আলােচনা
পদ্মা মেঘনা যমুনা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস লেখা নিয়ে ইদানিং পশ্চিমবঙ্গে একটা হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বলা বাহুল্য অধিকাংশ লেখকের সত্যিকার ইতিহাস না শিখে জমানাের জন্য নিজের মনগড়া কাহিনী লিখে অর্থোপার্জনের চেষ্টায় মত্ত। ইতিহাস লেখার নামে এ ধরনের লেখকরা যে অপরাধ করছেন তা অমার্জনীয়। ইতিহাসকে বিকৃত করা সত্যের অপলাপের জন্য এদের নৈতিকতা ইতিহাসে চিরদিন প্রশ্নযােগ্য হয়ে থাকবে। ‘দেশ’পত্রিকায় ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ ৮ই শ্রাবণ সংখ্যায় শ্রী এম আর আখতারের লেখা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা পড়ে এক দিকে যেমন বিস্মিত হয়েছি, অন্য দিকে তেমনি ক্ষুব্ধ হয়েছি। দেশ পত্রিকা এই উপমহাদেশের একটি উঁচু দরের পত্রিকা। এ পত্রিকায় যারা ইতিহাস বিকৃত করতে চান তাদের অন্তত ঐতিহাসিকের সামান্যতম সত্যনিষ্ঠা থাকতে হবে। শ্রী এম আর আখতার সামান্যতম সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দেননি। এবং এইজন্য আপনার পত্রিকায় প্রকাশের জন্য এই প্রতিবাদটুকু পাঠালুম। শ্ৰী আখতার লিখেছেন, ১৯৪৮ সালের ৯ই মার্চ ঢাকার একটি বিক্ষুদ্ধ মিছিল সেক্রেটারিয়েট ফার্স্ট গেটের সামনে হাজির হতেই “মিছিলের একজন হ্যাংলাপানা পান্ডা গােছের ছাত্র নেতা হঠাৎ করে পুলিশ অফিসার শামসুদ্দোহার উপর ঝাপিয়ে পড়লাে” ইত্যাদি। তবে ছাত্র নেতাটাকে তখনই গ্রেফতার করা হলাে। ইনিই হচ্ছেন আজকের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।” নিতান্ত বিনয় সহকারে বলতে হয় উপরের বর্ণনাটি সম্পূর্ণ অসত্য। শ্ৰী আখতারের কথামতাে শেখ মুজিবর রহমান ৯ই মার্চ গ্রেফতার হন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শেখ মুজিবুর রহমান ১১ই মার্চ সকাল বেলা সামসুল হক, অলি আহাদের সাথে একসঙ্গে আব্দুল গণি রােডের প্রথম গেটে পিকেটিং করা কালে গ্রেফতার হন। পিকেটিং চলাকালে সামসুল হকের সাথে পুলিশ অফিসারের তর্কবিতর্ক হয় এবং পুলিশ লাঠি চার্জ করে। এবং পর পরই সামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান এবং অলি আহাদকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সুতরাং শ্ৰীআখতার বর্ণিত কাহিনী ইতিহাস নয়, অলীক কল্পনা মাত্র। আখতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘট সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন, “এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য শেখ মুজিবুর আহ্বান জানালেন।” কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে নয় তবে অতিকথন হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ধর্মঘটে সহযােগিতা করে প্রধানত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রনেতাদের অন্যতম, একমাত্র কিংবা প্রধানতম নেতা নন। দ্বিতীয়ত তার লেখা পড়ে মনে হয়, শেখ মুজিবুর রহমানকে বােধ হয় বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু কথাটা আদপে সত্যি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ধর্মঘটে সহযােগিতা দানের জন্য যে ২১ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হয়, তাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের পনেরাে টাকা জরিমানা করেছিলেন। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি অঙ্গিকারনামা ছাপিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান অবশ্য এই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেননি এবং প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে দেন।
