ভুট্টো যে হঠাৎ পিকিং-এ-মতলব কী?
আবদুল গাফফার চৌধুরী
পাকিস্তান পিপলস্ পারটির নেতা মি. জুলফিকার আলি ভূট্টোর নেতৃত্বে যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পূর্ণ একটি প্রতিনিধিদল গত ৫-নভেম্বর তারিখে হঠাৎ পিকিং-এ পৌছেছেন। এটি পাকিস্তানের সরকারী প্রতিনিধিদল। এই দলে আছেন বিমানবাহিনীর অধ্যক্ষ এয়ার মারশাল এ রহিম খান, পররাষ্ট্রসচিব সুলতান মুহম্মদ খান সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান খাঁ, নৌবাহিনীর অধ্যক্ষ অ্যাডমিরাল এ রশিদ, বৈদেশিক অফিসের ডিরেক্টর জেনারেল আফতাব আহমেদ খাঁ প্রমুখ কয়েকজন বিশিষ্ট সামরিক ও অসামরিক কর্তা। চীনের প্রধানমন্ত্রী মিঃ চু এন লাই-এর সঙ্গে এই প্রতিনিধিদলের কি ধরনের কথা বার্তা হচ্ছে, সম্পর্কে পাকিস্তানী পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়েছে, অস্ত্র সাহায্য এবং পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সহযােগিতা নিয়ে আলােচনা হচ্ছে।’
প্রকাশিত খবরের বৈশিষ্ট্য, মিঃ ভুট্টোকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভুট্টো পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। সাম্প্রতিক কালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে তার মতপার্থক্যের কথা সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়েছে। ইতিপূর্বে ভুট্টো প্রকাশ্যে অভিযােগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার দলে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এই কিছু দিন আগে তিনি হুমকি দিয়েছেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর যদি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন না বসে, তাহলে তিনি বাজারে জনগণের পরিষদ’ আহ্বান করবেন।-এটাকে কেউ কেউ স্পষ্টভাবেই পাকিস্তানের মিলিটারি জুনটার সঙ্গে মি. ভুট্টোর ক্রমবর্ধমান বিরােধের পরিণাম বলে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তারপরই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ দূতরূপে মি. ভুট্টোর তেহরান ও কায়রাে উপস্থিতি এবং পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তানের সামরিকবাহিনীর তিন প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে একেবারে পিকিং-এ আতিথ্য গ্রহণের খবর অনেককে বিস্মিত করেছে সন্দেহ নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ইউরােপ ও আমেরিকা ভ্রমণের সময়সূচির সঙ্গে প্রায় তাল মিলিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ায় বিশেষ দূত হিসেবে মি. ভুট্টোর মধ্যপ্রাচ্য ও চীন ভ্রমণের খবর নিশ্চয়ই তাৎপর্যপূর্ণ । এই খবরটি অনেকের কাছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ, মনে হবে এই কারণে যে, ওয়াশিংটনে গান্ধী-নিকসন বৈঠক সমাপ্তির খবরের পাশাপাশি পিকিং এ চু-ভুট্টো বৈঠক শুরু হওয়ার খবর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অস্থির ও অনিশ্চিত রাজনীতির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের পাল্টা কূটনৈতিক তৎপরতা বলে তারা গণ্য করতে পারেন।
* * *
