You dont have javascript enabled! Please enable it!

ইত্তেফাক
২০শে মে ১৯৬০

শেখ মুজিবুরের মামলার শুনানী শুরু

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (বৃহস্পতিবার) ঢাকা বিভাগের স্পেশাল জজ জনাব এ, এস, এম রাশেদের এজলাসে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁহার বিরুদ্ধে আনীত সরকারী পদমর্যাদার অপব্যবহার ও উহার দ্বারা আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযােগকে সাজানাে ও মিথ্যা বলিয়া অভিহিত করেন এবং এই ব্যাপারে নিজেকে নির্দোষ বলিয়া দাবী করেন।
উক্ত মামলায় অপর অভিযুক্ত শেখ আবু নাসেরও নিজেকে নির্দোষ বলিয়া দাবী করেন। দুর্নীতি অবলম্বনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করার জন্য শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধে অভিযােগ আনয়ন করা হয়।
এই মামলায় জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ সমর্থন করিতেছেন। এডভােকেট জনাব আবদুস সালাম ও জনাব জহীর উদ্দীন তাঁহাকে সাহায্য করিতেছেন। পক্ষান্তরে এডভােকেট জনাব এম, আজম শেখ আবু নাসেরের পক্ষ সমর্থন করিতেছেন ও জনাব কোরবান আলী এডভােকেট আজমকে সাহায্য করিতেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মামলার শুনানী বিশেষ করিয়া বিবাদীর প্রধান কৌসুলী জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর বক্তব্য শ্রবণের জন্য গতকল্য আদালতে এত অধিক জনসমাগম হয় যে, আদালত কক্ষ ও উহার উভয় দিকের বারান্দায় তিল ধারণের স্থান ছিল না।
গতকল্য মামলার শুনানী শুরু হওয়ার পূর্বে এডভােকেট জনাব আবদুস সালাম এই মামলা পরিচালনায় আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন যে, যেহেতু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারী কর্মচারী নহেন, সেইহেতু স্পেশাল জজের এজলাসে তাহার বিরুদ্ধে মামলা চলিতে পারে না। আদালত বিবাদীপক্ষের কৌসুলীর বক্তব্য রেকর্ড করিয়া উহা পরে বিবেচনার আশ্বাস দান করেন।
অতঃপর সরকার পক্ষে স্পেশাল প্রসিকিউটর জনাব আজিজুদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ আবু নাসেরের বিরুদ্ধে অভিযােগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করিয়া মামলার উদ্বোধন করেন। আদালত তদনুসারে উভয়কে আলাদাভাবে অভিযােগ পাঠ করিয়া শুনান। আদালত ভিন্ন ভিন্নভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ আবু নাসেরের বক্তব্য কি তাহা জিজ্ঞাসা করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তদনুসারে অভিযােগটি সম্পূর্ণ সাজান ও মিথ্যা এবং নিজেকে নির্দোষ বলিয়া ঘােষণা করেন। অনুরূপভাবে শেখ আবু নাসেরও নিজেকে নির্দোষ বলিয়া দাবী করেন। এই সময় আদালতের কার্য শেষ হইয়া যায়। অদ্য (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ৭টায় নিয়মিত শুনানী শুরু হইবে।

অভিযােগের বিবরণ
অভিযােগের বিবরণে বলা হয়ঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মােহাম্মদ আনােয়ার আলী, হাজী সেকেন্দার আলী ও গােলাম হায়দার চৌধুরীর অংশীদারিত্বে আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ জেলার সতীহাটিতে একটি কাপড় ক্যালেণ্ডারিং কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। ১৯৫৬ সনের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ প্রদেশে মন্ত্রিসভা গঠনের পূর্ব পর্যন্ত উক্ত লাইসেন্স মঞ্জুর বা বাতিল না হইয়া পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিল্প বিভাগে পড়িয়াছিল। শেখ মুজিবুর রহমান বাণিজ্য, শিল্প ও শ্রম বিভাগের মন্ত্রী হওয়ার পর উক্ত ফার্মের অংশীদার মুজিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ কয়েক ব্যক্তি শেখ মুজিবুরের ১৫নং আবদুল গণি রােডে অবস্থিত সরকারী বাসভবনে উক্ত লাইসেন্স প্রদানের অনুরােধ
জ্ঞাপন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁহার ছােটভাই শেখ আবু নাসেরের মাধ্যমে শর্ত হিসাবে আওয়ামী লীগ তহবিলে ১৫০০ টাকা চাঁদা দাবী ও তাহার ছােট ভাই শেখ আবু নাসেরকে বিনা পুঁজিতে তিন আনা শেয়ার প্রদানের প্রস্তাব করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান কোন উপায়ন্তর না দেখিয়া ১৯৫৭ সনের ২রা ফেব্রুয়ারী হইতে ১৪ই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে শেখ আবু নাসেরের মাধ্যমে উক্ত ১৫শত টাকা প্রদান। ও শেখ আবু নাসেরকে পার্টনার হিসাবে গ্রহণ করিয়া একটি পার্টনারশীপ দলীল সম্পাদন করে। এইরূপে শেখ মুজিবুর রহমান স্বীয় পদমর্যাদার অপব্যবহার করিয়া তাহার ভাইয়ের জন্য বিনা পুঁজিতে আল আমিন ইণ্ডাষ্ট্রীজএর শেয়ার গ্রহণ ও আওয়ামী লীগের জন্য অথবা নিজে উপরােক্ত ১৫ শত টাকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। অতএব, তিনি ১৯৪৭ সনের ২নং আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী দণ্ডযােগ্য অপরাধ করিয়াছেন।
শেখ আবু নাসের উপরােক্ত অপরাধে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করিয়াছেন বলিয়া তাহাকে উক্ত আইনের ৫(২) ধারা ও পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত করা হইয়াছে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!