শ্রীআখতার এক জায়গায় বলেছেন, “একাত্তরে বাংলাদেশে সশস্ত্র বিপ্লবেও এই ছাত্র লীগ পুরােধায় রয়েছে। এরাই আজ দলে দলে মুক্তিফৌজে শামিল হচ্ছে।” শ্রীআখতারের এই মন্তব্যটিও একপেশে মন্তব্য। বাংলার স্বাধীনতাযুদ্ধে আজ বাংলাদেশের প্রতিটি ছাত্র দলমত নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেছে এবং করছে। এই অবস্থায় তার একপেশে মন্তব্য মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিকারকই হবে।
টাঙ্গাইল উপনির্বাচন সম্পর্কে বলতে গিয়ে শ্রীআখতার লিখেছেন, ‘আর এলেন সিলেটের গণভােটের বিজয়ী বীর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।” ১৯৪৯ সালের ২৬শে এপ্রিল টাঙ্গাইল উপনির্বাচন হয়। কিন্তু মাওলানা ভাসানী ঐ সময়ে আসামের ধুবড়ী জেলে বন্দী ছিলেন। মাওলানা ভাসানী আসাম থেকে চলে আসার পর টাঙ্গাইল থেকে পূর্ব বাংলার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। খুররম খানের আবেদনক্রমে মাওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল হয়। নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর মাওলানা ভাসানী বন্ধুবান্ধব ও শিষ্যদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আসাম প্রদেশের ধুবড়ী শহরে উপস্থিত হলে ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি ধুবড়ী শহরে তিনি গ্রেফতার হন। হযরত আলী নামে সামসুল হক সমর্থক একজন কর্মী সেখানে ভাসানীর সহিত সাক্ষাৎ করে সামসুল হকের সপক্ষে একটি ইস্তিহারে তার স্বাক্ষর নিয়ে আসেন। সুতরাং শ্রীআখতারের এ সম্পর্কে বক্তব্য বিন্দুমাত্র সত্য নয়। টাঙ্গাইল নির্বাচনের মূল সংগঠক ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মােস্তাক আহমদ। শ্রীআখতার ১৯৫০ সালে দাঙ্গা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র দাঙ্গা বিরােধী একটি মিছিল বের করলে নবাবপুরে রেলওয়ে ক্রসিং-এ পুলিশ বেপরােয়া লাঠি চার্জ করে এদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অন্যান্য ছাত্রনেতাদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানও শান্তি মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।” শ্রীআখতারের এই বর্ণনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রথমত, সেদিন যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন, শ্রীনুরউদ্দিন, আখলাকুর রহমান, গাজীউল হক, খালেক নেওয়াজ খান, সৈয়দ মােহাম্মদ আলী, সাদেক খান, রুহুল আমিন কায়সার এরা। শেখ মুজিবর রহমান তখন জেলে সুতরাং তার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা উঠতেই পারে না। দ্বিতীয়ত, সেদিন শান্তি মিছিলের ওপর পুলিশ কোন লাঠি চার্জই করেনি। নওয়াবপুর গেটে পুলিশ নিরাপত্তার জন্যে ছাত্র মিছিলটি গতিরােধ করে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. মােয়াজ্জেম হােসেন, ড. শহীদুল্লাহ, ড. ওসমান গনি প্রভৃতি ছাত্রদের ফিরিয়ে আনেন এবং বর্ধমান হাউসে নুরুল আমীনের বাসভবনে উপস্থিত হন। মিছিলটি বর্ধমান হাউসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে দাঙ্গা বন্ধের জন্যে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
