You dont have javascript enabled! Please enable it!

৩০ মার্চ ১৯৭১ঃ বাহিনী পুনর্গঠন ও প্রতিরোধ যুদ্ধঃ দিনাজপুর-রংপুর

রংপুর
৪৮ পাঞ্জাব ও ৪ এফ এফ যোগদানের পর হানাদার পাকবাহিনী রংপুর শহর সহ গ্রামগঞ্জের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে মানুষ হত্যা ও নির্মম পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে এবং আগুন জ্বালিয়ে বাড়িঘর মহল্লা গ্রাম ধ্বংস করতে থাকে। রংপুর ইপিআর দশম উইং এর সহকারী কমাণ্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজিশ আহমেদ পরিবার পরিজন লালমনিরহাট পাঠিয়ে দিয়ে কয়েকজন ইপিআর নিয়ে পালিয়ে তিস্তা নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নেন। সেখানে থেকে তিনি পুলিশ, বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সৈন্য, ছাত্র, ইপিআর সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করেন। পাক বাহিনী সংবাদ পেয়ে তাদের উপর শেলিং করা শুরু করে। পাক বাহিনীর একটি অংশ শেলিং এর পর তিস্তা ব্রিজ ধরে উত্তর পারে অবস্থা জানার জন্য আসে। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ এর বাহিনী তাদের উপর আক্রমন করলে পাক কোম্পানি কমান্ডার এজাজ সহ ৮ জন নিহত হয়। মে মাসে নিয়াজি লালমণিরহাট সফরে এসে তিস্তা রেল ব্রিজের নামকরন করেন এজাজ সেতু। 


দিনাজপুর
পঞ্চগড়ে আনসারের সহকারী এডজুটেনট ইপিআর বাহিনীকে সংগঠিত করে তাদের দুটি সেক্টর করে নিয়োজিত করেন। পঞ্চগড়ের কম্যান্ডে থাকেন সুবেদার আবুল হাসেম রুহিয়ার কম্যান্ডে থাকেন নায়েব সুবেদার হাজী মুরাদ আলী। ২৬-২৯ তারিখ পর্যন্ত বিওপি ও উইং এ বিদ্রোহ আক্রমন ও পাল্টা আক্রমনে বাঙ্গালী ইপিআর এর দুজন নিহত একজন আহত হয়। পাক ইপিআর আর ১১৫ জন নিহত হয়। ৩০ তারিখের মধ্যে প্রায় এক ব্যাটেলিয়ন আনসার ও মুজাহিদ একত্রিত করা হয়। তাদের প্রশিক্ষন চলতে থাকে। এই বাহিনী ঠাকুরগাঁও নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে হাবিলদার নুর মোহাম্মদের প্লাটুনকে ঠাকুরগাঁও বিমানবব্দরের দায়িত্ব দেয়া হয়। সুবেদার মতিউর রহমানের ইপিআর এর বাহিনী ঠাকুরগাঁও ইপিআর উইং আক্রমন করে সুবিধা করতে পারেনি। পরে সেখানে সুবেদার হাফিজের দল প্রানপন আক্রমন করে পাক বাহিনীকে উৎখাত করে। সেখানে ইপিআর এর পাকিস্তানী উইং কমান্ডার মেজর টি হোসেনকে তার বাংলোয় বাঙালী ইপিআররা হত্যা করে। পরে সুবেদার মতিউরের দল ইপিআর মেস আক্রমন করে তাদের কয়েকজন এনসিওকে হত্যা করে ঠাকুরগাঁও পাক ইপিআর মুক্ত করেন। ঠাকুরগাঁও এর এমপিএ ফজলুল করিমের নেতৃত্ব এ ঠাকুরগাঁও এ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়। ঠাকুরগাঁও ইপিআর এর সকল বিওপি থেকে ইপিআর সৈন্যরা ঠাকুরগাঁও এসে সকল ইপিআর এবং স্থানীয়রা সুবেদার মেজর কাজিম উদ্দিনকে মেজর পদ উপাধি প্রদান করেন। পঞ্চগড়ের বাহিনী ৩ বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আশরাফের সি কোম্পানির সাথে লিঙ্ক স্থাপনে সমর্থ হয়। সৈয়দপুরে পাকবাহিনীর হামলায় এই দলটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় কাঞ্চন নদীর কাছে চেহেল গাজী মাজার ও গুঘুডাঙ্গায় পাক বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী বাঙালি সৈন্যদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। ক্যাপ্টেন আশরাফের বাহিনী ভুষির বন্দরে পাক আক্রমন প্রতিরোধ করে চম্পাতলিতে দিফেন্স তৈরি করে।  এখানে পাক বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাত্রে বাহিনী দিনাজপুরের এমপিএ আব্দুর রহিম এবং এমএনএ শাহ মাহতাবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলে তারা যতদুর সম্ভব সাহায্য করা শুরু করে। পাক বাহিনী কিছু বাঙালী অফিসার হত্যা করতে পারে এধরনের সংবাদ পেয়ে রাতে ইপিআর বাহিনী দিনাজপুরের প্রায় সকল ঊর্ধ্বতন অফিসারদের পরিবার সহ উদ্ধার করে কাঞ্চন রেলস্টেশনে নিয়ে আসে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!