You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৯ মার্চ ১৯৭১: কলকাতার পথে তাজ উদ্দিন

সকালে নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। নাড়ারটেক পৌঁছাতে তিন ঘণ্টা লাগল। ঘাটে পৌঁছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে দেখা। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন খবরাখবর জানলাম এবং শুনলাম সেনাবাহিনী তখনও ফরিদপুরের আশপাশে আসেনি। এই ঘাট থেকে ফরিদপুর শহর তিন মাইল। জায়গাটা নিরাপদ নয়। যে কোনো মুহূর্তে সেনাবাহিনী এসে যেতে পারে, তাই সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। দ্রুত যাবার যানবাহন নেই। এখানে ঘোড়ায় চলাচলের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সৌভাগ্যক্রমে ঘোড়া পাওয়া গেল। ঘোড়ায় চড়ে আমরা শহরের উপকণ্ঠে গিয়ে শহরে ঢুকলাম না। শহরে ঢুকলাম রিকশায় করে। এমনটি করবার কারণ ছিল যাতে আমরা চিহ্নিত না হয়ে যাই। দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে আওয়ামী লীগ কর্মী (পরবর্তীতে এমপি) ইমামউদ্দিনের বাড়ি পৌঁছলাম। তিনি বাড়ি ছিলেন না। তার স্ত্রী হাসি আমাদের খেতে বসালেন। খেতে বসবার একটু আগে রেডিওতে জিয়াউর রহমানের ঘোষণা ( ঘোষণা শুনার বিষয় হলে তারিখ ৩০ মার্চ হওয়ার কথা)শুনলাম। সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে সন্দেহ হলো এই জন্য যে, যদি সে এই ঘোষণার সঙ্গে সরকার গঠনের ঘোষণা প্রচার করে অথবা সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে তাহলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ বিশ্ববাসী সে সরকারকে বাংলার জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার হিসেবে গণ্য করবে না এবং স্বীকৃতি দেবে না। কেননা বাংলার মানুষের আস্থা আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বের ওপর, সামরিক সরকারের ওপর নয়। খাওয়া তখনও হয়নি এমন সময় খবর ছড়িয়ে পড়ল কামারখালি দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা এগিয়ে আসছে। তাই আবার পথে বেরিয়ে পড়লাম। পথে রাজবাড়ীর এসডিও শাহ মোহাম্মদ ফরিদের সঙ্গে দেখা। তিনি খবর দিলেন সীমান্ত ভালো আছে। রিকশা নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করলাম। কিন্তু পথ বন্ধ। মুক্তিকামী বাঙালি ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা সমস্ত পথে বড় বড় গাছ কেটে ব্যারিকেড দিয়েছে।

তাই পায়ে হেঁটে কামারখালিতে উপস্থিত হলাম।  সামনে মধুমতি নদী। বৃষ্টি পড়ছে। ভয়ঙ্কর মেঘাচ্ছন্ন, রুদ্র মূর্তি আকাশের। আরোহী অনেক কিন্তু কোনো নৌকাই নদী পার হতে রাজি হচ্ছে না। এক বৃদ্ধ মাঝি ওপারে বাড়ি, তাকে অনেক বলে কয়ে রাজি করানো হলো। মধুমতি নদী পার হয়ে আবার সেই চলা। রাত আড়াইটায় মাগুরায় পৌঁছালাম। সামনে খাল। আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ছেলেরা সযত্নে খাল পাহারা দিচ্ছে। দুজন করে খাল পারের ব্যবস্থা করছে এবং প্রত্যেককেই তল্লাশি করছে। আওয়ামী লীগ কর্মী ওয়াহেদ মিঞা আমাকে চিনে ফেলল। যখন খাল পার হলাম রাত তখন তিনটা। রিকশা করে সোহরাব হোসেনের(পরে মন্ত্রী) বাড়িতে গেলাম। তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তার ভাগিনা বাবু আমাদের নিয়ে আবার নদী পার করে সোহরাব হোসেনের কাছে নিয়ে গেল। আমাকে দেখে সোহরাব হোসেন অবাক এবং সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহিত হলেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!