You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংবাদ
২৬শে মে ১৯৬০

শেখ মুজিবের মামলা শুনানী সমাপ্ত

ঢাকা, ২৫শে মে (এ,পি,পি)।- অদ্য এখানে সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী ও অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মুজিবর রহমান ও তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধে আনীত মামলার শুনানী সমাপ্ত হয়।
স্পেশাল জজ জনাব রাশেদের আদালতে অদ্য বাদী ও বিবাদী পক্ষের কৌসুলীদ্বয় তাহাদের নিজ নিজ পক্ষের বক্তব্য পেশ করেন। অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁহার ভ্রাতা শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধে সরকারী ক্ষমতা ও পদ অপব্যবহার করিয়া আর্থিক সুবিধাদি আদায়ের ব্যাপারে অপরাধমুলক অসদাচরণের অভিযােগ আনয়ন করা হইয়াছে। অদ্য উক্ত মামলার বাদী পক্ষের সাক্ষী গ্রহণ সমাপ্ত হইবার পর আদালত অভিযুক্ত শেখ মুজিবর রহমান ও শেখ আবু নাসেরকে তাহাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগসমুহ পাঠ করিয়া শুনান। উভয়েই নিজেকে নির্দোষী বলিয়া দাবী করেন।
এখানে উল্লেখযােগ্য যে, শুনানী শুরু হইবার পূর্বে বিবাদী পক্ষ হইতে উপরােক্ত মামলার বিচারে উক্ত আদালতের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করিয়া বলা হয় যেহেতু তিনি মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারী কর্মচারী ছিলেন না, সেইহেতু কোন স্পেশাল জজ তাঁহার বিচার করিতে পারেন না। বিবাদী পক্ষ হইতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান মামলার জন্য যথাযথ অনুমােদন গ্রহণ করা হয় নাই।
বাদী পক্ষের কৌসুলী জনাব আজিজুদ্দিন আহমদ বলেন, মন্ত্রী হইতেছেন একজন সরকারী কর্মচারী। কারণ সরকারী কর্মচারীর ন্যায় রাষ্ট্রীয় কার্য্য সম্পাদনে তিনিও রাষ্ট্র হইতে বেতন গ্রহণ করেন। এই সম্পর্কে তিনি পাকিস্তান দণ্ডবিধির ২১ধারার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মন্ত্রী হইতেছেন একজন সরকারী কর্মচারী এবং বর্তমান মামলার বিচার স্পেশাল জজ করিতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান মামলা শুরু করিবার পূর্বে যথাযথ অনুমােদন গ্রহণ করা হইয়াছে। গভর্ণরের আদেশ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারী অনুমােদন দান করিয়াছেন।
স্বীয় ভাষণদানকালে জনাব আজিজুদ্দিন বলেন, বাদী পক্ষের দুইজন প্রধান সাক্ষী বাকিয়া বসা ও প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাব থাকা সত্বেও যথেষ্ট পরিমাণ প্রামান্য তথ্য ও অবস্থাঘটিত প্রমাণ রহিয়াছে।
আদালতকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য তিনি বলেন, তাঁহারা বিশ্বাস করেন যে, বিবাদী পক্ষ সাক্ষীদের ভাগাইয়া লইয়াছে। কতিপয় বাদী পক্ষের সাক্ষী তাহাদের উপর চাপ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া আদালতে যে অভিযােগ করিয়াছে, সে বিষয়ের উল্লেখ করিয়া বাদী পক্ষের কৌসুলী বলেন, যেহেতু তাহারা কর্তৃস্থানীয় কোন ব্যক্তিকে উপরােক্ত বিষয়ে কিছুই বলেন নাই, সেইহেতু ইহা বুঝা যায় যে তাহাদিগকে ভাগানাে হইয়াছে। তিনি আরও উল্যেখ করেন, বিবাদী পক্ষ ইহা দেখার নাই যে, অভিযুক্ত ও সাক্ষীদের মধ্যে কোন বিদ্বেষ বর্তমান ছিল।
বিবাদী পক্ষ হইতে জনাব সােহরওয়ার্দী বলেন, সরকারী ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অপব্যবহার করিয়া আর্থিক সুবিধাদি গ্রহণ করা হইয়াছে বলিয়া শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে যে অভিযােগ আনয়ন করা হইয়াছে তাহা প্রত্যেকটি পয়েন্টে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হইয়াছে। তিনি বলেন, তাঁহার ভ্রাতা শেখ আবু নাসের ও ‘আল-আমীন ইণ্ডাষ্ট্রীজে’র অংশীদারদের মধ্যে কোন চুক্তি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত ছিলেন বলিয়া এরূপ কোন প্রমাণ নাই। জনাব সােহরাওয়ার্দী আরও বলেন, প্রাপ্ত প্রমাণাদি হইতে জানা যায় যে, উক্ত ঘটনার সহিত শেখ মুজিবর রহমান জড়িত ছিলেন না। তিনি আরও বলেন, শিল্প স্থাপনের অনুমতির জন্য শিল্প দফতরের ডিরেক্টর সুপারিশ করেন। সংশ্লিষ্ট সময়ে তাঁহার সহিত কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ ছিল এবং মান বিচার করিয়া অনুমােদন দান করা হয়। তিনি অন্যান্য অফিসারের সহিত আলােচনা করিয়া উহা করিয়াছেন। আল-আমিন ইন্ডাষ্ট্রীজের অংশীদারগণ তাহাদের ভিত্তিতে অনুমতি লাভ করে।
সাক্ষীদের উপ-দুর্নীতি দমন বিভাগের পুলিশেরা যে চাপ দিয়াছে বলিয়া অভিযােগ করা হইয়াছে ও তাহাদের উপর যে অবস্থা বিরাজ করিতেছিল তাহার উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন, কেবল মাত্র তাহাদের গ্রেফতারের যথার্থতা প্রমাণ করিবার জন্য শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে বৰ্ত্তমান মামলা ও পূর্বে কতিপয় মামলা দায়ের করা হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!