এখানেই প্রশ্নটি ওঠে, সাম্প্রতিক ইয়াহিয়া-ভুট্টো বিরােধ-আরও ব্যাপক অর্থে পাকিস্তানী সামরিক জুনটার সঙ্গে মি. ভুট্টোর মন কসাকষির-কি তাহলে একেবারেই উড়াে খবর? গত দু কি তিন সপ্তাহে এমন কি ঘটল, সেজন্য মি. ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে সামরিক জুটনার ওপর চাপ প্রয়ােগ বন্ধ রেখে একেবারেই তাদেরই বিশেষ দূত হয়ে বহির্বিশ্বে ছুটে বেড়াচ্ছেন? বস্তুত এ দুটি প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই পাকিস্তানের জঙ্গী রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ও চরিত্রের আসল পরিচয় লুকানাে রয়েছে। মি. ভুট্টোর মিথ অব ইনডিপেনডেনস’ বইটি যারা পাঠ করেছেন তারা জানেন, ভুট্টোর রাজনৈতিক দর্শন এশীয় রাজনীতিতে স্থায়ী ভারত-বিরােধিতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। মি, ভুট্টো তার বাইরে এই শতকে সামাজিক শক্তির পতন ও বিশ্বশক্তির অভুদ্যয় এবং বিশ্বশক্তি থেকে মহাশক্তি বা সুপার পাওয়ার হিসেবে তাদের রূপান্তরের রাজনৈতিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছেন। মিঃ ভুট্টোর ধারণা, এশিয়ায় কমিউনিস্ট চীন ধীরে ধীরে সুপার পাওয়ারে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং একমাত্র চীনের সঙ্গে কার্যকর সখ্য দ্বারাই পাকিস্তান নিজেকে ভারতের সমপর্যায়ে তুলে এক দিকে এশিয়া রাজনীতিতে ভারতীয় প্রভাব খর্ব ও অন্য দিকে নিজের প্রভাব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে পারে। এশিয়ার রাজনৈতিক পাওয়ার ব্যালানস বা শক্তি সাম্যরক্ষার এটাই প্রকৃষ্ট দাওয়াই বলে মিঃ ভুট্টো মনে করেন এবং রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে নিজেদের চাইতে পাঁচ গুণ বড় ভারতের পাশে পাকিস্তানকে প্রতিযােগী হিসেবে দাঁড় করানাের জন্য চীনের সখ্য অপরিহার্য বলে ধরে নিয়েছেন। মিঃ ভুট্টো গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, পাকিস্তানের পাওয়ার বেসিন বা শক্তির কেন্দ্র হচ্ছে সিন্ধু এবং পানজাব। মিঃ ভুট্টো নিজে সিন্ধুর অধিবাসী, তাই পাকিস্তানের শক্তির কেন্দ্র হিসেবে সিন্ধুর নাম উল্লেখ করেছেন রাজনৈতিক গরজে। আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন, পাকিস্তানের শক্তির কেন্দ্র একটাই এই অংশেরই রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিবিম্ব ভুট্টোর মিথ অব ইনডিপেনডেন্স’ গ্রন্থে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব তার সামরিক জুনটার এই শক্তিশালী অংশের প্রভাবেই তখন প্রভাবিত হন এবং এমন এক নীতি অনুসরণে রত হন, যার পরিণতি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকিস্তানের বিপর্যয়ে ক্ষমতাসীন সামরিক জুনটায় উগ্র ভারতবিরােধী গ্রুপটির প্রভাব হ্রাস হয়, তাদের কেউ কেউ ক্ষমতার উচ্চ পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন এবং সেই সঙ্গে মিঃ ভুট্টোও মন্ত্রিপদ থেকে বিতাড়িত হন। এখানে একটি কথা উল্লেখ্য, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শাসকচক্রে স্থায়ী ভারত-বিরােধিতার নীতির সূত্রপাত লিয়াকত আলির আমলেই। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমেরিকা ভ্রমণে গিয়ে মারকিন প্রতিনিধি সভায় লিয়াকত আলি প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন, তা হল অর্থ ভিক্ষার জন্য আসিনি, অস্ত্র সংগ্রহের জন্য এসেছি।’ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে লিয়াকত আলি পাকিস্তানের জনগণকে তাঁর করাচির বাসভবনের অলিন্দে দাঁড়িয়ে যে জাতীয় প্রতীকটি উপহার দিয়েছিলেন; তা ‘উদ্যত বজ্রমুষ্টি,’সম্প্রতির প্রসারিত হাত নয়। এই স্থায়ী ভারত-বিরােধিতার নীতির ভিত্তি তখন ছিল আমেরিকার কাছ থেকে সামরিক সাহায্য রাজনৈতিক সমর্থন সংগ্রহ। আইয়ুবের আমলে লক্ষ্য রইল ঠিক, ভিত্তি হল পরিবর্তিত। আমেরিকা তাে রইলই সামরিক চুক্তির পারটনার হিসাবে। কিন্তু একই লক্ষ্যের (ভারত-বিরােধিতা) পথিক হিসাবে মৈত্রীর দৃঢ় গাঢ়ছড়া বাঁধলেন পিনডি এবং পিকিং-এ।
