মুসলিম লীগ
‘দেশের’ ৩১ শে জুলাই ৭১’ এর আলােচনা বিভাগে মাননীয় নজরুল ইসলাম মহাশয়ের আলােচিত অংশ পড়তে গিয়ে দুটি বিষয়ে কোথায় যেন একটু খটকা লাগল। প্রথম হচ্ছে, আমার যতদূর স্মরণ আছে। ‘মুসলিম লীগ সৃষ্টি হয় ১৯০৭ সালে। বােম্বের এক সুবিখ্যাত বণিক আদমজী পিরােভাই এর সভাপতিত্বে ২৯শে ডিসেম্বর করাচিতে দলের সর্বপ্রথম সম্মেলন বসে। এটাই ভারতে মুসলিম লীগের আদি সম্মেলন। এরপর ১৯৪০ সালে ফজলুল হক, আব্দুল হক, আবুল হাসিম নামীয় কিছু সংখ্যক বলিষ্ঠ ও স্মরণীয় নেতৃবর্গের সহায়তায় লাহাের সম্মেলনের সময় থেকেই দলের পুষ্টতা এবং শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে ১৮৫৭ সালের মহা বিদ্রোহ ও সিপাহী বিদ্রোহ। ওটা সর্বপ্রথম সূচীত হয় ধর্মভিত্তিক। জাতীয়তায় বা স্বদেশীকতায় নয়। বিশিষ্ট রাজনৈতিকের (অনেকের মতে নন্দকুমার) নেপথ্য ইঙ্গিতে বিদ্রোহটির জাতীয়তায় শুধু রূপান্তরিত বলা চলে।
কৃষ্ণজীবন দাস
কান্দি
পদ্মা মেঘনা যমুনা
২২শে শ্রাবণ ১৩৭৮ সংখ্যা ‘দেশ’ ধারাবাহিক পর্যালােচনা ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ তে শ্রীআখতার এক জায়গায় লিখেছেন- ‘একথা আজ নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙ্গালি মুসলমান ভােটাররা মুসলীম লীগের ধর্মীয় জিগির অপেক্ষা অর্থনৈতিক কর্মসূচীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েই ভােট দান করেছিলেন। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শ্রীআখতারের এই উক্তিকে পুরােপুরি মেনে নিতে পারছি না। ১৯৪৬ এর নির্বাচনের সময় উত্তর বঙ্গে ছিলাম। সেই কেন্দ্রের জাতীয়তাবাদী মুসলীম প্রার্থী ছিলেন আবু হােসেন সরকার (যিনি পরে পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন)। ঐ অঞ্চলের নিম্নবিত্তদের অধিকাংশই মুসলমান এবং তেলওয়ালা, দুধওয়ালা, তরকারিওয়ালারা যারা বাসাতে এসে বা বাজারে বসে এইসব পণ্য বিক্রি করত তাদের প্রায় সবাই ছিল মুসলমান। অনেকের সঙ্গেই ভােটের ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছি। প্রায় সকলেই এ কথা বলেছে যদি লােক দেখতে হয় তাহলে তবে আবু হােসেনেরই ভােট পাওয়া উচিত। কিন্তু তাকে ভােট দিতে মােল্লারা বারণ করেছে। সুতরাং অধিকাংশ ভােটই পড়ল আবু হােসেন সরকারের বিপক্ষে। পরেও অনেক মুসলমানদের বলতে শুনেছিভালাে লােকটা হেরে গেল। কিন্তু কি করা যায় ওকে ভােট দিলে মসজিদে ঢুকতে দিবে না মৌলভীরা। সুতরাং এ থেকেই বােঝা যায় যে ১৯৪৬ এর নির্বাচন ধর্মীয় জিগিরের ফল কি না! যে অর্থনৈতিক কর্মসূচীর কথা শ্রীআখতার লিখেছেন, সেটা লীগের উচ্চবিত্ত নেতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
মানস মৈত্র
ভিলাই মধ্যপ্রদেশ
সূত্র: দেশ, ২৫ ভাদ্র ১৩৭৮