তাঁহাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগ সম্পর্কে প্রদত্ত ৩৪২ ধারার বিবৃতিতে নিজেদের নির্দোষ বলিয়া দাবী করেন।
অতঃপর জনাব সােহরওয়ার্দী বলেন যে, তিনি মামলার গুণাগুণ সম্পর্কে সওয়াল জওয়াব করিবেন। কারণ আসামীদের খালাসের জন্য তাহাই যথেষ্ট। সুতরাং তিনি আদালতের এখতিয়ার ও সরকারী মনজুরীর বৈধতা সম্পর্কে ইতিপূর্বে উপস্থাপিত প্রশ্ন সম্পর্কে কোন সওয়াল জওয়াব না করিয়া উহা বিচারের ভার আদালতের উপরই ন্যস্ত রাখিবেন।
সরকার পক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব আজিজুদ্দীন আহমদ বলেন যে, আদালতে উপস্থাপিত দলিলপত্রে দেখা যায়, শেখ মুজিবর রহমান। উজীর হওয়ার পূর্বে আল আমীন ইন্ডাষ্ট্রিজের জন্য অনুমতি চাহিয়া যে দরখাস্ত করা হয়, তাহাতে শেখ আবু নাসেরের স্বাক্ষর নাই। শেখ মুজিবর রহমান উজীর হওয়ার পরই তাহার ভাইকে পুঁজি বিনিয়ােগ ছাড়াই তিন আনা অংশ দিয়া অংশীদার করা হয়। ইহা দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, এই পার্টনারশীপের ব্যাপারে শেখ মুজিবর রহমানের যােগাযােগ ছিল। অবশ্য সাক্ষীরা আসামীদের পক্ষে যাওয়ার এই ব্যাপারে কোন মৌখিক প্রমাণ দেওয়া যায় নাই বলিয়া তিনি স্বীকার করেন।
আদালতের প্রশ্নের জওয়াবে তিনি বলেন যে, আল আমীন ইন্ডাষ্ট্রিজের সঙ্গে আবু নাসেরের যােগাযােগ সম্পর্কে শেখ মুজিবর রহমান অবগত ছিলেন, তাহা কোন মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যায় নাই। আওয়ামী লীগ তহবিলের জন্য তাহাকে ১৫০০ টাকা দেওয়া সম্পর্কেও কোন মৌখিক সাক্ষ্য আদালতে আনা যায় নাই। কাগজপত্রে ইহার প্রমাণ পাওয়া গেলেও সাক্ষীরা আদালতে আসিয়া পুলিশের চাপে ঐসব কথা লেখা হইয়াছে বলিয়া জানাইয়াছে। জনাব আজিজুদ্দীনের সওয়াল জওয়াব সমাপ্ত হইলে জনাব সােহরওয়ার্দী জানান যে, এজাহারে এক কথা এবং চার্জশীটে অন্য কথা বলা। হইয়াছে, ইহাতেই আসামীরা মুক্তি পাইতে পারে। এজাহারে আওয়ামী লীগ তহবিলের জন্য শেখ মুজিবকে ১৫০০ টাকা দেওয়ার কথায় কোন উল্লেখ নাই। এজাহার প্রদানকারী অফিসার মামলা তদন্তকালে মুজিবর রহমান চৌধুরী ও আনােয়ার আলীর সহিত আলােচনা করে। এই টাকা দেওয়া হইয়া থাকিলে তাহারা নিশ্চয়ই তাঁহাকে তাহা বলিত। সুতরাং টাকা দেওয়ার এই ব্যাপারটা পরে আমদানী করা হইয়াছে।
জনাব সােহরওয়ার্দী আরও বলেন যে, আল আমীন ইন্ডাষ্ট্রিজ ১৯৫৬ সালে দরখাস্ত করে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাইবে কিনা এবং কাপড় ক্যালেণ্ডারিং কারখানার জন্য উক্ত টাকা দেওয়া হইবে কিনা, তাহা ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে স্থির হয় এবং উক্ত অনুমােদনের তালিকা জনাব রুহুল কুদুস ও অন্যান্য অফিসার শেখ মুজিবের অজ্ঞাত সারেই তৈরী করেন। সুতরাং এই ব্যাপার সম্পর্কে শেখ মুজিবর রহমানের কোন খবরই জানা ছিল না।
জনাব সােহরওয়ার্দী বলেন যে, দেশে সামরিক আইন জারী হওয়ার পর রাজনীতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এবডাে’, দুর্নীতি প্রভৃতি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে।
তিনি আরও বলেন যে, ব্যক্তিগত কোন বিরােধ না থাকিলেও বেচারা তদন্তকারী অফিসারকে এই মামলা আনিতে হইয়াছে।
সাক্ষীরা পূৰ্ব্বে কেন তাহাদের উপর পুলিশী চাপ সম্পর্কে অন্য কোথাও অভিযােগ জানায় নাই, এ সম্পর্কে জনাব সােহরওয়ার্দী বলেন যে, আদালত ছাড়া আর কোথায় তাহারা মনের কথা বলিতে পারিত। জনাব সােহরওয়ার্দীর সওয়াল জওয়াব শেষ হইলে আদালত আগামী ৩১শে মে মামলার রায়ের তারিখ ঘােষণা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব এম, এ আজিজ। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিল্পীরা আলােচনা, কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!