নববর্ষে এবার উৎসব চাই না
শোকের দিনে সমারােহ শােভা পায় না। আজ আমাদের নিজেদের সংসারে না হােক, আমাদের ঘরের পাশে মানব সংসারে বুক ফাটা কান্নার রােল উঠেছে। শিশু তার মাকে হারিয়ে কাঁদছে, মা কাঁদছে তার সন্তানকে হারিয়ে। রক্তের স্রোতে ধুয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মাটি, বুক ফাটা হাহাকারে ভরে উঠেছে বাতাস। অন্যদিকে জায়া-জননী-ভাই-বােনের অশ্রু মােছাবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে, দখলদার ফৌজকে চিরতরে বিতাড়িত করবার জন্য মুজিবের মুক্তিসেনারা সেখানে অটল পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছেন। এই অবস্থায় কি আমাদের ঘরে উৎসব শােভা পায়? অতীতের দিনে আমরা নিজেদের সংকটের দিনে একাধিকবার বন্ধ রেখেছি দেওয়ালির আলাের উৎসব: যে টাকা আলােকসজ্জা আর বাজির জন্য অপচিত হতে পারত তাই দিয়ে দূর্গতদের মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা করছি। এবারে দূর্গত আমাদের প্রতিবেশী জনসমাজ, সঙ্কট এবার আমাদের ঘরের ওপাশে। সেখানে যতটা সম্ভব এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাহায্য পাঠানাে দরকার। এই অবস্থায় নিশ্চয় পহেলা বৈশাখের উৎসব অর্থহীন হয়ে উঠবে। প্রহসনের মত ঠেকবে নববর্ষের সমস্ত সমারােহ। উৎসব আর সমারােহ অতএব এবারকার মত বন্ধ যাক। যে টাকা তার পিছনে ব্যয়িত হতে পারত, আসুন সেই টাকায় কিছু ওষুধ, কিছু পথ্য, কিছু বস্ত্র, কিছু খাদ্য যাতে সীমান্তে পাঠানাে যায় তার ব্যবস্থা করি। আসুন প্রতিজ্ঞা করি উৎসব আর আড়ম্বর বন্ধ রেখে, যতটা সম্ভব অর্থ আমরা বাংলাদেশ সহায়ক কমিটির হাতে এবারে তুলে দেব। রক্তের অক্ষরে যাঁরা তাঁদের হাল খাতার সূচনা করতে চলেছেন, চলুন আমরা তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
-নিরূপম চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা ৯
ইংরেজ তাড়াবার পর বাঙালির এত ঐক্য, এত জাগরণ দেখিনি। তাই আমাদের মত ক্ষুদ্র নারীর এপার বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে এই সংগ্রামী ভাইদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, আর জানাচ্ছি আনন্দবাজার পত্রিকাকেও। কারণ তারা বাংলার মানুষের সংগ্রামের কথা, আর করাচীর নরপশুদের বীভৎস-নগ্ন অত্যাচারের কথা বিশ্ববাসীর দরবারে সচিত্র তুলে ধরেছে অসীম সাহস ও নিষ্ঠা সহকারে।
-জ্যোতিপ্রভা দেবী ও স্বপ্ন মূখার্জী, বহরমপুর।
‘কাফের ইয়াহিয়া’
ইয়াহিয়া কি করে নিজেকে ইসলামিক রাষ্ট্রের কর্ণধার বলে ঘােষণা করে। ইসলাম কোনদিন বলেনি, নিরীহ লােকগুলিকে পিটিয়ে মারতে। সেই ইসলামের নামে নাম ভাঙ্গিয়ে জঘন্য পাপী ইয়াহিয়া সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন। ইসলাম ধর্মের তরফ থেকে সমস্ত অনৈইসলামিক দেশগুলির এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অবিলম্বেই প্রয়ােজন ইয়াহিয়া খানকে বরখাস্ত করার অসহযােগ আন্দোলন গড়ে তােলা এবং ইসলামিক অনুশাসন অনুযায়ী কওম ধ্বংসকারী পাপীকে সর্বসমক্ষে গুলি করে মারা উচিত। আজ ভারতের জনগণকে সজাগ হতে হবে আজ আর ধর্মের জিগির নয়, আজ আমরা মানুষ এবং মানুষ হিসেবে আমাদের পরিচয় এবং মানবতা খর্বকারীর যথাযথ শাস্তি দেওয়া উচিত, সবাই গর্জে উঠুন, সম্পূর্ণ সহায়তা করুন মুক্তিযােদ্ধাদের।
-সফিউর রহমান, মােদিনীপুর
[ আনন্দবাজার তারিখ পাওয়া যায় নি]
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- খন্ড ১৯