***
পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ইতিহাস যেমন বিচিত্র, তেমনি বিস্ময়কর। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে একটা দেশে ক্ষমতার রাজনীতি কতটা বিষাক্ত এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ পাকিস্তানের গত চব্বিশ বছরের রাজনীতি। ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে বাইশ দিনের যুদ্ধের পর পাকিস্তানে দ্রুত বেগে ঘটনাপ্রবাহ গড়াতে শুরু করে। মিঃ ভুট্টো হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন। আসলে এই বিদ্রোহ সামরিক জুনটার সেই বিশেষ অংশটির প্রভাব পুনরুদ্ধারের বিদ্রোহ। কিন্তু হিতে বিপরীত হল। ভুট্টোর বিদ্রোহের সুযােগে পূর্ব বাংলার গণতন্ত্র ও বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে এত-দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ গণবিপ্লবের রূপ ধারণ করলাে। ফলে পিনডিতে শুধু সামরিক জুনটার একটা গ্রুপের নয়, উভয় গ্রুপের ক্ষমতার টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে উঠল। পানজাবের ভূস্বামী গ্রুপ, যেমন দৌলতানা, সিন্ধুর হারুন ও খুরাে প্রভৃতি পরিবার আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠলেন। তারা চাইলেন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানের পুনঃপ্রবর্তন। তাতে গণতন্ত্রের দাবি মেনে নেওয়া হল বলে পুর্ব বাংলাকে ধােকা দেওয়া চলে, আবার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পশ্চিম পাকিস্তানের হাতেও রাখা চলে। স্বিধাবিভক্ত সামরিক জুনটা নিজেদের বিপদ বুঝে তাড়াতাড়ি অভ্যন্তরীণ বিবাদ মেটালেন। আইয়ুবকে সরিয়ে ইয়াহিয়াকে প্রেসিডেন্ট পদে বসিয়ে ১৯৬৯ সালের ২৫ মারচ তারিখে আবার পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করা হল। পাকিস্তানে যে গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল ১৯৬৯ সালেই, তাকে ঠেকানাে হল ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। এটা সামরিক জুনটার নিঃশ্বাস ছাড়ার এবং নতুন কৌশল উদ্ভাবনের জন্যে কালহরণের চেষ্টা মাত্র। ১৯৭০ সালের ৬ ডিসেম্বর তারিখ-অর্থাৎ সারা পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিন পর্যন্ত এই নির্ধারনের যে যথানির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠিত হবেই, এ সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত ছিলেন না। কারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও সামরিক জুনটায় ছিল মতবিরােধ। তবু এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল। সামরিক জুনটার একটা অংশ তখনও আশা করছিলেন নির্বাচনে পূর্ব বাংলার বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিদার আওয়ামী লীগ এমন সংখ্যক আসন পাবেন না, যাতে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগিরষ্ঠতা অর্জন করবেন। সুতরাং আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েও দর কষাকষি দ্বারা সামরিক জুনটার হাতেই প্রকৃত শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা রূপে দেওয়া যাবে। কিন্তু নির্বাচনের ফল দেখে তাদের ভুল ভাঙলাে। জুনটার নির্বাচন-বিরােধী অংশ আবার শক্তিশালী হলেন। পূর্ব বাংলার উপর চরম আঘাত হানার আগে অনুকূল রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির ভার পড়লাে মিঃ ভুট্টোর উপর।