আর একটা বিষয়ে ঐতিহাসিক (?) শ্রীআখতার মারাত্মক ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন। তিনি বাংলার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বগুড়ার মােহাম্মদ আলী, শ্রমিক নেতা ডা. আব্দুল মালেক এবং কুমিল্লার তােফাজ্জল আলীকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বলেছেন। তা ছাড়া তিনি লিখেছেন, “পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী লিয়াকত আলী খান নুরুল আমীনের পরামর্শে ১৯৪৯ সালের শেষভাগে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে বগুড়ার মােহাম্মদ আলীকে বর্মায় রাষ্ট্রদূত, আর ড, মালেক এবং জনাব টি আলীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেন।” এ ধরনের মিথ্যা বর্ণনা সত্যিই লজ্জাজনক। কারণ মােহাম্মদ আলী, মালেক কিংবা তােফাজ্জল আলী কেউই আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন না। আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয় ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন। অথচ মােহাম্মদ আলীকে বর্মায় রাষ্ট্রদূত এবং মালেক ও টি আলীকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হয় জিন্নাহ সাহেবের (লিয়াকত আলী খান নয়) নির্দেশে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের শেষে। পরিশেষে বলতে চাই, পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ইতিহাস লিখতে যেয়ে শ্ৰী আখতার নিজের ইতিহাস লিখুন তাতে বিশেষ আপত্তি নেই। কারণ, তাতে বাংলাদেশের ইতিহাস বিশেষ কলংকিত হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনে ইতিহাসকে এবং ঐতিহাসিক সন্তানকে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার জলে ডুবিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করবেন এটাকে কিছুতেই মেনে নেয়া যেতে পারে না। কারণ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের জীবন্ত ইতিহাস।…
সূত্র: দেশ : ২৯ শ্রাবণ,১৩৭৮
পূর্ব বাংলায় নজরুল
মহাশয়, হাসান মুরশিদের লেখা পূর্ব বাংলায় নজরুল প্রবন্ধটিকে অপছন্দ করে শেখ দরবার আলম সাহেব যে ভাষায় উন্মা প্রকাশ করেছেন (সংখ্যা ৩৮) সেটা কী উপযুক্ত হয়েছে ?
পূর্ব বাংলায় ষষ্ঠ দশকে নজরুল চর্চা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, এমনকি হয়তাে প্রাপ্যের চেয়েও বেশি-একথা লেখায় হাসান মুরশিদের ওপর আলম সাহেব বেজায় চটেছেন। তিনি বলেছেন, এসব স্থূল কথাবার্তা লেখকের বিচারবুদ্ধি স্বচ্ছ নয়, তিনি কোন খোজখবর রাখেন না। মতামতটা এতটা চূড়ান্তরকম না দিলেই পারতেন আলম সাহেব। কারণ হাসান মুরশিদ সাহেব বােধ হয় ঠিক কথাই বলেছেন। খোজ-খবর রাখেন না হাসান মুরশিদ সাহেব নন, আলম সাহেব নিজে। পাকিস্তান টেকস্ট বুক বাের্ডের ফতােয়াগুলির (সিলেবাস সংক্রান্ত) দিকে আলম সাহেব যদি নজর ফেলেন তাহলেই অনেককিছু তার পক্ষে বােঝা সহজ হবে। বাংলা ভাষাকে রাতারাতি ইসলামের তাহজিব-তমদুনের ঢালাই মেশিনের ছাঁচে ফেলে কেমন করে তৈরি করতে হবে তারই সুন্দর ব্যবস্থাপত্র ছিল ওখানে। একটি জীবন্ত ভাষা যে কোন ধর্মের দাস্যবৃত্তি করতে পারে না একথা কে কাকে বােঝাবে নয়া তুঘলকী জমানায়। সরকারী দাপটে ষষ্ঠ দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষা যে চেহারাখানা দাঁড়িয়েছিল তা দরবার আলম সাহেবের সতর্ক দৃষ্টিকে কেমন করে ফাকি দিল বুঝতে পারা কঠিন। রেডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বর্জন এবং তা নিয়ে ছাত্র ও শিল্পীদের আন্দোলন ত একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। আর সংবাদপত্রের মধ্যমণি আজাদ পত্রিকা তাে রবীন্দ্রনাথকে ঘাের সাম্প্রদায়িক কবি বলে চিহ্নিত করে ফেলেন। এ সম্পর্কে সম্পাদকীয় পর্যন্ত লেখার প্রয়ােজন হয়েছিল উক্ত সরকার পােষা সংবাদ পত্রটির। পক্ষান্তরে ওঁরা নজরুলকে শ্রদ্ধার অর্ঘে প্রায় শূন্যে তুলে ফেলেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে ওঁরা এমনই নীলকণ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন যে, ভুলে গিয়েছিলেন নজরুলকে নিজেরাই কাফের বলে গালি দিয়েছিলেন, অবশ্য দুই যুগ আগে। আসলে অ-মুসলমান বলে রবীন্দ্রনাথকে ছােট করে দেখতে হবে এবং নজরুল যেহেতু মুসলমান তাই তিনি তুলনামূলকভাবে বড় কবি। নজরুলকে ওরা বললেন পাকিস্তানের জাতীয় কবি। বুঝতে কষ্ট হয় কোন বিবেচনায় নজরুলের এমন মর্যাদাপ্রাপ্তি। পাকিস্তানের নাগরিকত্ব তিনি গ্রহণ করেন নি, স্বতন্ত্র ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কলম ধরেন নি। তবু তিনি পাকিস্তানের জাতীয় কবি। নজরুল সম্পর্কে উৎসাহের প্রাবল্যের জোয়ার এমন করে চারদিক ভাসিয়ে দিল যে রামা-শ্যামা সকলেই সাহিত্যের আসরে পণ্ডিতবচন কপচাতে লাগলেন। একসময় বটতলার উকিল মােনায়েম খাঁ পর্যন্ত-যার বাংলা উচ্চারণ শুধুই হাসির খােরাক যােগায়-নজরুল প্রশস্তির সাত কাহন গাইতে রেডিওতে ‘টক’ দিয়ে দিলেন। পত্রের এক জায়গায় আলম সাহেব লিখেছেন… ‘কেউ কারাে শিল্পকর্মের ভাড়া খাটেন নি। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই হয়েছিলেন, নজরুল হয়েছিলেন নজরুল। ভালাে কথা, কে অস্বীকার করছে। রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই নজরুল হতে পারতেন না, কিংবা নজরুল পারতেন না রবীন্দ্রনাথ হতে। কিন্তু ভাড়া খাটাখাটি এসব আবার কী ধরনের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রের মুখে এমন ভাষা শােভা পায় কি, বিশেষত কথাটা যখন বলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলকে নিয়ে?
-মনােজ সাহা
মধ্যগ্রাম
আমি তােমায় ভালবাসি
গত ২৪ জুলাইয়ের ‘দেশ’ এ আলােচনায় শিবপ্রসাদ বসুর চিঠি দেখে বিস্মিত হলাম। তিনি আবু সায়ীদ আয়ুবের পত্রের সমালােচনায় বলেছেন, বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক বদরুদ্দীন উমর, ক্যাপ্টেন তােহা মাওপন্থী। কিন্তু বাংলাদেশে মাওপন্থী বা নকশালপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় নি। তাঁর এই মন্তব্য একান্তই তাঁর নিজস্ব। সেটা প্রমাণিত হবে গত ২৯শে মার্চ ১৯৭১ ইং আনন্দবাজারে প্রকাশিত ‘যার হাতে গেরিলা যুদ্ধের ভার’ শিরােনামের সংবাদে। এত স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, বর্তমান গেরিলা যুদ্ধের (বাংলাদেশে) নায়ক বা ক্যাপ্টেন তােহা এবং মাওপন্থী, রুশপন্থী নির্বিশেষে সকলেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত অংশ গ্রহণকারীদের কাছ থেকে আমরাও এর সমর্থনই পেয়েছি।
দ্বিতীয়ত, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বদরুদ্দীন উমরের বলিষ্ঠ প্রতিবাদ সত্ত্বেও শিববাবু তাকে সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট ভেবেছেন। তাঁর এই বক্তব্যের অসারতা বদরুদ্দীনের পাঠক মাত্রই স্বীকার করেছেন। বিশেষ কতগুলাে দাঙ্গার উল্লেখ-অনুল্লেখই মুখ্য নয়, মূখ্য হলাে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
– সঞ্জীবকুমার দাশ, শিলং
দেশ, ২৯ শ্রাবণ, ১৩৭৮