সম্প্রতি সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, শেখ মুজিবর মিঃ ভুট্টোকে নাকি তার ছ’ দফা মেনে নেওয়ার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ভুট্টো এই প্রস্তাবে আগ্রহী হয়ে পরে ইয়াহিয়ার সঙ্গে হাত মেলান। প্রকৃতপক্ষে মিঃ ভুট্টো ইয়াহিয়ার মধ্যে হাত মেলাননি। পাকিস্তানের সামরিক জুনটায় জেনারেল ইয়াহিয়া নিমিত্ত মাত্র। তিনি জুনটায় দু-গ্রুপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করছেন। যখন যে গ্রুপ শান্তি কামী হয়ে ওঠে, তিনি তাদের হয়েই কাজ করেন। এ ছাড়া তাঁর নিজের চাকরি রক্ষার অন্য উপায় নেই। সুতরাং গত মারচ মাসের গােড়ায় সামরিক জুনটায় উগ্র জঙ্গী গ্রুপটি যখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশে কনফ্রনটেসনের নীতি গ্রহণ করে, তাদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসাবে মিঃ ভুট্টোও শেখ মুজিবের সঙ্গে আপসের রাজনীতি ত্যাগ করেছিলেন। এখানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে তাঁর হাত মেলাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
পচিশে মারচ থেকে পচিশে মে-এ দু’মাসেও যখন পূর্ব বাংলার জঙ্গী দমননীতি সফল হল না, বরং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাবনতির পথে এগুলাে, তখন সামরিক জুনটার আবার উগ্র জঙ্গী গ্রুপ দুর্বল হয়ে পড়লেন। মিঃ ভুট্টোও এই সময় বেশ কিছু দিন চুপচাপ ছিলেন। এ সময় তাঁর রাজনীতি ছিল চাপ প্রয়ােগের রাজনীতি। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং জুনটার অপর অংশের উপর চাপ অব্যাহত রাখার রাজনীতি। পিকিংও তখন থেকেই পিনডিকে সমর্থনদানের ব্যাপারে অর্থপূর্ণ নীরব থাকার ভূমিকা গ্রহণ করে। পাকিস্তানের সামরিক জুনটার কোন গ্রুপ শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ শক্তিদ্বন্দ্বে জয়ী হবেন, সে সম্পর্কে পিকিং-এর নেতারাও সম্ভবত এখন আর নিশ্চিত নন। তাই পিনডিকে প্রকাশ্য সমর্থনদানের ব্যাপারে তাদের আগের উৎসাহ আর নেই। পাকিস্তানে সামরিক জুনটার মিঃ ভুট্টো যে গ্রুপটির অসামরিক মুখপাত্র-সেই জঙ্গী গ্রুপটির চুড়ান্ত বিপর্যয় ‘অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে উৎসাহ দানের নীতি পরিত্যক্ত হতে পারে, এমনকি ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান অস্ত্র ধারণে সাহসী হলে চীন নির্লিপ্ত থাকার ভূমিকাও গ্রহণ করতে পারে। ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুদিনের জমাট বরফ যে অতি সম্প্রতি গলতে শুরু করেছে, এটা নয়াচীনের এই পরিবর্তননােম্মুখ ভূমিকারই সম্ভবত পূর্বাভাস।।
পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্তাদের নিয়ে একেবারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ দূতরূপে মিঃ ভুট্টোর পিকিং সফর তাই তাৎপর্যপূর্ণ। ভুট্টো আসলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত নন, তিনি বিশেষভাবে সামরিক জুনটার উগ্র জঙ্গী গ্রুপটির এবং সাধারণভাবে পাকিস্তানের সমগ্র জঙ্গীচক্রের দূত। মিঃ ভুট্টো কেবল অস্ত্রভিক্ষা করতে পিকিং-এ যাননি। তাঁর এই পিকিং সফরের সাফল্যের নিরিখেই পিনডি স্থির করবে, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রশ্নে সে অস্ত্রধারণ করবে কি না। যদি পিকিং মদত দিতে রাজি হয়, তাহলে ১৯৬৫ সালের মত পিনডি রণােন্মাদ চেহারা নিয়ে সামরিক অ্যাডভেনচারে মরিয়া হয়ে মেতে উঠতে পারে। যদি পিকিং মদত না দেয় মিঃ ভুট্টো খালি হাতে ফিরে আসেন, তাহলে পাকিস্তানের সামরিক জুনটার আরেকটি বড়রকমের রদবদল এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে নীতি বদল অত্যাসন্ন।
সূত্র: আনন্দবাজার : ৮.১১.১৯৭১